Image description

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) রণজিত কুমার রায় এবং তাঁর দুই ছেলের জমি দখল করে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। কিছু জমিতে চাষ করা হয়েছে সবজি। বিএনপির স্থানীয় কর্মীরা তাঁদের প্রায় ১৪ বিঘা জমি এভাবে দখলে নিয়ে চাষ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রণজিত কুমার রায় যশোর-৪ (অভয়নগর ও বাঘারপাড়া এবং সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনের এমপি ছিলেন। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন রণজিত। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রণজিত কুমার রায় দেশ ছেড়ে চলে যান বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। আত্মগোপনে আছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরাও। মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের কাউকে পাওয়া যায়নি। 

৫ আগস্টের পর পতিত ছিল জমি

বাঘারপাড়ার খাজুরা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বন্দবিলা ইউনিয়নের সেকেন্দারপুর এবং চাঁপাতলা মৌজায় রণজিত কুমার রায় এবং তাঁর দুই ছেলে রাজীব কুমার রায় ও সজীব কুমার রায়ের ৯টি খতিয়ানে ৬৫১ দশমিক ১৬ শতক জমি রয়েছে। বেশির ভাগ জমির শ্রেণি ধানি। বাসুয়াড়ী ইউনিয়নের আয়াপুর মৌজায় একটি খতিয়ানে রণজিতের ৩৮ শতক ধানি শ্রেণির জমি আছে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নেছারউদ্দিন আল আজাদ।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, রণজিত কুমার রায়ের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে এসব স্থানীয়রা চাষাবাদ করতেন। ৫ আগস্টের পর থেকে জমিগুলো পতিত ছিল। স্থানীয় বিএনপির এক নেতা এবং কয়েজন কর্মী বর্গাদারদের এসব জমিতে ফসল করতে নিষেধ করেন। আমন মৌসুম শুরু হলে স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা ধানের চারা রোপণ করেছেন। দুটি জমির কিছু অংশে সবজি চাষ করা হয়েছে।

কোথাও ধান চাষ, কোথাও ঢ্যাঁড়স

চাঁপাতলা গ্রামের মাঠের উত্তর অংশে রণজিত রায়দের প্রায় ৯ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। ধানের জমির সঙ্গে প্রায় ছয় বিঘার মেহগনিবাগান। সেখানকার ১৫টি বড় মেহগনিগাছের কেটে নেওয়া গোড়াগুলো এখনো আছে। চাঁপাতলা গ্রামের আশরাফুল ইসলাম এই ধান চাষ করছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

চাঁপাতলার পাশের গ্রাম সেকেন্দারপুর। সেকেন্দারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে তিন খণ্ডে প্রায় তিন বিঘা ধানের জমি রণজিত কুমার রায়ের। দুই খণ্ডের মাঝখানে রণজিত কুমার রায়ের ভাইয়ের ধানের জমি। সেখানকার বেশির ভাগ জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়েছে। পূর্ব পাশের প্রায় এক বিঘা জমিতে সারি করে  ঢ্যাঁড়সের চারা লাগানো হয়েছে। চারাগুলো বড় হয়েছে। গাছে ঢ্যাঁড়স ধরেছে। সেকেন্দারপুর গ্রামের দক্ষিণ পাশে চুঁচড়োমারি বিলে ৩৭ শতক জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। প্রায় তিন মাস আগে রোপণ করা চারাগুলো বড় হয়েছে। ধানের গাছ থেকে শিষ বের হচ্ছে। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সেকেন্দারপুর গ্রামের কামাল হোসেন, মো. আলাউদ্দিন ওরফে আলা এবং চাঁপাতলা গ্রামের আশরাফুল ইসলাম চাঁপাতলা গ্রামের মাঠের জমিতে ধান চাষ করছেন। সেকেন্দারপুর গ্রামের উত্তর মাঠের জমিতে ধান চাষ করছেন আশরাফুল ইসলাম এবং অপর অংশে ঢ্যাঁড়স চাষ করছেন সেকেন্দারপুর গ্রামের আনিসুর রহমান। চুঁচড়োমারি বিল এবং সেকেন্দারপুর গ্রামের উত্তর মাঠের একটি জমিতে ধান চাষ করছেন বিএনপি কর্মী সেকেন্দারপুর গ্রামের আবদুর রহিম।

নিজেকে বিএনপি কর্মী দাবি করে আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সেকেন্দারপুর গ্রামের উত্তর মাঠের এক জমিতে ধান চাষ করছি আর আনিসুর এক বিঘা জমিতে ঢ্যাঁড়স চাষ করছেন। তবে আমি চাঁপাতলা গ্রামের মাঠে ধান চাষ করছি না।’ 

আয়াপুর গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ৩৮ শতক জমির এক পাশে কিছু অংশে উঁচু মাচা করে করোলা চাষ করা হয়েছিল। করোলার চাষ শেষ করে সেই মাচায় লাউ চাষ করা হচ্ছে। অপর পাশের জমির সম্পূর্ণ অংশে ধান চাষ করা হচ্ছে। ধানের চারাগুলো বড় হয়েছে। ধানের গাছ থেকে শিষ বের হচ্ছে। বাসুয়াড়ী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আক্কাস বিশ্বাস এই আবাদ করেছেন বলে জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

আক্কাস বিশ্বাস বলেন, ‘বর্তমানে আমি ওই জমি হেফাজতে নিয়ে ৩৩ শতকে আমন ধান করেছি। পাঁচ শতকে করলার চাষ করেছিলাম। করলা উঠে যাওয়ায় সেখানে লাউ চাষ করছি।’ রণজিত কুমার বা তাঁর পরিবারের কেউ ফিরে এলে জমি দিয়ে দেবেন বলে দাবি করেন তিনি।

সেকেন্দারপুর গ্রামের আবদুর রহিম দাবি করেন, রণজিত কুমারের চুঁচড়োমারি বিলের ১৫ কাঠা এবং সেকেন্দারপুর গ্রামের উত্তরের মাঠের ১৫ কাঠা জমিতে ৪০ বছর ধরে তিনি ধান চাষ করে আসছেন। এক মৌসুম ওই জমি ফেলানো ছিল। এ বছর আবার আমন ধান চাষ করছেন।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সেকেন্দারপুর গ্রামের উত্তর মাঠে সাবেক সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়ের জমিতে ঢ্যাঁড়স চাষ করা হয়েছে। গত বুধবার বিকেলে
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সেকেন্দারপুর গ্রামের উত্তর মাঠে সাবেক সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়ের জমিতে ঢ্যাঁড়স চাষ করা হয়েছে। গত বুধবার বিকেলেছবি : প্রথম আলো

আবদুর রহিম জোর করে ওই জমি চাষ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন সেকেন্দারপুর গ্রামের বর্গাচাষি কওছার আলী। তিনি বলেন, ‘৫০ বছর ধরে আমার বাবা এবং এখন আমরা ওই জমিতে ধান চাষ করে আসছি। কিন্তু গত বছর থেকে আমাদের ওই জমিতে বোরো এবং আমন ধান চাষ করতে দেওয়া হয়নি। এবার আমার চাচা আবদুর রহিম জোর করে ওই জমিতে আমন ধান চাষ করছেন।’

কামাল হোসেন, আলাউদ্দিন ওরফে আলা, আবদুর রহিম, আনিসুর রহমান এবং আশরাফুল ইসলাম বিএনপি কর্মী বলে জানিয়েছেন বন্দবিলা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি হাশেম আলী। তাঁরা রণজিত রায়ের জমিতে চাষাবাদ করছেন নিশ্চিত করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমি তাঁদেরকে বলেছি তোমরা পরের জমি চাষ কোরো না। রণজিত রায়ের জমি ওই রকম পড়ে থাকুক। রণজিত রায় যারে দিয়ে পারে জমি চাষ করুক। কিন্তু রহিম জমি চাষ করছে কি না আমি ঠিক জানি না। তবে কামাল আলাউদ্দিন, আনিসুর এবং আশরাফুল ওই জমি চাষ করছে এটা ঠিক।’