নানা নাটকীয়তার পর ১৭ অক্টোবর সই হয় জুলাই জাতীয় সনদ। বিএনপি, জামায়াতসহ অধিকাংশ দল অংশ নিলেও আইনি ভিত্তি স্পষ্ট না হওয়ায় সই করেনি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
এরপর থেকেই বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে পরামর্শে বাস্তবায়নের খসড়া তৈরি করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সনদের আইনি ভিত্তি দিতে আদেশ নাকি অধ্যাদেশ, গণভোটের সময়, নোট অব ডিসেন্টের ভাগ্য নির্ধারণে চলছে সিরিজ বৈঠক।
বিএনপির আপত্তির পরও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আমলে নিয়ে সংবিধান আদেশ বা জুলাই জাতীয় সনদ আদেশ জারির চিন্তা রয়েছে সরকার। দু-একদিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেবে ঐকমত্য কমিশন।
তবে আদেশ জারিতে সংসদের অধিকার খর্ব করা হবে বলে মনে করে বিএনপি। অধ্যাদেশ ছাড়া অন্য কোনো উপায় না মানার ঘোষণা দলটির।
অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপির দাবি, আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন নয়, আদেশ জারি করবে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার। একইসঙ্গে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ঠিক হলে চলতি সপ্তাহে সই করবে এনসিপি।
ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সনদ বাস্তাবয়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া হয়েছে। এতে দুটি পথ রয়েছে। একটি জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সংবিধান আদেশ আরেকটি জুলাই সনদ ২০২৫ আদেশ। এই দুটির ব্যাপারে যেকোনো একটি হতে পারে। আমার মনে হয় না এ নিয়ে রাজনৈতিক দলে কোনো মতপার্থক্য রয়েছে।’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, ‘জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন হবে এবং তার রূপরেখা না দেখতে হবে। না দেখে আমরা সই করতে পারব না। আমরা চাই বাস্তবায়ন আদেশটা প্রধান উপদেষ্টা জারি করুক। জনগণ অনুমোদন করল মানে পুরো সনদাটাই অনুমোদন করল। এখানে নোট অব ডিসেন্ট প্রাধান্য পাবে না।’
জামায়াত নেতা ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ‘সনদ বাস্তাবায়ন নিয়ে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে, এটরি সমাধান হলো আদেশ জারি। গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষ থেকে সরকার আদেশটা জারি করবে। এটাই হলো সবচেয়ে কনস্টিটিউশনাল সাউন্ড পদক্ষেপ।’
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের অধিকারটাকে খর্ব করা। এটা বিএনপি মানেনি, মানবেও না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, মতভিন্নতা থাকলেও এগিয়ে যেতে হবে দলগুলোকে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে কমিশনকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ তার।
এদিকে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে তৃতীয়দফায় বাড়ানো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ৩১ অক্টোবর শেষ হবে।