Image description
জাপান সম্প্রতি এক বিস্ময়কর উদ্ভাবন  উন্মোচন করেছে, যা মানুষের গোসলের ধরণে বিপ্লব আনতে পারে — সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় একটি “মানুষ ধোওয়া মেশিন” যা আপনার শরীরকে ধোবে, কুলি করাবে এবং আরাম দেবে, আর আপনাকে তাতে আঙুল পর্যন্ত নাড়াতে হবে না।
 
 
ভবিষ্যতধর্মী এই যন্ত্রটির নাম “হিউম্যান ওয়াশার অফ দ্য ফিউচার” বা জাপানিজে “মিরাই নিনগেন সেন্টাকুকি”। এটি দেখতে অনেকটা আধুনিক বাথটাব আর সায়েন্স ফিকশন স্পা ক্যাপসুলের সংমিশ্রণের মতো। ব্যবহারকারী এর ভেতরে প্রবেশ করলে দরজাটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যায়, এবং উষ্ণ পানি ভরে শরীর ধোয়া শুরু হয় — সাবানযুক্ত পানি দিয়ে প্রথমে পরিষ্কার করা হয়, তারপর মেশিনটি নিজে থেকেই কুলি করে দেয়।
 
 
এই অনন্য যন্ত্রটি তৈরি করেছে সায়েন্স কো., জাপানের একটি সুপরিচিত বাথরুম সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এটি ২০২৫ সালের ওসাকা এক্সপোতে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।
 
 
প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মেশিনটি মাইক্রোস্কোপিক বাবল প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যা ত্বকের ময়লা ও জীবাণু দূর করে — কোনো ঘষা বা হাতের ব্যবহার ছাড়াই।
 
 
যন্ত্রটির ভেতরে ব্যবহারকারীরা পান এক বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা। এতে একটি বিল্ট-ইন প্রজেক্টর রয়েছে, যা সমুদ্রের ঢেউ, সূর্যাস্তের মতো শান্ত দৃশ্য প্রদর্শন করে। পাশাপাশি চারপাশে বাজে প্রকৃতির মৃদু শব্দ, যেমন পাখির ডাক বা বৃষ্টির শব্দ। সেন্সরগুলো পানি স্তর, তাপমাত্রা ও প্রবাহের গতি নিরবচ্ছিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করে, যাতে গোসলের তাপমাত্রা থাকে নিখুঁত ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০০°F), তারপর ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে একটি সতেজ কুলি দেয়।
 
 
কোম্পানির দাবি, এই মেশিনটি কেবল বিলাসিতার জন্য নয়, বরং স্বাস্থ্য ও পরিবেশবান্ধবতা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। এটি প্রতিটি চক্রে পানিকে রিসাইকেল ও ফিল্টার করে পুনর্ব্যবহার করে, ফলে পানির অপচয় অনেক কম হয়। একই সঙ্গে এতে থাকা উন্নত সেন্সর ব্যবহারকারীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে স্ক্রিনে প্রদর্শন করে।
 
 
সায়েন্স কো. জানিয়েছে, এই ধারণাটি জাপানের শতাব্দী-প্রাচীন স্নান সংস্কৃতি থেকে অনুপ্রাণিত, যেখানে পরিচ্ছন্নতা ও বিশ্রাম একে অপরের পরিপূরক। কোম্পানির এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা ঐতিহ্য ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটাতে চেয়েছি।”
 
 
এই প্রকল্পের প্রেরণা এসেছে ১৯৭০ সালের জাপান ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে প্রদর্শিত সানিও ইলেকট্রিক কো.-এর এক অনুরূপ প্রোটোটাইপ থেকে, যা কখনো বাজারে আসেনি। প্রায় পাঁচ দশক পর, সায়েন্স কো.-এর চেয়ারম্যান ইয়াসাউকি আয়ামা আধুনিক সেন্সর প্রযুক্তি ও অটোমেশনের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন আবার জীবন্ত করেছেন।
 
 
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত ইতিবাচক। কোম্পানির এক জরিপে দেখা গেছে, দশজনের মধ্যে আটজন ব্যবহারকারী অভিজ্ঞতায় অত্যন্ত সন্তুষ্ট, আর অন্য এক-পঞ্চমাংশ একে “ভালো” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
 
 
এখন পর্যন্ত জাপানের বিভিন্ন হোটেল ও অবকাশ কেন্দ্রের জন্য ছয়টি অর্ডার পাওয়া গেছে। কোম্পানি আশা করছে, এক্সপোর পর এটি সাধারণ বাজারেও ছাড়ার পরিকল্পনা করবে।
 
 
মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা মুখ খোলেনি, তবে ইঙ্গিত দিয়েছে — “এর দাম হবে একটি আধুনিক হোম স্পার সমান।”