চলতি নভেম্বর মাসের মধ্যেই অঘোষিত ৬৩ আসনে মনোনয়নের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিলের আগেই ফাঁকা থাকা এসব আসনে দল ও জোটের প্রার্থিতা ঘোষণা করা হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। এ লক্ষ্যে শিগগির জোটের প্রধান অথবা জোট শরিকদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা সাপেক্ষে ফাঁকা আসনগুলোতে জোট ও দলের প্রার্থিতা একই সঙ্গে অথবা আগে-পরে ঘোষণা করা হতে পারে।
এদিকে ঘোষিত দলীয় প্রার্থিতার মধ্যে সীমিত কিছু আসনে যে সমস্যা হচ্ছে, তা নিরসনেও উদ্যোগী হয়েছে বিএনপি। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় পর্যায়ে দলের দায়িত্বশীল নেতারা এ ব্যাপারে কাজ করছেন। এরপরও যেখানে সমাধান হচ্ছে না, কেন্দ্রের উদ্যোগে সেই সংশ্লিষ্ট আসনের দল মনোনীত ও মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে ‘সমঝোতা’ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গত শুক্রবার কুমিল্লা-৯ আসন নিয়ে দলীয় এমন উদ্যোগ দেখা গেছে। ঢাকায় ডেকে এনে ওই আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মো. আবুল কালাম ও মনোনয়নপ্রত্যাশী সামিরা আজিম দোলার মধ্যে চলমান বিরোধ মিটিয়ে দিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। বিএনপির প্রত্যাশা, খুব কম সময়ের মধ্যে বিরোধপূর্ণ বাকি আসনগুলোতেও সৃষ্ট সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। অবশ্য দলীয় সূত্রে এটাও জানা গেছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনে হয়তো কিছু আসনে পরিবর্তন আনা হতে পারে, তবে সেটি খুব বেশি নয়।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে বিএনপি। বাকি ৬৩ আসন ফাঁকা রেখেছিল দলটি। অবশ্য পরদিন মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থী কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত করে বিএনপি। জানা গেছে, ফাঁকা রাখা এ আসনগুলো নিয়ে বিএনপি কিছুদিন ধরে কাজ করছে। শরিক দলগুলোর সঙ্গেও তারা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। এদিকে, আসন বণ্টন কিংবা আসন সমঝোতা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিএনপির চাওয়া অনুযায়ী যুগপতের অধিকাংশ মিত্র এরই মধ্যে তাদের প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শরিকদের এ প্রার্থী তালিকা থেকে বাস্তবতার নিরিখে দলটি একটি শর্টলিস্ট করেছে। এরপর স্থানীয় পর্যায়ে তাদের ব্যাপারে নানাভাবে খোঁজখবর নিয়েছে বিএনপি। বিশেষ করে কারা বিজয়ী হতে পারেন, তাদের প্রার্থিতার বিষয়টি নানাভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী জোট শরিকদের নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যথেষ্ট ভাবাচ্ছে বিএনপিকে। তাই মিত্রদের আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থিতার পাশাপাশি এ বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে নিয়েছে দলটি।
শরিকদের আসন বণ্টন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত বুধবার জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এবং শুক্রবার ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও যুগপতের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এ দুটি জোটের কোনো দলই নিবন্ধিত নয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ২৩৭ আসনে বিএনপির প্রার্থিতা ঘোষণা করা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দলের একক প্রার্থীরা প্রচারে থাকায় নির্বাচনের মাঠে পূর্ণ উদ্যোমে কাজ করতে দ্রুত মনোনয়নের বিষয়টির সুরাহার অনুরোধ জানান মিত্ররা। এ সময় সংশোধিত আরপিওর বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। আসন বণ্টনের ক্ষেত্রে এ আরপিওর বিষয়টি বিএনপি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে বলে দলটির পক্ষ থেকে মিত্রদের জানানো হয়। তখন মিত্ররা নিজেদের নিবন্ধন না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তাদের মনোনয়নের বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করার অনুরোধ জানান। বিএনপির পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, জোট শরিকদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগির মিত্রদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করবেন।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ কালবেলাকে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে মিত্রদের যেসব আসন বিএনপি ছাড়বে, সেগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়েই আছে। সেটা তারাও ঘোষণা দেবে, বিএনপিও ঘোষণা করবে। আর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ফের সংশোধিত না হলে নিবন্ধিত শরিকদের তাদের নিজ দলের প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে ঘোষিত আসনগুলোর মধ্যে যেখানে সমস্যা হচ্ছে, তা নিরসনে দলের উদ্যোগে বিএনপি মনোনীত ও মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে সমঝোতা করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কিছু আসনে আমরা এখনো দলীয় মনোনয়ন প্রক্রিয়া সমাপ্ত করতে পারিনি। সেটা দ্রুত সম্পন্ন করে সে আসনগুলোতেও বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে। আশা করি, এটা এ মাসের ভেতরেই শেষ করতে পারব।
ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্ররা ছাড়াও জামায়াতের বাইরের ইসলামী এবং বামপন্থি কয়েকটি দলকে নিয়ে বৃহত্তর নির্বাচনী জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে বিএনপি। এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি দলের নিবন্ধন রয়েছে। সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, এসব দলকে নিজেদের দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। গত ৪ নভেম্বর আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর গেজেট জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
বিএনপি সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। সেবার শরিকদের জন্য ৫৯টি আসন ছাড়লেও এবার তাদের জন্য ২৫ থেকে ৩০টি আসন ছাড়ার কথা ভাবছে দলটি। বিএনপি ২০১৮ সালে জামায়াতে ইসলামীকে ২২টি আসন ছাড়লেও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আসন্ন নির্বাচনে জামায়াতকেই বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তাই আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থিতা বিবেচনায় নিয়ে মূলত বিজয়ী হওয়ার মতো শরিকদের ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আসন ছাড়বে বিএনপি। আর আসন ছাড়ের সংখ্যা আরও বাড়বে কি না, সেটি নির্ভর করবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী জোটের আকার কেমন হয় তার ওপর।