ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়নপ্রাপ্ত ৯০ বছর বয়সী মুশফিকুর রহমানকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাকে নিয়ে চলছে নানা সমালোচনাও। নেতাকর্মীরা জানান, যিনি অপরের সহযোগিতা ছাড়া চলতে পারেন না, সেই প্রবাসী নেতার মনোনয়ন স্থানীয় রাজনীতিতে বিস্ময়, হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয়রা জানায়, ৯০ বছর বয়সী মুশফিকুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে পরিবারসহ কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট শাহ আলমের কাছে পরাজয়ের পর তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে যান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি তাকে মনোনীত করলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান। সে সময় তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে তার আঁতাতের অভিযোগ ওঠে, যা আজও স্থানীয় রাজনীতিতে আলোচনায় রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মুশফিকুর রহমান সমকালের কাছে অস্বীকার বা ব্যাখ্যা করেননি। তিনি কোনো কথা বলতেই রাজি হননি।
প্রায় ১৭ বছর পর কানাডা থেকে ৫ আগষ্টের পর দেশে ফেরেন মুশফিকুর রহমান। মূলত ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং বিভিন্ন কৌশলে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান। তার এই প্রত্যাবর্তন এবং প্রাথমিক মনোনয়নকে অনেকেই ‘সিন্ডিকেটের খেলা’ ও ‘অস্বাভাবিক প্রভাবের ফল’ হিসেবে দেখছেন।
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, এলাকার সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রধানত তার বয়স ও শারীরিক অক্ষমতা ঘিরে। ৯০ বছর বয়সী এই নেতা নিজে হাঁটতেও অন্যের সহায়তা নেন। কিছু সময় অসংলগ্নভাবে কথা বলায় তার নেতৃত্বদানের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ফলে সাড়ে ছয় লাখ মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে তাকে মনোনীত করা- এলাকাজুড়ে হাস্যরস ও তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
কসবা উপজেলা বিএনপির নেতা ইসমাইল হোসেন বলেন, এই আসনে দলের পরীক্ষিত নেতৃত্বকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিগত দিনে দলের কঠিন সময়ে, আন্দোলন-সংগ্রামে কসবা-আখাউড়ার রাজপথে যিনি নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলেন- সেই কবীর আহমেদ ভূইয়াকে বিবেচনায় না রেখে দীর্ঘদিন এলাকাবিচ্ছিন্ন একজন প্রবীণ প্রবাসীকে মনোনয়ন দেওয়ায় অনেকেই ‘অন্যায়’ এবং ‘অপমান’ হিসেবে দেখছেন।
সম্প্রতি হাজার হাজার নেতা-কর্মী ‘কাফনের কাপড়’ পরে কসবা এবং আখাউড়ায় গণমিছিল বের করেন। বিগত সময়ে মুশফিকুর রহমানকে ঘিরে নানা বিতর্কও রয়েছে। তার ব্যক্তিগত সহকারী আরিফ বর্তমানে ২৫০ কোটি টাকার দুর্নীতি মামলায় কারাগারে আছেন।
এছাড়া এমপি থাকাকালে ১০ শতাংশ কমিশন নেওয়া, ‘দেশ টিভি’ অবৈধভাবে বিক্রি, দলীয় প্রয়োজনে কখনো না এসে ব্যক্তিগত স্বার্থে দলকে ব্যবহার করা-এসব অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাশাপাশি তিনি কসবা-আখাউড়ার কোথাও ভোটার নন বলেও জানা গেছে।