Image description
রাজশাহী বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন রাজশাহী-২ (মহানগর) থেকে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই মন্ত্রী হয়েছেন। বিশেষ করে বিএনপি যতবার সরকার গঠন করেছে প্রতিবারই এ আসনের বিজয়ীকে মন্ত্রিপরিষদে স্থান দিয়েছে।

১৯৯১ সালে নির্বাচনে জয়ী কবির হোসেন ভূমিমন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০০১ সালে রেকর্ড এক লাখ ৭৬ হাজার ৪০৫ ভোটে মিজানুর রহমান মিনু জয়ী হন। তবে তৎকালীন সিটি মেয়র মিনু দলীয় প্রয়োজনে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য হতে চাননি।

 

বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজশাহী-২ আসনটিতে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির ভেতরে জটিল সমীকরণ চলছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে প্রার্থী হিসাবে চাইছে মহানগর বিএনপির একাংশ। যদিও রিজভী কখনো এ আসন থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেননি। বেশ কিছু দিন ধরে নগরের মোড়ে মোড়ে ও সড়কদ্বীপসহ বিভিন্ন দৃশ্যমান জায়গায় রিজভীকে প্রার্থী হিসাবে দেখতে চেয়ে ব্যানার ফেস্টুন ফ্লেক্স দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।

মিনুকেও প্রার্থী হিসাবে দেখতে চেয়ে বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার ফেস্টুন ও ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে। এসব নিয়ে নগর বিএনপির তৃণমূলের সাধারণ নেতাকর্মীরা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নব্বই-এর দশকের শুরুতে রিজভী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। ১৯৯০ সালে রাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। তখন থেকে তিনি রাজশাহী বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাকে নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে পৃথক বলয় তৈরি হয়। সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী না হলেও বলয়টি তাকে প্রার্থী করার দাবি করছে। রিজভীকে প্রার্থী হিসাবে দেখতে চেয়ে তারাই পোস্টার-ব্যানার লাগাচ্ছেন। দলের বাইরে সাধারণ মানুষের মাঝেও বিএনপির প্রার্থী নিয়ে সরব আলোচনা রয়েছে।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের পদ পাওয়ার পর রিজভী নানাভাবে তার অনুসারী অংশটিকে শক্তিশালী করা এবং মিনু ও তার অনুসারীদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করে গেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মিনু অনুসারী মহানগর বিএনপির বুলবুল-মিলন কমিটি কেন্দ্র থেকে আকস্মিকভাবে বিলুপ্ত করা হয়।

এরপর রিজভী অনুসারীদের নিয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এ কমিটিতে মিনু অনুসারীদের কাউকে রাখা হয়নি। যদিও মিনু অনুসারীরাই দীর্ঘ চার দশক ধরে মহানগর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তবে চার বছর ধরে রিজভী অনুসারীরাই রাজশাহীতে বিএনপি পরিচালনা করছেন। মিনু অনুসারীরা পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন করে গেছেন। এ সময় মহানগর বিএনপিতে বিভক্তি বিভাজন প্রকট হয়ে দাঁড়ায়।

এদিকে, ১০ আগস্ট মহানগর বিএনপির কাউন্সিলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহানগর বিএনপির রিজভী অনুগত আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। মহানগর বিএনপির বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ মামুন বলেন, রিজভী ভাইকে রাজশাহী-২ আসনে দলীয় প্রার্থী চান নগর বিএনপির নেতাকর্মীরা।

রাজশাহীর বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে রিজভী অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তাকে প্রার্থী করা হলে রাজশাহীর মানুষ একজন শক্তিশালী সংসদ-সদস্য পাবে। এতে রাজশাহীর উন্নয়নসহ দল আরও শক্তিশালী হবে। এ আসনে রিজভীকে প্রার্থী করা হলে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। দলে কোনো বিভক্তি বিভাজনও থাকবে না।

অন্যদিকে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা চান জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মিজানুর রহমান মিনুকে প্রার্থী হিসাবে পেতে। জেলা যুবদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক সুজন মাহমুদ বলেন, মিনু শুধু রাজশাহী নয়, গোটা উত্তরাঞ্চলে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির শক্তিশালী প্রাণপুরুষ। রাজশাহী-২ আসনে মিনু ভাইয়ের বিকল্প কোনো প্রার্থী নেই। তিনি রাজশাহী বিএনপিতে ঐক্যের প্রতীক। অতীতে এখানে কেউ কেউ রাজনীতি করেছেন। কিন্তু তারা কেউ রাজশাহীর মানুষ নন।

তিনি আরও বলেন, মিনু ভাই শুধু দলের ভেতরেই নন, রাজশাহীর সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় একটি নাম। আমরা চাই দল এবার মিনু ভাইকে প্রার্থী করবে এবং তিনি রেকর্ডসংখ্যক ভোটে জিতে সংসদে যাবেন।

এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক শফিকুল আলম সমাপ্ত বলেন, রিজভী ভাই নিজেই বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেছেন, তিনি রাজশাহী থেকে নির্বাচন করবেন না। আগামীতে তিনি দল ও সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থেকে রাজশাহীর উন্নয়নে ও রাজনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবেন।

রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

দলীয় মনোনয়ন বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ২৭ অক্টোবর চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন সেটাই আমাদের শিরোধার্য্য। দল যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করবে এবং জনপ্রিয় নেতাদেরই মনোনয়ন দেবে। আমি দলের যে কোনো সিদ্ধান্তের প্রতি শতভাগ আস্থা রাখি।

২৭ অক্টোবর রাজশাহী-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ইশাকে ঢাকায় ডাকা হয়েছিল।

প্রার্থী বিতর্ক প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার অ্যাডভোকেট ইশা বলেন, রাজশাহীর আলো বাতাসে আমি বড় হয়েছি। দীর্ঘকাল ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় আছি। এ আসনে আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী। দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত আমি দ্বিধাহীনভাবে মেনে নেব। তবে বাইরের কাউকে প্রার্থী করার ব্যাপারে আমি একমত নই।