
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের প্রশংসনীয় ভূমিকার কারণে বড়ধরনের মব থেকে বেঁচে গেছেন ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসেনকে হত্যা ঘটনায় আটক শিক্ষার্থী বর্ষা।
জানা গেছে, রোববার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আরমানিটোলার পানির পাম্প গলিতে অভিযুক্ত বর্ষাদের বাড়ির সিঁড়ি থেকে জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত জুবায়েদ আরমানিটোলা পানির পাম্প গলির ১৫ নম্বর নূর বক্স লেনে বর্ষা নামে ওই শিক্ষার্থীকে পড়াতেন। মরদেহ উদ্ধারের পর ওই বাসার সামনে এলাকার মানুষ জড়ো হয়। পরে খবর পেয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও সেখানে যান। সবাই ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলেন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত হন ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। রাত ১১টার দিকে পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষার্থী বর্ষাকে আটক করে। তাকে যখন বাসার বাইরে নিয়ে আসে তখন উত্তেজিত জনতা ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই বলে মিছিল করছিল। এ সময় বর্ষার ওপর হামালার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কিন্তু ছাত্রদল সভাপতি তাদের শান্ত করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব উত্তেজিত জনতার উদ্দেশে বলেন, ‘কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। আপনারা সবাই শান্ত থাকুন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসেছে, তারা ব্যবস্থা নেবেন।’ তার এই প্রশংসনীয় ভূমিকার কারণে সেখানে অনাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটতে পারেনি। না হলে বড়ধরনের মব সৃষ্টি হতো।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সিঁড়িতে মরদেহ পাওয়া গেছে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ওই বাড়ির সামনে মানুষ জড়ো হয়। যখন সবাই জানতে পারে মরদেহটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর এবং তিনি ছাত্রদলের জবি শাখার আহবায়ক কমিটির সদস্য। তখন তার সহপাঠীসহ অনেক ছাত্রদল নেতাকর্মী এখানে আসেন। রাত ১১টার দিকে অভিযুক্ত বর্ষাকে আটক করে পুলিশ। সে সময় ছাত্রদলের সিনিয়র নেতারা না থাকলে বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারতো। এক্ষেত্রে ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভালো ভূমিকা রেখেছেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির এক নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রদল সভাপতি রাকিব শুধু গতকালই নয়, এর আগেও অনেক প্রশংসনীয় কাজ করেছেন। সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনের দিন ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র সাহা সাহস ঢাবি ভিসির সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত তর্কে জড়ান। ওই সময় ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব সাহসের আচরণের কারণে ঢাবি ভিসি ড. নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চান। সেসময় সংযত আচরণের জন্য ছাত্রদল সভাপতি রাকিবকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে পোস্ট দিয়ে প্রশংসা করেন।’
ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রাজু আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেহেতু একটি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটেছে এবং ভিকটিম আমাদের সহযোদ্ধা, সেখানে আমাদের দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যাবেন এটাই স্বাভাবিক। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে আটকের সময় সেখানে প্রচুর উত্তেজিত জনতা ও দলের কর্মী-সমর্থকরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বড়ধরনের অঘটন ঘটতেই পারতো। তবে সভাপতি রাকিব ভাই ও সাধারণ সম্পাদক নাছির ভাইয়ের তাৎক্ষণিত হস্তক্ষেপে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটি ইতিবাচক দিক। তবে আমাদের দাবি, অপরাধী যেই হোক, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাকে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।’
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রদল সভাপতি রাকিব যথাযথ কাজই করেছে। এটাই ছাত্রদলের শিক্ষা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা। একবার চিন্তা করুন, ওখানে রাকিবের এমন ভূমিকা না থাকলে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। সুযোগ সন্ধানীরা মব তৈরি করে খারাপ কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারতো। এবং তার দায় আবার চাপাতো ছাত্রদল তথা বিএনপির ওপর। তাই আমাদের সববিষয়ে সবসময় সতর্ক থাকতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা বিষয় মনে রাখতে হবে বিএনপির এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতাকর্মী কখনো আইনের ব্যত্যয় ঘটায় না। বরং, আইনকে সর্বাত্নক সহায়তা করে। রাকিবের ঘটনা সেটাই নতুন করে সবাইকে মনে করিয়ে দিল।’
এদিকে জুবায়েদ হত্যা ঘটনায় রোববার (১৯ অক্টোবর) দিবাগত রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। তারা বাহাদুর শাহ পার্ক, শাঁখারীবাজার মোড়, জজকোর্ট, রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে তাঁতীবাজার মোড়ে গিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে তারা বংশাল থানার সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। রাতভর অবস্থান করে সকালে তারা ফিরে যান।
উল্লেখ্য, এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর আরমানিটোলার একটি বাসার সিঁড়ি থেকে জগন্নাথ (জবি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবায়েদ হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার হোমনায়। জুবায়েদ জবি কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির সভাপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।