Image description
সাবেক এমপির প্রোগ্রামে স্লোগান দিচ্ছেন নবগঠিত শাখা ছাত্রদলের সভাপতি, আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগ নেতার জন্মদিন অনুষ্ঠানে দপ্তর সম্পাদক (উপরে বাম থেকে), নিচে নির্বাচনী প্রচারণাসহ বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন বর্তমান ছাত্রদল নেতারা © টিডিসি সম্পাদিত

রাজনীতিমুক্ত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে (শেবাচিম) কমিটি ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০ জনের এই কমিটিতে ২০ জনের বিরুদ্ধেই নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির স্বাক্ষরিত এই কমিটির তালিকা শেয়ার করা হয়। একই সঙ্গে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে মো. আসাদুজ্জামান প্রিন্সকে, যার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বরিশাল আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গেও দেখা গেছে তাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে আওয়ামী লীগ সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুকের একটি অনুষ্ঠানে তাকে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। নেতাদের মন জুগিয়ে চলায় প্রিন্সকে সবসময় ছাত্রলীগের নেতারা সমীহ করে চলত বলেও অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা আব্দুল্লাহ আল ফাহিদ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ২০২৩ সালের বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে দলবল নিয়ে প্রচারণা চালাতে দেখা যায় ফাহিদকে। ওই প্রচারণায় আরো ছিলেন কমিটিতে সহ সভাপতি পদে ঠাঁই পাওয়া জুবায়ের আল মাহমুদ, ফাইয়ান আলম ফাহিম, শোভন দেব দত্ত, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হাকিম আদিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাগীব মাহফুজ, শাওন আহমেদ, সহ সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হক শান্ত, সিয়াম হোসেন, শেখ আসিফ হাসান, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক এনএম রোহান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পাদক তীর্থ মন্ডল, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক রাফিউল ইসলাম শোভন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জিসান হোসেন আল দ্বীন। 

সহ-সভাপতি জুবায়ের আল মাহমুদকে ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে অংশ নিতে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এসবে অংশ নেওয়ার ছবি ও ভিডিও প্রচার করতেন তিনি নিজেই। দপ্তর সম্পাদক নোমান ভুঁইয়া ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। একই সাথে র‍্যাগ রুমে জুনিয়রদের হেনস্তার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সংস্কৃতি সম্পাদক চাঁন মিয়া এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আনান ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন ও বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিতেন।

এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ প্রশাসন। গত বছরের ১১ আগস্ট কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল বাশার স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। একই দিন একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

5 (1)
রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বিজ্ঞপ্তি ও ছাত্রদলের প্যাডে প্রচারিত কমিটির ঘোষণা

 

একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কলেজ ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক ব্যানার বা পোস্টার লাগানো, এ ধারা অব্যাহত থাকবে। একই সাথে ক্যাম্পাস ও হোস্টেলে ছাত্র, শিক্ষক বা কর্মচারীদের দলীয় ব্যানারে প্রকাশ্যে বা গোপনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো যাবে না। এ ছাড়া কোনো শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের দলীয় রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ বা উৎসাহিত করতে পারবেন না বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

একই সাথে কলেজ ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনৈতিক মিছিল করা যাবে না এবং ছাত্রছাত্রীদের মিছিলে ডাকা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই একাডেমিক সভায়। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক, এসব সিদ্ধান্তের কোনো ব্যত্যয় হলে হোস্টেল সুপাররা কলেজ প্রশাসনকে অবহিত করবেন এবং এ ধরনের তৎপরতা চালানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে  অনতিবিলম্বে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল বাশারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। উপাধ্যক্ষ ডা. মো. আনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘কমিটি দেওয়ার ব্যাপারটা আমাদের হাতে নেই। এটা সংগঠনের ব্যাপার। তবে ক্যাম্পাসে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবে না। এখন যদি তারা কমিটি দিয়ে দেয়, কমিটি থাকুক; কিন্তু ইনেক্টিভ থাকতে পারবে। এটা তো আর আমাদের হাতে নাই।

14
ক্যাম্পাসে দলীয় কর্মসূচি নিষিদ্ধ হলেও কমিটি ঘোষণার আগের দিনই মিছিল করেছে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা

 

ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ব্যানারে মিছিল-শোডাউন চলছে কিভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমি আপনার কাছে শুনলাম। তারা যদি কার্যক্রম শুরু করে, তাহলে একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা যাবে। আমরা একাডেমিক কাউন্সিলের পরবর্তী সভায় বিষয়টি আলোচনা করব।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিব উদ্দীন রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তাদের পাওয়া যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপে কল দিলে উভয়েই কল কেটে দেন। সাংগঠনিক সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানও কল কেটে দেন। শাখা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান প্রিন্সের মুঠোফোনেও একাধিকবার কল দেওয়া হয়। প্রথমে কল গেলেও হোয়াটসঅ্যাপে সাংবাদিক পরিচয়ে ক্ষুদেবার্তা দেওয়ার পর তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ফাহিদও কল ধরার পর কেটে দিয়েছেন। দপ্তর সম্পাদক নোমান ভুঁইয়ার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ফাইয়ান আলম ফাহিমকে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেন। ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কথা শুনতে পাচ্ছেন না বলে জানান। পরবর্তীতে কল দেবেন জানিয়ে কেটে দেন।