পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় কীভাবে কার্যকর হবে তা জানিয়েছে প্রসিকিউশন। গতকাল প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামীম সাংবাদিকদের বলেন, রায় ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল না করলে আপিলের সুযোগ থাকবে না। গ্রেপ্তার হলেই রায় কার্যকর করা যাবে। একই সঙ্গে তাকে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলে পাঠানো হবে কনভিকশন নোটিস। রায় বাস্তবায়নে অনুলিপি পাঠানো হবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও। চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-১। একই মামলার রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ট্রাইব্যুনাল আইনের ২১ নম্বর ধারায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিলের অধিকার দেওয়া হয়েছে। এই ধারার ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, দণ্ড ও সাজা প্রদান অথবা খালাস অথবা কোনো সাজা দেওয়ার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হবে। এই সময়সীমা (রায় দেওয়ার ৩০ দিন পর) অতিক্রান্ত হওয়ার পর কোনো আপিল গ্রহণযোগ্য হবে না। আর ২১ নম্বর ধারার ৪ উপধারায় বলা হয়েছে, আপিল করার তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে।
ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর তামীম বলেন, ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে এ প্রথম এমন কম্পেনসেশনের রায় দেওয়া হয়েছে। এখন এ রায়ের কপি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গেলে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন যে এর কোন অংশ কীভাবে কার্যকর করবেন।
পলাতক দুই আসামির সাজা কার্যকরের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে আগেই একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ রেড নোটিস জারির আবেদন করা আছে। এখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বদলে কনভিকশন ওয়ারেন্ট মূলে ইন্টারপোলে আরেকটি নোটিস জারির জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হবে। তাদের মাধ্যমে এটা ইন্টারপোলে যাবে। এ নিয়ে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে প্রসিকিউশন।
শেখ হাসিনা ৩০ দিনের মধ্যে না এলে কি হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর তামীম বলেন, দেশে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় দুটি পদ্ধতি আছে। একটি হলো, যেসব আইনে আপিলের সময়সীমা উল্লেখ নেই, সে ক্ষেত্রে আপিলের সময়সীমা নির্ধারণ হয় তামাদি আইন অনুযায়ী। তামাদি আইন অনুযায়ী, যেসব আপিলের সময়সীমা নির্ধারণ হয়, সেখানে আপিলের সময় পেরিয়ে গেলেও তামাদি আইনের ৫ ধারা অনুসারে ডিলে কন্ডোনেশনের (বিলম্ব মার্জনার আবেদন) সুযোগ আছে; অর্থাৎ দণ্ডবিধিতে যদি কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়, তিনি নির্ধারিত সময়ে আপিল না করলেও পরে এসে আপিলের জন্য বিলম্ব মওকুফের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু বিশেষ আইনগুলোতে যেখানে আপিলের সময় আইনের মধ্যে বলা আছে, সে ক্ষেত্রে এই সময়সীমা পেরিয়ে গেলে বিলম্ব মার্জনার কোনো সুযোগ নেই; অর্থাৎ এই ৩০ দিন পার হয়ে গেলে ক্ষমা (বিলম্ব মার্জনা) করার আবেদনেরই আর কোনো সুযোগ নেই। সরকার এটি তখন কার্যকর করবে।