Image description

রংপুর-২ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকারের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার রাত সাড়ে ৯টায় উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে একযোগে তৃণমূল বিএনপির সদস্যরা এই মশাল মিছিল বের করে।

তৃণমূল বিএনপির সদস্যরা জানান—মনোনয়ন বঞ্চিত এবং মনোনীত প্রার্থীদের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও অশালীন এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত কথাবার্তায় তৃণমূল বিএনপিতে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীরা তাদের পছন্দের নেতাদের পক্ষ নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন মশাল মিছিলসহ দলীয় মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন করতে হাইকমান্ডের কাছে আলটিমেটাম দিচ্ছেন। এ ঘটনায় নেতাকর্মীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। যেকোন সময় সংঘাতের আশঙ্কা করছেন সাধারণ ভোটাররা।

বিশেষ করে রংপুর-২ আসন তথা বদরগঞ্জ তারাগঞ্জ এবং রংপুর- ৩ তথা সদর এবং সিটি কর্পোরেশনের আসনে দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন মশাল মিছিল, অশালীন এবং কুরুচিপূর্ণ ও শিষ্টাচার বহির্ভূত কথাবার্তায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

রংপুর দুই আসনের সাধারণ ভোটার মহুব আলী, আমিনুল ইসলাম, মতিয়ার রহমান জানান, ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনা বিদায় হওয়ার পর এই প্রথম একটি শান্তিপূর্ণ অবাধ নিরপেক্ষ ভোটের মাঠ আশা করছে সাধারণ ভোটাররা। ভোটের দিন এলাকার মানুষ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভয়ে ভোট দেবে এমনটাই আশা সবার। রংপুর-২ তথা বদরগঞ্জ তারাগঞ্জ আসনে বিএনপি দলীয় মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকারকে প্রার্থী ঘোষণার পর এলাকায় কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে। এক নেতা আরেক নেতাকে নিয়ে নানা ধরনের অশালীন এবং কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে ভোটের মাঠ নষ্ট করছেন। পরস্পর তাদের ব্যক্তিগত চরিত্র নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলায় সাধারণ ভোটাররা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর বিরূপ মন্তব্য পোষণ করছেন। এক্ষেত্রে অবশ্য অন্য দলের তথা জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে সাধারণ ভোটারদের আগ্রহ আরো বাড়ছে বলে তারা জানান।

ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান ও সাবেক উপজেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক মানিক জানান, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগের দোসর জাতীয় পার্টির এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান থাকায় তৃণমূল বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীদের ওপর তার আস্থা ও ভালোবাসা নেই। তিনি আওয়ামী লীগের সময় এমপি ডিউক চৌধুরী ও পৌর মেয়র টুটুল চৌধুরীর সঙ্গে আঁতাত করে উল্টো বিএনপি নেতা কর্মীদের নামে নানা ধরনের মামলা করতে সহায়তা করেছেন। ওই সময় নানা সুবিধা নিয়ে তিনি ছিলেন ভোগবিলাসে ব্যস্ত। তার নামে ও তার পরিবারে কোনো সদস্যের নামে একটি মামলাও হয়নি। এদিকে তার কারণে তৃণমূল-বিএনপির নেতাকর্মীরা এখনো বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত হয়ে কোর্টে হাজিরা দিচ্ছেন। এ কারণে তৃণমূলের কোনো নেতাকর্মী তার পাশে নেই। তিনি নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি মাঠ ঘোলা করে বেড়াচ্ছেন। যদি শেষ পর্যন্ত হাইকমান্ড মোহাম্মদ আলী সরকারকে দলের প্রার্থী হিসেবে রাখেন সেক্ষেত্রে সাধারণ ভোটার এবং তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কখনো কাজ করবে না। কারণ তিনি নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার পাশাপাশি জাতীয় পার্টিকে আবারো সক্রিয় করে বিএনপির ক্ষতি করবেন।

তিনি বলেন, হাইকমান্ডের উচিত দ্রুত তার প্রার্থিতা বাতিল করে দলীয় অন্য কোনো প্রার্থীকে নমিনেশন দিয়ে নেতাকর্মীদের একত্রিত থাকার সুযোগ করে দেওয়া।

উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আজিজুল হক জানান, মোহাম্মদ আলী সরকার নোমিনেশন পাওয়ার পর থেকে তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীদের দূরে ঠেলে দিয়ে উল্টো উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের নামে নানান ধরনের শিষ্টাচার বহির্ভূত কথাবার্তা বলার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতিও দেখাচ্ছেন। তার শিষ্টাচার বহির্ভূত কথাবার্তায় দলীয় নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে মশাল মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন প্রতিবাদ সমাবেশ করে হাইকমান্ডের কাছে তার মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। কারণ ইতোপূর্বে তিনি মিডিয়ার সামনে প্রকাশ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের তওবা করে তার কাছে ফিরে যাওয়ার ঔদ্ধত্যপূর্ণ শিষ্টাচার বহির্ভূত অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। তার এমন বক্তব্যে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিএনপির সুনাম খুণ্ন হয়েছে। এ কারণে দলীয় নেতাকর্মীরা তার মনোনয়ন দ্রুত বাতিল চেয়ে যে কোনো যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিলে তার পক্ষে তৃণমূল নেতাকর্মীরা মাঠে কাজ করবে।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ আলী সরকার সাংবাদিকদের জানান, দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আন্দোলনকারীদেরকে বসার জন্য লিখিত চিঠি পাঠিয়েছিলাম তারা আমার কাছে আসেনি।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মামুন ও সুমন সরকার বলেন, বিএনপি আওয়ামী লীগের সময় মাঠে কোনো মিছিল মিটিং তো দূরের কথা বাসা থেকে বের হতে সাহস পেত না ।বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত হয়ে ছন্নছাড়া হয়ে পড়েছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশ নতুন করে স্বাধীন হওয়ায় তারা আজকে মাঠে প্রকাশ্যে রাজনীতি করছেন। এখন যে নির্বাচনি মাঠ সেখানে নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি না করে ভোটের মাঠ শান্তিপূর্ণ রেখে ভোটারদের মনে ভয় সৃষ্টি না করে অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবাইকে সহযোগিতা করা উচিত।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহবায়ক সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি ভোটের মাঠে ব্যস্ত থাকায় দলীয় প্রার্থী তৃণমূলের নেতা কর্মীদের পরস্পর কাদা ছোড়াছুড়ি বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।