Image description
নির্বাচনে অধিক সংখ্যক দলের অংশগ্রহণ দেখাতে এটা একটা কৌশল * শরিয়াহ আইন চালুর পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে

ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে সমমনা ইসলামি দলগুলোর যে জোট হওয়ার কথা ছিল তা শেষ পর্যন্ত হচ্ছে না। সমমনা দল ও ব্যক্তিদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে তারা নির্বাচন করবে। ক্ষমতায় গেলে শরিয়াহ আইন চালুর বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হওয়ায় আসনভিত্তিক সমঝোতা হবে, নির্বাচনি জোট হবে না। তাছাড়াও আওয়ামী লীগ বিহীন নির্বাচনে অধিক সংখ্যক দলের অংশগ্রহণ দেখাতেও এটা একটা কৌশল হিসাবে কাজ করবে।

বুধবার সিলেটে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা কোনো জোট করছি না। নির্বাচনি সমঝোতার ভিত্তিতে এগোব। প্রতিটি জায়গায় একটি বাক্স থাকবে এই নীতিতেই আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে অবশ্য তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বিবিসিকে বলেছেন, আমরা প্রচলিত কাঠামোগত জোট করছি না। সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বসে নিশ্চিত করব-যেন একই আসনে একাধিক প্রার্থী না থাকে। জামায়াত ও সমমনাদের মধ্যে আসনভিত্তিক সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে একযোগে কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াত ও আরও সাতটি সমমনা দল। তাই ধারণা করা হচ্ছিল, এসব দল নিয়ে নির্বাচনি জোট গঠনের ঘোষণা আসবে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ইসলামপন্থি দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার চেষ্টা করছিল জামায়াত। বরিশালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঙ্গে ডা. শফিকুর রহমানের সৌজন্য সাক্ষাতের পর সেই আলোচনা নতুন মাত্রা পায়। এ নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিসে ছাড়াও সমমনা ইসলামী দলগুলোর অফিসে অনেক বৈঠক হয়েছে, সাংবাদিক সম্মেলনও হয়েছে। দুদিন আগে খেলাফত মজলিসের অফিসে ৮ দলের বৈঠক এবং পরে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটসহ ৫ দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এরই মধ্যে বুধবার সিলেটে জামায়াত আমির জোটের পরিবর্তে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনের এই ঘোষণা দিলেন।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অংশ ছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সেই নির্বাচনে জোট সরকার গঠনের পর জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতা মন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বিএনপি-জামায়াত জোট কার্যত ভেঙে যাওয়ার পর থেকে দুই দলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। তবে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে উভয় দলই সক্রিয় ছিল। আসন্ন নির্বাচনে সমমনাদের সঙ্গে জোট না হলে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন কেমন হবে তার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের যুগান্তরকে বলেন, প্রচলিত জোট বলতে যা বোঝায় তেমন কোনো জোট হবে না। আসনভিত্তিক সমঝোতা হবে। যে আসনে সমমনাদের একদলের প্রার্থী থাকবে সে আসনে অন্যদলের প্রার্থী থাকবে না। শুধু দল নয় বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেও এক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হবে। অন্যান্য দল এবং ব্যক্তির জন্য জামায়াত কত আসন ছাড়বে সে প্রশ্নে জোবায়ের বলেন, এখনো সে সময় আসেনি।

জোটের পরিবর্তে সমমনাদের সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়ে জানতে চাইলে সমমনা অন্য একটি ইসলামী দলের দায়িত্বশীল সূত্র দাবি করেন যে, শরিয়াহ আইন চালুর বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে পদ্ধতিগত মতপার্থক্য রয়েছে। জামায়াত মনে করে যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স এবং ইসলামী আইনের শাসন পর্যায়ক্রমে চালু করতে হবে। অন্যান্য দল কিছুটা কট্টর। তবে একবারে সম্ভব নয়, সেটাও তারা বিশ্বাস করে। শরিয়াহ আইনের সঠিক ব্যাখ্যা এ দেশের মানুষ জানে না। তাছাড়া মিডিয়ায় রয়েছে অপপ্রচার।

সূত্রমতে, জোটের পরিবর্তে সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনের আরেকটি কারণ হলো পতিত স্বৈরাচার গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ বিহীন নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হলো সেটাও বহির্বিশ্বের কাছে দেখানো। সবাই আলাদা আলাদা নির্বাচন করলে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা হবে বেশি। বিএনপিও অবশ্য এই কৌশল নিয়েছে।

সর্বোপরি সংশোধিত আরপিও অনুসারে জোটবদ্ধ নির্বাচন করলেও প্রার্থীরা একটি দলের প্রতীকে অতীতের মতো নির্বাচন করতে পারবেনা, স্ব স্ব দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। এ কারণেও জামায়াতসহ সমমনারা আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করার পথে হাঁটছে।