Image description
 

অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের পর রাজনৈতিক দল হিসেবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। এজন্য তাদের ফিরে আসা বা না আসা গুরুত্বপূর্ণ নয়। আওয়ামী লীগ যে ব্যবস্থায় চালাতো, যে ব্যবস্থায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে টাকা দিত, সেই ব্যবস্থা যদি না থাকে তাহলে আওয়ামী লীগ আর ফিরে আসতে পারবে না।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ইকোনমিক রিফর্ম সামিটে ‘অগ্নিঝরা বর্ষা: দেশে ও বিদেশে’ গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান নিয়ে এই স্মৃতিচারণমূলক বইটি লেখা হয়েছে। অ্যাকশনএইড ও বিডিজবস ডটকমের সহযোগিতায় দুই দিনব্যাপী সামিটটি যৌথভাবে আয়োজন করে নাগরিক কোয়ালিশন, ইনোভেশন, ফিনটেক সোসাইটি, বিআরএআইএন ও ভয়েস ফর রিফর্ম।

তথ্য উপদেষ্টা জানান, মিডিয়া কালচারাল এস্টাব্লিশমেন্ট, মিলিটারি-সিভিল ব্যুরোক্রেসি ও দুর্নীতি মিলে একটি ‘আনহোলি নেক্সাস’ বা অবৈধ আঁতাত তৈরি করেছে। এর কাছে রাজনৈতিক সদিচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা খুবই গৌণ হয়ে যায়। এ জায়গায় কাজ করার আছে। গত এক বছরে তারা কিছু করার চেষ্টা করেছেন। হয়তো বা করতে পারেননি। কিন্তু প্রশ্নটি এখানে, রাজনৈতিক নেতার কথা গুরুত্বপূর্ণ হবে না কি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে পাওয়ার স্টেকহোল্ডারার, যারা তাদের স্বার্থের বাইরে দেখতে পারে না। সংশ্লিষ্ট তিন জায়গায় জনগণের জন্য কিছু করার যে চাহিদা সেটি তিনি দেখছেন না বলে জানান।

সিভিল-মিলিটারি ব্যুরোক্রেসি পাকিস্তানি বা কলোনিয়াল ব্যুরোক্রেসির জায়গা থেকে কোনোভাবে বের হয়েছে কি না- এমন প্রশ্ন তুলে মাহফুজ আলম বলেন, ‘ওইটা যদি না বের হয় তাহলে আমরা এখানে যত সুন্দর সুন্দর আলোচনা করি, পলিসি প্রপোজাল দিই, কিছু কাজ করবে না। আমি বলতে পারি, কারণ আমার এখন মোটাদাগে এক বছরের অভিজ্ঞতা আছে। ক্ষমতার এই তিন নেক্সাস, তাদের বন্ধন যদি না ভাঙে তাহলে যত যত ভালো পলিসি নিয়ে আসি না কেন, এটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারবো না।’

 

সরকার কোনো সংকটে নেই, বরং উদ্যোক্তারা নতুন সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যবসা বাণিজ্য ভালো হবে। এখানে ট্রাস্টের ইস্যু আছে। নির্বাচন হবে, সবাই অপেক্ষায় আছে নির্বাচন হলে তারপর তারা বিনিয়োগ করবে। এটা এমন নয় যে সরকারের বড়সড় ক্রাইসিস, এটা হচ্ছে বাজারে ট্রাস্ট নেই। সবাই আসলে টাকা ধরে রাখতে চাচ্ছে। নির্বাচন হবে, পাঁচ বছরের একটা সরকার আসবে, সেভাবেই টাকা রোলিং করাবে।’

দেশে জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণির দরকার আছে- এমন অভিমত প্রকাশ করে মাহফুজ আলম বলেন, ‘তারা জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করবে। কিন্তু গত ৫০ বছরে বাংলাদেশে জাতীয় বুর্জোয়া দেখতে পারবেন না। রাষ্ট্রীয় প্রণোদনায় ৮০ এর দশকের পর বুর্জোয়া শ্রেণি গড়ে উঠেছে। জনগণের টাকায় রাষ্ট্র তাদের সুযোগ করে দিয়েছে। গার্মেন্টস করার সুযোগ করে দিয়েছে। আরও বিভিন্ন পণ্য বৈচিত্রকরণের সুযোগ করে দিয়েছে। তারা ওইখান থেকে বড় হয়েছে, কিন্তু দেশকে কী দিয়েছে?’

  

দেশে অনেক সংকট আসতে থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক সংঘাত অনিবার্য হবে। এটা হুমকি নয়, বরং সমাজকে ওই জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি। ওই জায়গায় আমরা নিয়ে আসছি না, যেখানে ডায়ালগ সম্ভব।’

অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মৃত অধ্যায়। এটি যেহেতু একটি মরা হাতি, যে যার মতো লাথি দিতে পারে। এটি আর মূলধারা হবে না, যদি আমরা একসঙ্গে থাকি। যদি আমরা ভাগ হয়ে যাই তখন কঠিন হবে।’