
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুরো ব্যবসায়িক মহল এখন গভীর দুশ্চিন্তায়। শনিবার (১৮ অক্টোবর) বিকালে বিমানবন্দরের আমদানি অংশে আগুনে পুড়ে গেছে বিপুল পরিমাণ পণ্য ও কাঁচামাল— যার প্রভাব পড়ছে তৈরি পোশাক, ওষুধ, ইলেকট্রনিকস, টেলিকম, এমনকি ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোতেও।
রফতানিকারকদের আশঙ্কা, এই দুর্ঘটনা শুধু সাময়িক ক্ষতির কারণ নয়—বরং বাংলাদেশের রফতানি সরবরাহ চেইনে (শৃঙ্খল) দীর্ঘমেয়াদি ধাক্কা তৈরি করতে পারে। ইতোমধ্যে বড়দিনের (ক্রিসমাস) মৌসুম সামনে রেখে উৎপাদন ও চালান কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে।
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) জানিয়েছে, বিমানবন্দরের আগুনে ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
টানা অগ্নিকাণ্ডে শিল্প খাতে অস্থিরতা
দেশের শিল্প খাত একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে চরম অস্থিরতার মধ্যে পড়েছে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানী ও বন্দরনগরীতে সংঘটিত তিনটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড শিল্প উৎপাদন, রফতানি কার্যক্রম ও শ্রমিক নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
এর আগে ১৪ অক্টোবর রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে একটি প্রিন্টিং ও কেমিক্যাল গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে ১৬ শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ওই দুর্ঘটনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (সিইপিজেড) অবস্থিত অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইলস লিমিটেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুনে প্রতিষ্ঠানটির অন্তত ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
এরপর শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে আবারও ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় বিপুল পরিমাণ আমদানি ও রফতানিযোগ্য পণ্য। এতে তৈরি পোশাক খাতসহ রফতানি বাণিজ্যের পুরো সরবরাহ চেইন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
শিল্প খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব টানা অগ্নিকাণ্ড শুধু কোটি কোটি টাকার ক্ষতিই বয়ে আনছে না, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের সুনাম, ডেলিভারি প্রতিশ্রুতি ও বিনিয়োগ আস্থার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শিল্প স্থাপনাগুলোতে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি এবং তদারকির দুর্বলতাকেই এর মূল কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
আগুনে পুড়লো সরবরাহ চেইন
কার্গো ভিলেজের ওই অংশে মূলত আমদানি করা পণ্য—বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের নমুনা, লেইস, বোতাম, জিপার, কাঁচামাল, ওষুধের উপাদান, টেলিকম যন্ত্রাংশ ও প্রসাধনী সংরক্ষণ করা হতো। আগুনে এসব উপকরণ সম্পূর্ণ ধ্বংস হওয়ায় উৎপাদন প্রক্রিয়া থমকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রফতানিকারকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে না পারলে ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করতে পারেন, যা বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য ভয়াবহ হবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) পরিচালক ফয়সাল সামাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “আগুনে নমুনা ও ইনপুট পুড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করা বা অর্ডার নবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়বে। বড়দিনের মৌসুমে এক সপ্তাহের বিলম্বও বড় ক্ষতি ডেকে আনে।”
ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ডে আতঙ্ক
গত কয়েক মাসে ঢাকার আশুলিয়া, মিরপুর, চট্টগ্রাম ইপিজেড ও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসে অগ্নিকাণ্ডের পর বিমানবন্দরে এ দুর্ঘটনা ঘটলো। এতে ব্যবসায়ীরা ধারাবাহিক দুর্ঘটনাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন।
ইএবি সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অটো ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেম নেই, এটি অকল্পনীয়। সিভিল এভিয়েশন, কাস্টমস ও বিমান বাংলাদেশ—কেউই দায় এড়াতে পারে না।” তিনি আরও বলেন, “এই আগুন কি কেবলই দুর্ঘটনা, নাকি পরিকল্পিত—তা জনগণ জানতে চায়। সরকারকে অবিলম্বে স্বচ্ছ তদন্ত শুরু করতে হবে।”
বাণিজ্য খাতে চাপ বাড়াচ্ছে সংকটের পর সংকট
কার্গো ভিলেজের আগুন ব্যবসায়ীদের জন্য একের পর এক বিপর্যয়ের সর্বশেষ সংযোজন। চট্টগ্রাম বন্দরে বাড়তি শুল্ক, ব্যাংক ঋণের সুদ বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, ক্রয়ক্ষমতার পতন—সব মিলিয়ে ব্যবসায়িক পরিবেশ এখন চরম অনিশ্চয়তায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও চামড়াজাত পণ্যের ওপর নতুন ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক। ফলে বিদেশি বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সুযোগ আরও বাড়ছে।
ওষুধ শিল্পে বড় ধাক্কা
বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বিপিএ) মহাসচিব মো. জাকির হোসেন জানিয়েছেন, শীর্ষ ৩২টি কোম্পানির প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাঁচামাল পুড়ে গেছে। এতে তিন থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ওষুধ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘‘অনেক কাঁচামাল তাপমাত্রা-সংবেদনশীল হওয়ায় সেগুলো চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে স্থানান্তরের পরও নিরাপদ আছে কিনা, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।’’
হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, “একটি চালান নষ্ট মানে ওষুধের উৎপাদন বন্ধ। সরকারের দ্রুত হস্তক্ষেপ ছাড়া সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়বে।”
ছোট ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বিপদে
মতিঝিলের ছোট আমদানিকারক মুহিবুল ইসলাম (বেলাফেস লিমিটেডের মালিক) দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৪০ লাখ টাকার প্রসাধনী এনেছিলেন। আগুনে সব পণ্য পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, “শীত মৌসুমের ব্যবসা দিয়েই আমাদের সারা বছরের খরচ চলে। আগুনে সব শেষ হয়ে গেলো। বিমার আওতায়ও ছিল না।” তার মতো অনেক ছোট ব্যবসায়ী এখন দেউলিয়া হওয়ার মুখে।
ব্যবসায়িক ঋণ প্রবৃদ্ধি ২২ বছরে সবচেয়ে কম
বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি টানা পতনের মুখে। ২০২৫ সালের আগস্টে এই প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে মাত্র ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে, যা ২০০৩ সালের পর সর্বনিম্ন। এক বছর আগেও (২০২৪ সালের জুলাইয়ে) এই হার ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ প্রবৃদ্ধি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, ঋণ প্রবৃদ্ধির এই নিম্নগতি বাংলাদেশের বিনিয়োগ প্রবণতা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে মন্দার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তাদের মতে, এর মূল তিনটি কারণ হলো—উচ্চ সুদহার, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগে আস্থাহীনতা।
বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর গড় ঋণ সুদহার দাঁড়িয়েছে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশে, যা উদ্যোক্তাদের কাছে ‘অসহনীয়’ পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। এর ফলে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণে অনেকে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, “উচ্চ সুদহার ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগে বড় বাধা তৈরি করছে। ব্যবসায়ীরা এখন নতুন প্রকল্পে যেতে আগ্রহী নন। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরলে ঋণপ্রবাহও ধীরে ধীরে বাড়বে।”
তিনি আরও বলেন, “বাজারে টাকার সংকট, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকি ও ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনও বেসরকারি ঋণপ্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।”
ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন এনেছে এবং ঋণ অনুমোদন ও বিতরণে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। তদুপরি, ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি সহনশীলতা কমিয়ে দিয়েছে, ফলে তারা নতুন ঋণ বিতরণে আরও সতর্ক হয়ে উঠেছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি যদি এভাবে নিম্নমুখী থাকে—তবে কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই বিনিয়োগবান্ধব নীতি ও আস্থা পুনর্গঠনে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দায় নিয়ে প্রশ্ন
ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, কার্গো ভিলেজে বহু বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে পণ্য রাখা হয়। সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বা ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেম নেই।
ঢাকা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, “সিভিল এভিয়েশন ও ফায়ার সার্ভিস সময়মতো সাড়া দেয়নি। তাদের সমন্বয়ের ঘাটতির কারণেই ক্ষতি এত ভয়াবহ।” তবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলছেন, “আগুনের খবর পাওয়ার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ফায়ার ইউনিট কাজ শুরু করেছিল। ৩৭টি ইউনিট আগুন নেভাতে অংশ নেয়। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে, নাশকতাসহ সব বিষয়ই বিবেচনায় থাকবে।”
ক্ষতির বহুমাত্রিক প্রভাব
কার্গো ভিলেজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শুধু পণ্য নয়, বাংলাদেশের সুনাম ও আস্থা। ইএবি সভাপতি বলেন, “এই ক্ষতিকে কেবল আর্থিক ক্ষতি দিয়ে মাপা যাবে না। আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চোখে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই দুর্ঘটনা বাংলাদেশের রফতানি প্রতিযোগিতা ক্ষমতাকে দুর্বল করবে। ক্রেতারা নিরাপত্তা ও সময়নিষ্ঠতা নিয়ে সন্দিহান হলে নতুন অর্ডার কমে আসবে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএফএফএ) সাবেক সহসভাপতি নুরুল আমিন বলেন, “আগুনে বিপুল পরিমাণ পণ্য আটকে গেছে। এতে বিমান পরিবহনের চাপ আরও বাড়বে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ধর্মঘটের কারণে অনেক পণ্য বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছিল।”
সরকারের কাছে ইএবি’র ৬ দফা দাবি
সংবাদ সম্মেলনে ইএবি ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় সরকারের প্রতি ছয় দফা আহ্বান জানায়—১. ক্ষতিগ্রস্ত পণ্যের বিমা দাবির দ্রুত নিষ্পত্তি। ২. বিমাহীন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারি তহবিল গঠন। ৩. কার্গো ভিলেজের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ। ৪. ওষুধ শিল্পের জন্য আলাদা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদাম স্থাপন। ৫. রাসায়নিক গুদাম নিরাপদ দূরত্বে স্থানান্তর। ৬. গুদাম ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর করা।
এছাড়া তারা সরকার ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বাড়ছে অনিশ্চয়তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে ডলারের সংকট, ঋণের উচ্চসুদ এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি ব্যবসায়িক ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হলো বিমানবন্দর দুর্ঘটনার অভিঘাত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এই ঘটনাগুলো সরকারের নীতি ও অবকাঠামো ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা প্রকাশ করছে। শিল্পায়ন টিকিয়ে রাখতে হলে নিরাপত্তা, দ্রুত ক্ষতিপূরণ এবং কার্যকর বন্দর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।”
সাপ্লাই চেইনে চাপ: ক্রেতাদের উদ্বেগ
বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে বিকল্প দেশ থেকে উৎস সন্ধান শুরু করেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি ইনামুল হক খান বলেন, “ক্রেতাদের আস্থা ধরে রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বাজার হারানোর ঝুঁকি বাস্তব হয়ে উঠবে।” তিনি আরও জানান, সরকার সাময়িকভাবে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে গুদাম স্থান বরাদ্দ দিয়েছে। তবে, “এটি অস্থায়ী সমাধান মাত্র। দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা পরিকল্পনা ছাড়া একই ঘটনা আবার ঘটতে পারে।”
আগুনের ছাইয়ে লুকানো প্রশ্ন
কার্গো ভিলেজে আগুন শুধু গুদাম পোড়ায়নি—পুড়িয়েছে ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস, দেশের ভাবমূর্তি ও বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা। দায় কার, ত্রুটি কোথায়, আর কীভাবে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা ঠেকানো যাবে—এ প্রশ্ন এখন পুরো বাণিজ্য খাতের। এমন এক সময়ে, যখন রফতানিতে চাপ, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভে ঘাটতি ও বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা তীব্র—তখন এই অগ্নিকাণ্ড ব্যবসায়িক মনোবল ভেঙে দিয়েছে। বাংলাদেশ এখন শুধু আগুন নেভানোর চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে— আস্থা, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জে।