Image description

এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলাম গতকাল জামায়াত নিয়ে স্পষ্ট মিথ্যাচার করেছেন। আগের রাতে জামায়াতের সাথে লম্বা মিটিং করেও জামায়াতকে কনভিন্স করতে না পারায়, জুলাই সনদে জামায়াত স্বাক্ষর করায় হয়তো এই ক্ষোভ। সেইসাথে দিনদিন বনসাই হতে যাওয়া এনসিপি নিয়েও সম্ভবত বেশ হতাশায় আছেন নাহিদ। 
আমি জামায়াতের টিমে ঐকমত্য কমিশনের ৫ টি মিটিংয়ে ছিলাম। নাহিদ বেশকিছু অভিযোগ করেছে নিম্নকক্ষে পিআর ও কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবনায় জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে। 
ঐকমত্য কমিশনের বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও জামায়াতের সংস্কার ভাবনা নিয়ে কমিশনে আমার অভিজ্ঞতা;  


প্রথমত,
জামায়াতের নিম্নকক্ষে পিআরের দাবি নতুন কিছু না। কয়েক যুগ আগে থেকে এই আইডিয়ার কথা তাঁরা বলে আসছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে তাঁরা পুনরায় জোরেশোরে এই আলাপ সামনে আনছে। যদিও কমিশনের প্রস্তাবে শুধুমাত্র উচ্চকক্ষে পিআরের কথা ছিলো, নিম্নকক্ষে না। এটুকু ফেয়ার এনাফ আরগুমেন্ট। তবে কমিশনের কয়েকমাস ব্যাপী এই লম্বা মিটিংয়ের সময়ে জামায়াত খুব বেশি জোর দেয়নি পিআর ইস্যু নিয়ে। বরং কমিশনের চেয়ে রাজনৈতিক ময়দানে ও জনগণ ও সিভিল সোসাইটির মধ্যে তাঁরা এটাকে পুশ করার ট্রাই করছে অনেক বেশি। 
যেকোন রাজনৈতিক দল যেকোন দাবি নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনমত তৈরির চেষ্টা চালাবে, সরকার থেকে দাবি আদায় করতে চাইবে এটাই তো স্বাভাবিক। এখানে প্রতারণার কিছুনাই। 


দ্বিতীয়ত,
এরপর নাহিদ বলছে- জামায়াত কোন সংস্কার প্রস্তাব মানেনি বা কমিশনে জামায়াত দেশের স্বার্থের চেয়ে দলীয় স্বার্থ বেশি দেখেছে। যা স্পষ্ট মিথ্যাচার। 
কমিশন মোট ৮৪ টি প্রস্তাব দিয়েছে। এসব প্রস্তাবে শুরু থেকে সব দলের প্রস্তাব, একমত, আংশিক একমত ও দ্বিমত দেখার সুযোগ হয়েছে। ঘাটাঘাটি করার চেষ্টা করেছি। সেক্ষেত্রে জামায়াত ও এনসিপির মতামতে খুব বেশি অমিল ছিলোনা ।  
শুধুমাত্র নিম্নকক্ষে পিআরের দাবি একপাশে রাখলে জামায়াত ঐকমত্য কমিশনের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবে একমত হয়েছে। যেমন;
১। দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ
২। সংসদের ডেপুটি স্পিকার বিরোধীদল থেকে
৩। বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ
৪। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া 
৫। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল 
৬। সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ তে উন্নীত করা 
৭। একইব্যক্তি একইসাথে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদীয় নেতা হতে না পারা 
৮। এক ব্যক্তি জীবনে ১০ বছরের (২ বার) অধিক প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না
৯। উচ্চকক্ষে পিআর 
১০। সংবিধানের উপর জুলাই সনদকে প্রাধান্য দেয়া 
১১। গণভোট 
১২। জুলাই সনদ আদেশ জারি 
১৩। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন
১৪। এনসিসির মাধ্যমে সাংবিধানিক বিভিন্ন পদে নিয়োগ
১৫। জেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতি নির্বাচন 
১৬। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি 
১৭। নির্বাচন কমিশন গঠনে সাংবিধানিক কমিটি 
১৮। স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন
১৯। গোপন ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন
২০। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব ও ক্ষমতা 
২১। ন্যায়পাল নিয়োগের বিধান সংশোধন (অনুচ্ছেদ ৭৭-১) 


এর বাইরেও বেশ কিছু ইস্যুতে জামায়াত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এগুলো অবশ্যই দেশের স্বার্থে, দলীয় স্বার্থে না। কমিশনের মিটিং লাইভ টেলিকাস্ট হওয়ায় সারাদেশের মানুষ দেখেছে কমিশনে মূলত বিভিন্ন ইস্যুতে ফাইট হয়েছে বিএনপি আর জামায়াতের মধ্যে। 
এনসিপির রাগ হওয়ার কথা বিএনপির উপর, কেননা সবচেয়ে বেশি ইস্যুতে দ্বিমত করেছে ও নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে বিএনপি। অথচ আবেগী আর হতাশ নাহিদ ও তাঁর নেতাকর্মীরা রাগ করছে জামায়াতের উপর।
হয়তো জুলাই নিয়ে তাঁদের একক ঠিকাদারি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেখে হয়তো কিছুটা অসহায় বোধ করছে। এনসিপির জন্য কিছুই ঠেকে থাকবেনা। নিজেদের পাকনামি আর হতাশা উগরানোর জন্য অবশ্য জামায়াতই নিরাপদ জায়গা, এসব করে বিএনপি থেকে যদি কিছু সীট বেশি বাগানো যায় সেটাই বা খারাপ কি!


আনিছুর রহমান জুয়েল
ধানমন্ডি
২০ অক্টোবর ২০২৫