
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল বাজারের ছালেহা ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে এক গর্ভবতী নারীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের স্বামীর বাড়ি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৬নং দক্ষিণ রণীখাই ইউনিয়নের দরাকুল গ্রামে।
নিহতের স্বামী নুরুজ্জামান জানান, তার স্ত্রী সোনারা বেগমের মৃত্যু হয়েছে ছালেহা ক্লিনিকে। জানা যায়, সোনারা বেগম গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তুমপুর ইউনিয়নের বড়ঘোসা গ্রামের মৃত জহির আলীর মেয়ে।
ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিকদের উপর হামলা হয়। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। হামলার শিকার সাংবাদিকরা হলেন দৈনিক জৈন্তাবার্তা’র প্রতিবেদক সৈয়দ হেলাল আহমদ বাদশাহ এবং দৈনিক উত্তরপূর্ব’র প্রতিনিধি হারুন আহমদ।
হামলার শিকার হেলাল আহমদ বাদশাহ বলেন, “তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের সময় ছালেহা ক্লিনিক পরিচালনাকারী সিন্ডিকেট সদস্য তোয়াকুল ইউনিয়নের লাকি গ্রামের (উত্তর পশ্চিমপাড়া) আব্দুর রব শিকদারের ছেলে ফজলুর রহমান হৃদয় আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা আমাদের মারধর করে ও দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।” হামলার খবর পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিক নেতারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
সোনারা বেগমের স্বামী নুরুজ্জামান আরও জানান, রবিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে তার স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হয়। স্থানীয়দের পরামর্শে বিকেল ৫টার দিকে সোনারাকে ছালেহা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ভর্তি করার পর দেখা যায়, ক্লিনিকে কোনো এমবিবিএস ডাক্তার নেই। রাত ৯টার দিকে প্রসব বেদনা বেড়ে গেলে তিনি বারবার অনুরোধ করেন তাকে রিলিজ দিতে, যাতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রাজি হয়নি। পরদিন (২০ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে সোনারা বেগম মারা যান।
নুরুজ্জামান জানান, “ময়নাতদন্তসহ নানা জটিলতার কারণে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেইনি। সবকিছু আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি।”
সালুটিকর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই শাহাব উদ্দিন জানান, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং নিহতের স্বামী মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছেন।
গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “ছালেহা ক্লিনিকে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহে গেলে সাংবাদিকদের উপর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের লোকজন অসদাচরণ করে এবং তাদের অবরুদ্ধ রাখে। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাঠানো হয়। এ বিষয়ে সাংবাদিক ও প্রেসক্লাব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।”
উল্লেখ্য, গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াকুল বাজারে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ছালেহা ক্লিনিক। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। সেবার নামে এখানে চলছে অবৈধ রমরমা বাণিজ্য।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন ছাড়াই ক্লিনিকটি ইচ্ছামতো নিয়ম-কানুন তৈরি করে বহু বছর ধরে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নেওয়া হচ্ছে ইচ্ছামতো ফি, আর হাতুড়ে টেকনিশিয়ানরা দিচ্ছেন মনগড়া রিপোর্ট।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সারোয়ার বলেন, “কয়েক মাস আগে জেলা প্রশাসনের একটি দল এ ক্লিনিক পরিদর্শন করেছিল। তখন তাদের কার্যক্রম সন্তোষজনক ছিল। বর্তমানে তাদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের অনুমতি আছে কি না, আমি নিশ্চিত নই। আগামীকাল ইউএনও সাহেবকে নিয়ে পরিদর্শনে যাবো। যদি গরমিল পাই, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”