Image description

সারা দেশে বহু আসনে প্রার্থীদের এরই মধ্যে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে ফোন করে অথবা দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের এ খবর পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যেই ২০০ আসনে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চায় দলটি।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই মাস ধরে প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে নিরবচ্ছিন্নভাবে এই কাজ করছে বিএনপি।

চলতি অক্টোবরের মধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়টি প্রায় গুছিয়ে এনেছে বিএনপি। একাধিক মাঠ জরিপ ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের প্রতিবেদনের পর প্রার্থী বাছাইয়ের সর্বশেষ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এবার সারা দেশের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঢাকায় ডেকে এনে নির্বাচনী বার্তা দিয়েছেন তারেক রহমান।

এখন এ মাসের মধ্যেই দলের প্রার্থীদের সবুজ সংকেত দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করা হবে। অবশ্য বিভ্রান্তি এড়াতে সরাসরি একক প্রার্থীর নামও ঘোষণা করা হতে পারে। নাম ঘোষণা কিংবা সবুজ সংকেত পাওয়ার পরও দল থেকে প্রার্থীদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। কোনো অভিযোগ কিংবা প্রত্যাশা অনুযায়ী মাঠে ভালো করতে না পারলে নির্বাচনের তপশিলের পর প্রার্থিতা পরিবর্তনও হতে পারে।

তবে সবুজ সংকেত দিলেও আসনভিত্তিক কোন প্রার্থী কতটা জনপ্রিয়, কার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সাধারণ জনগণ ও নেতাকর্মীরা কাকে চান, সংশ্লিষ্ট আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কে—এমন ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে একাধিক মাঠ জরিপের মাধ্যমে এরই মধ্যে প্রার্থীদের বাছাই করে ফেলা হয়েছে।

দলীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিএনপি সূত্র আরও জানায়, আজকালের মধ্যে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে দুই শতাধিক আসনে মনোনীত প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করা হতে পারে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে। জামায়াতের প্রার্থীরা মাঠে থাকায় বিএনপি যাতে প্রচারে পিছিয়ে না পড়েন, সে জন্য কয়েক দিনের মধ্যে এ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।

বাকি আসনগুলোর মনোনয়ন নিয়েও কাজ করছে বিএনপি। এর মধ্যে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র এবং ‘নির্বাচনী জোট’ শরিকদের আসনও রয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে ‘বৃহৎ জোট’ গঠনে তৎপর রয়েছে দলটি।

আসন্ন নির্বাচনে ১৫০ আসনে প্রার্থিতা নিয়ে তেমন জটিলতা দেখছে না বিএনপি। এসব আসনে দলটির প্রার্থিতা মোটামুটি চূড়ান্ত। তবে স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের বিরোধ এবং কোথাও কোথাও তিন-চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর কারণে কম-বেশি শখানেক আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে জটিলতা রয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি। এরপর সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট আসনগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঢাকায় ডেকে বিরোধ নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বিএনপির মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে ধানের শীষের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে তারেক রহমানের নির্দেশনার কথা জানিয়ে দেন। অন্যথায় কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণেরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

এদিকে প্রার্থিতা নিয়ে যাতে দলের মধ্যে কোনো কোন্দল বা বিভক্তি তৈরি না হয়, সে জন্য হাইকমান্ড যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। গত দুদিনে ৩০০ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডেকে কথা বলেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

গত রোববার রংপুর, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং গতকাল সোমবার রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ঢাকা বিভাগের মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।

গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পাঁচ বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঞ্চালনায় তারেক রহমান ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে কথা বলেন।

তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে শিগগির একক প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হবে। যিনি ধানের শীষের প্রার্থী হবেন, তাকে সংহতি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে। তিনি সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনো শোডাউন কিংবা মিষ্টি বিতরণ করতে পারবেন না। এমনটা করলে নিজ দলের প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য প্রার্থীরা কষ্ট পেতে পারেন।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী কালবেলাকে জানিয়েছেন, নির্বাচন সামনে রেখে দ্রুত ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, বিএনপি ও দেশের বিরুদ্ধে বিশাল ষড়যন্ত্র চলছে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যাকেই প্রার্থী ঘোষণা করা হবে, তার পক্ষেই অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

এর আগে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে রোববারের বৈঠকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দলীয় নির্দেশনা জানিয়ে দেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন, প্রত্যেকের অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষাও রয়েছে। এর মধ্যে যাকেই প্রার্থী করা হবে, তার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তাদের মূল লক্ষ্য ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করা।

তিনি আরও বলেন, যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার প্রথম কাজ হবে নিজের আসনে গিয়ে সহকর্মীদের ডেকে নিয়ে পরামর্শ করে কাজ করা। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে স্থানীয় সহকর্মীদের সাহায্য ছাড়া নির্বাচন করা কঠিন হয়ে যাবে। প্রত্যেক নেতাকর্মীর সঙ্গে সৌহার্দ্য রেখে মানুষের কাছে গিয়ে দলকে উপস্থাপনের মাধ্যমে তাদের ধানের শীষের পক্ষে আস্থা অর্জন (কনভিন্সড) করতে হবে।

সারা দেশের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রার্থীদের কাছে আমাদের বার্তা একটাই—বিভেদ নয়, ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জাতির মধ্যে ঐক্যটাই হচ্ছে আমাদের বড় শক্তি। সেই ঐক্য বজায় রাখার জন্য কেউ যাতে বিভেদের পথে না যায়, সেই বার্তাটা আমরা প্রার্থীদের দিচ্ছি।’