Image description

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ২৩৭টি আসনে ঘোষিত প্রার্থী তালিকা নিয়ে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশ, সড়ক এবং রেলপথ অবরোধ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কিছু আসনে চলছে টানা প্রতিবাদ। নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা-ক্ষোভ। এতে অনেকটা চাপে পড়েছে বিএনপি’র হাইকমান্ড। ইতিমধ্যে নেতিবাচক তথ্য পাওয়ায় মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থিতা স্থগিত করা হয়েছে। অনেক আসনে বিতর্কিত, হাইব্রিড এবং দুঃসময়ে দলের সঙ্গে না থেকে সুসময়ে যারা এসেছে তাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। অভিজ্ঞ নেতাদের পাশাপাশি তরুণদেরও মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এসব কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি আসনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এসব ঘটনা কেন্দ্র থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ওদিকে জামায়াতের শক্তিশালী আসনে বিএনপি’র দুর্বল প্রার্থী দেয়া হয়েছে, এমন কথাও বলছেন স্থানীয়রা।

নেতাকর্মীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, যারা দলের দুঃসময়ে রাজপথে ছিলেন না, তারা সুসময়ে এসে মনোনয়ন পাচ্ছেন। যারা দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর বিদেশে বসে আরামদায়ক জীবনযাপন করেছেন, ৫ই আগস্টের পর দেশে এসেছে তারাও মনোনয়ন পাচ্ছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে ক্ষোভ। কিন্তু অনেকেই সাংগঠনিক শাস্তির ভয়ে কিছু বলছেন না। যদিও দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই তালিকা চূড়ান্ত নয়। স্থায়ী কমিটি যদি মনে করে, তাহলে তারা কোনো আসনে পরিবর্তন আনতে পারেন।

সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও সড়ক ও রেলপথ অবরোধ, কোথাও গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।  এর মধ্যে মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে, চাঁদপুর-৪ আসনে, মাগুরা-২ আসনে, মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে, কুমিল্লা-১০ (নাঙ্গলকোট ও লালমাই) আসনে, পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর) আসনে, সাতক্ষীরা-৩ (কালীগঞ্জ-আশাশুনি) আসনে, মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে, নীলফামারী-১৫ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনে, রংপুর-৩ (সদর-মহানগর) আসনসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ, মিছিল, অবরোধ, সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে।  
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানবজমিনকে বলেন, এ বিষয়ে দলে এখনো কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। 

ওদিকে ঢাকা-১৫ আসনে বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী করা হয়েছে শফিকুল ইসলাম খান মিল্টনকে। এই আসনে নির্বাচন করবেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। এই আসনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসান যোগ্য মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি’র স্থানীয় নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে নির্বাচনী এলাকা মিল্টনের স্থায়ী ঠিকানা কখনো ছিল না এবং তিনি এই এলাকায় কখনো রাজনীতিও করেননি এমনটাও বলা হচ্ছে।
কুমিল্লা-১১ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী করা হয়েছে কামরুল হুদাকে। এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের হেভিওয়েট প্রার্থী। 

সাতক্ষীরা-২ আসনে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফকে সম্ভাব্য প্রার্থী করেছে বিএনপি। ৫ই আগস্টের পর তাকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে মুহাদ্দিস আব্দুল খালেককে। সেখানে বিএনপি’র অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী মনোনয়নপ্রত্যাশী আব্দুল আলীমকে বাদ দিয়ে রউফকে কেন বেছে নেয়া হয়েছে তৃণমূলে প্রশ্ন উঠেছে। 
খুলনা-৫ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন দেয়া হয়েছে সাবেক এমপি ও ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী আসগরকে। তিনি ২০০১ সালে উপনির্বাচনে খুলনা-২ আসন থেকে এমপি হয়েছিলেন। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী তিনি সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ৫ই আগস্ট পরবর্তী তিনি আবার সক্রিয় হন। এই আসন থেকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার নির্বাচন করবেন। 

অন্যদিকে নোয়াখালী-৫ আসনে বিএনপি প্রার্থী করেছে মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামকে। তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। ২০০৯ সালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের সমর্থনে নির্বাচনও করেছিলেন তিনি। এই আসনে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে সবচেয়ে আলোচিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র সহ-পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ। 
চট্টগ্রাম-১২ আসনে ৫ই আগস্টের পর এস আলম গ্রুপের গাড়িকাণ্ডে দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা মোহাম্মদ এনামুল হককে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। যদিও পরবর্তীতে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এই আসনে বিগত আওয়ামী আমলে গুমের শিকার সৈয়দ সাদাত আহমেদ ভোটার ও নেতাকর্মীদের কাছে জনপ্রিয় বলে তার অনুসারীরা দাবি করছেন। তাকে মনোনয়নবঞ্চিত করা হয়েছে বলে স্থানীয় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের অভিযোগ। চট্টগ্রাম-৪ আসনে আসলাম চৌধুরীর পরিবর্তে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এখানেও নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেছেন।

সুনামগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিমউদ্দিন মিলনকে। এই আসনে ২০১৮ সালে মনোনয়ন পেয়েছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী। নেত্রকোণা-৩ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন রফিকুল ইসলাম হিলালী । আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এই আসনে সাবেক মেয়র ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলাল যোগ্য প্রার্থী ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া চাঁদপুর-২ আসনের বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থী করা হয়েছে মো. জালাল উদ্দিনকে। তাকে নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে। 
বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মানবজমিনকে বলেন, যারা মনোনয়নপ্রত্যাশী তারা সবাই যোগ্য। কিন্তু মনোনয়ন তো একজন পাবে। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর যে বিক্ষোভ ও মিছিল হয়েছে- এটা খুব বেশি নয়, ৩ থেকে ৪ শতাংশ। তাৎক্ষণিকভাবে তারা এই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। সব জায়গায় না হলেও কিছু স্থানে এখন এটা অনেকটা নিরসন হয়েছে। এটা নিয়ে আমাদের সাংগঠনিক টিম কাজ করছে। এরপরেও তারা দলের কথা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।