Image description
 

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের অর্থ আত্মসাতে দুদক মামলায় গ্রেফতার হওয়া সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সুষ্ঠু বিচার ও আত্মসাৎকৃত টাকা উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন কোম্পানিটির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ভুক্তভোগী বীমা গ্রাহকরা।

একইসঙ্গে আত্মসাতকারীদের দেশ-বিদেশে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে কোম্পানিকে ফেরত এবং আত্মসাতে সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির দাবিও জানান তারা।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বেলা ১২টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে তারা এসব দাবি জানান। কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এতে আরো অংশ নেন কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আব্দুর রহিম ভুঁইয়া, চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব (এসভিপি) শাহাদাত হোসেন রোমান, রিয়েল এস্টেট বিভাগের ইনচার্জ আজগর আলী, গণযোগাযোগ বিষয়ক ইনচার্জ প্রশান্ত সুবাশ চন্দ্রসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী, মাঠকর্মী এবং ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা।

উল্লেখ্য, জমি ক্রয় দেখিয়ে অর্থ আত্মাসাতের মামলায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) গ্রেফতার করে দুর্নীতি দমন কমিশন। একইদিন তাকে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে হাজির করা হলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে ৩১ জুলাই কোম্পানিটির ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নজরুল ইসলামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। তবে এই মামলায় ফারইস্টের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও সাবেক পরিচালক এম এ খালেক ছাড়া অপর কোন আসামি গ্রেফতার হয়নি। এমনকি মামলার আসামি ও তাদের পরিবারের কয়েকজন সদস্য এখনো কোম্পানিটির পর্ষদে বহাল রয়েছেন।

মানববন্ধনে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহী (ভারপ্রাপ্ত) কামরুল হাসান বলেন, আমরা আজ এখানে সমবেতন হয়েছি একটাই কারণে- আমাদের এই কোম্পানি থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠণ হয়েছে। এই টাকাগুলো আমরা ফেরত চাই আমাদের ভুক্তভোগী গ্রাহকদের জন্য। এসব টাকা আমাদের গ্রাহকদের এবং এই টাকা তাদেরকে ফেরত দিতেই হবে।একইসঙ্গে আমরা এই ঘটনার সুবিচার চাই।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফের এসভিপি শাহাদাত হোসেন রোমান বলেন, আমরা দোষীদের কাছ থেকে আত্মসাতকৃত টাকা দ্রুত ফেরত চাই। এই নজরুল-খালেকের জন্যই আমরা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও গ্রাহকরা আজ পথে বসেছি।

তিনি আরও বলেন, এতে শুধু গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, টাকা আত্মসাতের সাথে জড়িতদের জন্যই আজ ফারইস্ট ইসলামী লাইফও পথে বসেছে। এমনকি সময়মতো গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে না পারায় অন্য বীমা কোম্পানিগুলোর ওপর ভরসা করতে পারছে না গ্রাহকরা।

গণযোগাযোগ বিষয়ক ইনচার্জ প্রশান্ত সুবাশ চন্দ্র বলেন, আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে কোম্পানির আত্মসাতকৃত টাকা উদ্ধারসহ দোষীদের বিদেশে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে হবে। এর জন্য দেশের প্রশাসনকে তৎপর হতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই ৪৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের নামে রাজধানীর ৩৬ তোপখানায় ২০৭ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার জমি ক্রয় দেখিয়ে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ৪৫ কোটি টাকা আত্মাসাৎ করে। এর মধ্যে নজরুল ইসলাম আত্মসাৎ করেন ১০ কোটি ও তার স্ত্রী এবং ফারইস্ট লাইফের সাবেক পরিচালক তাসলিমা ইসলাম আত্মসাৎ করে সাড়ে ৯ কোটি। জমি ক্রয় ও অর্থ আত্মসাতের এ ঘটনা ঘটে ২০১৫ সালে।

মামলার আসামিদের মধ্যে পরিচালক নাজনিন হোসেন এখনো পরিচালনা পর্ষদে আছেন। মামলার অপর আসামি মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. মো. মনোয়ার হোসেনের বড় ভাই ড. মোকাদ্দেস হোসেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ভাইস চেয়ারম্যান। এ ছাড়াও ড. মোকাদ্দেস হোসেনের আরেক ভাই মোজাম্মেল হোসেনও দুদকের অপর মামলার আসামি। ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদের নিরপেক্ষ পরিচালক হিসেবে আছেন মোবারক হোসেনের ভাই মামলার অপর আসামী আমানত শাহ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মো. হেলাল মিয়া।

মামলার অন্য আসমিরা হলেন- পিএফআই প্রোপার্টিজ ও নর্দার্ন জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক শাহরিয়ার খালেদ, গেটকো টেলিকমিউনিকেশন ও গেটকো এগ্রো ভিশনের চেয়ারম্যান কে এম খালেদ, প্রাইম ব্যাংক ও প্রাইম ফাউন্ডেশনের উদ্যোক্তা এবং ম্যাক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টি এম এ খালেক, টারটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ড. ইফফাৎ জাহান, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালক খন্দকার মোস্তাক মাহমুদ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, মেডিনোভা মেডিকেল সার্ভিসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক রাবেয়া বেগম, স্বতন্ত্র পরিচালক ও আইডিআরএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন এবং স্বতন্ত্র পরিচালক ও পিএফআই সিকিউরিটিজের সাবেক এমডি কাজী ফরিদ উদ্দীন আহমেদ। কোম্পানিটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হেমায়েত উল্যাহ-কেও দুদকের মামলার আসামি করা হয়।

শীর্ষনিউজ