ইয়াবাসহ মাদক পাচারের নিরাপদ মাধ্যমে পরিণত হয়েছে কক্সবাজার রেলপথ। সাম্প্রতিক সময়ে সড়কপথের পরিবর্তে ট্রেন ব্যবহার করে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মাদকের চালান। এদিকে কক্সবাজার রেলস্টেশনে লাগেজ স্ক্যানার মেশিন বন্ধ থাকার কারণে পোয়াবারো অবস্থা হয়েছে মাদক কারবারিদের জন্য। একই সঙ্গে নারীদের মধ্যে কেউ কেউ বহন কাজে অংশ নেওয়ায় পাচারে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত পর্যটক এক্সপ্রেস ও কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামে দুটি বিরতিহীন (শুধু চট্টগ্রাম স্টেশনে থামে) ট্রেন চলাচল করে। চট্টগ্রাম থেকে সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেস নামে কক্সবাজার রুটে দুটি ট্রেনও পরিচালনা করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। মূলত সড়কপথে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম আসতে ও ঢাকায় পৌঁছাতে বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালানো হয়। সড়কপথে কঠোর নজরদারি এড়াতে মাদক পাচারকারী চক্রের একটি অংশ ইয়াবাসহ অনান্য মাদক পাচারে ট্রেন যোগাযোগব্যবস্থাকে বেছে নিয়েছে। এ অবস্থায় ট্রেনে মাদক পাচার রোধে কক্সবাজার স্টেশনে রেলওয়ে পুলিশের থানা স্থাপন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ড্রাগ ডিটেকশন স্ক্যানার বসানোর দাবি থাকলেও এসব বিষয়ে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সর্বশেষ গত ১২ ডিসেম্বর রাতে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে র্যাব অভিযান চালিয়ে ৩ হাজার ৮৯৫ পিস ইয়াবাসহ দুই নারীকে গ্রেপ্তার করে। ট্রেনযোগে কক্সবাজার থেকে মাদক নিয়ে চট্টগ্রামে আসার খবর পেয়ে র্যাব অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা ইয়াবার আনুমানিক মূল্য ১২ লাখ টাকা। এর আগে ২৯ মার্চ রাতে ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি থেকে ৩৩ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবা বড়ি জব্দ করে ঢাকা রেলওয়ে পুলিশ। তবে এ সময় কাউকে আটক করা যায়নি। পুলিশ বলছে, মাদক কারবারিরা ট্রেনে ইয়াবা বহনের সময় পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য ইয়াবা এক জায়গায় রাখে, নিজেরা অন্য জায়গায় বসার কৌশল নিয়ে চলছে। ট্রেনে শুধু ইয়াবা নয়, ক্রিস্টাল মেথ ও আইসের পাশাপাশি হেরোইন এবং কোকেন পাচার করছে মাদক চক্রের সিন্ডিকেট। স্ক্যানার মেশিন বন্ধ থাকা সম্পর্কে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান ভুইয়া বলেন, কক্সবাজার রেলস্টেশনে লাগেজ স্ক্যানার মেশিন চালু ছিল। মাঝখানে টেকনিক্যাল কারণে বন্ধ থাকলেও এখন আবারও চালু হয়েছে। এরপরও ফাঁকফোকর দিয়ে মাদক পাচার হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বা নিরাপত্তা বাহিনী যদি ভূমিকা রাখে তাহলে তা অনেকাংশে কমে আসবে। রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম ও অপারেশন) তোফায়েল আহমেদ মিয়া বলেন, রেলওয়ে পুলিশ মাদক পাচাররোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। পুরো সমস্যা সমাধান কীভাবে করা যায়, এ রুট কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে এবং কারা জড়িত তা তদন্ত চলছে। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়টির ভালো একটি ফল পাওয়া যাবে।