Image description

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ হস্তান্তর করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে দুটি বিকল্প সুপারিশ করলেও গণভোটের সময় নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি। এদিকে গণভোটের সময় নিয়ে দুই মেরুতে অনড় অবস্থানে রয়েছে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী।

মঙ্গলবার (অক্টোবর ২৮) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ সুপারিশ জমা দেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে দুটি বিকল্প সুপারিশ দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। দুটি প্রস্তাবের অধিকাংশ বিষয় একই। দুই সুপারিশেই জুলাই জাতীয় সনদে সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে প্রথমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি; এরপর সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে জনগণের সম্মতি নেওয়ার জন্য গণভোট নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

গণভোটের সময় নিয়ে সুপারিশে বলা হয়, ‘উক্ত (জুলাই জাতীয় সনদ) বাস্তবায়ন আদেশ জারির অব্যবহিত পর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে যথোপযুক্ত সময়ে অথবা উক্ত নির্বাচনের দিন উক্ত আদেশ অনুসারে গণভোট অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।’

পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে গণভোটের সময় নিয়ে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ না করার কারণ হিসেবে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, গণভোট অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমরা কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারকে কোনো সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেইনি। যেহেতু কমিশনের পক্ষ থেকে লজিস্টিক্যালি এবং অন্যান্য কারণে এটা বোঝা সম্ভব নয় এখন থেকে ৯০ দিন পর নাকি ৩০ দিন পর গণভোট করা যাবে। কমিশনের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও প্রস্তুতির বিষয়গুলো জানা নাই। সে জন্য আমরা বলেছি, এটা সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

তিনি আরও বলেন, আজকেও সরকারকে বলে এসেছি আপনারা নির্বাচন কমিশনকে জিজ্ঞাসা করুন, তাদের সিদ্ধান্ত নিতে বলুন। কারণ, এই কাজটা আসলে নির্বাচন কমিশনের।

এদিকে গত ৫ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ সব রাজনৈতিক দল একমত হলেও এখন পর্যন্ত গণভোটের সময় নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি দলগুলো। বিশেষ করে প্রধান দুই দল বিএনপি এবং জামায়াত।

শুরু থেকেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট চাচ্ছে বিএনপি। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী জাতীয় নির্বাচনের আগে নভেম্বর মাসে আলাদা গণভোট চায়। সবশেষ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) পর্যন্ত গণভোটের সময় নিজ নিজ অবস্থানে অনড় রয়েছে দল দুটি।

মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনের দিন দুইটা ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট হবে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই। এটা বিএনপির প্রথম দিন থেকে অবস্থান। এখনো সেই অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং আগামী দিনেও সেটার কোনো পরিবর্তন হবে না। আমাদের অবস্থান একেবারেই পরিষ্কার। কারা কী সুপারিশ করেছে, এটা তাদের সমস্যা।

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর পুরো আলোচনায় বিএনপির অবস্থান ছিল—গণভোট আর নির্বাচন একই দিনে হবে। দুটো ব্যালটের মাধ্যমে। এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। নতুন করে এই বিষয়কে সামনে আনার কোনো সুযোগ নেই। সেটা যেই বলুক, যারাই প্রতিবেদন দিক, সেটা তাদের সমস্যা। এটা বিএনপির সমস্যা না। এই ব্যাপারে আলোচনার আর কোনো সুযোগ নেই।

অন্যদিকে মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশনকে ১৮ দফা সুপারিশ দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এসব সুপারিশে জাতীয় নির্বাচনের আগে আগামী নভেম্বর মাসে গণভোট চেয়েছে দলটি।

বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার গণভোটের সময় নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ১৮ দফার মধ্যে গণভোটকে জাতীয় নির্বাচনের আগে করতে হবে এবং সেটা আগামী নভেম্বরেই এই নির্বাচনটা সম্পন্ন করতে হবে।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, একই দিনে ভোট হলে নির্বাচন কেন্দ্রে সহিংসতা হতে পারে, দুই-চারটা কেন্দ্রে ভোট বন্ধ হতে পারে। জাতীয় নির্বাচনে প্রতীক, প্রার্থীর দ্বন্দ্বে ভোট বন্ধ হলে গণভোটের দশাটা কী হবে? একই দিনেই তো হবে, একই ভেন্যুতেই হবে। ভোট কাস্টিং কমে যাবে।

মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, জাতীয় সনদ তৈরি হচ্ছে, জুলাই জাতীয় সনদে সেসব বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোকে পরিবর্তন করে যে সংস্কারগুলোর ব্যাপারে আমরা ঐকমত্য হয়েছি, জাতিকে সেটা জানতে হবে। জানার পরেই না তারা ‘হ্যাঁ’, ‘না’ ভোট দেবে। যদি একই দিনে ভোট হয়, তাহলে ভোটারও জানতে পারল না। সে জন্য আমরা বলেছি সংস্কার ও জাতীয় সনদের বিষয়গুলো নির্বাচন কমিশনকে পাবলিক করতে হবে। ওয়েবসাইটে দেবেন, জনগণ জানবে, ভোটাররা সিদ্ধান্ত নেবেন। সেটার জন্য নভেম্বরই উপযুক্ত সময়।