
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য, ছাত্রশিবিরের ঢাকা দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতায় গিয়ে কল্যাণকর এবং মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তুলবে। সুশাসন গড়ে তুলবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত করবে এবং শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করবে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও সাধারণ পাঠাগার চত্বরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঠাকুরগাঁও-১ আসনের আয়োজনে শ্রমিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা এখন উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি, পরিশ্রমই সফলতার মূল চাবিকাঠি শ্রমিক ভাইয়েরা। তাদের মাথার ঘাম পাঁয়ে ফেলে কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, শ্রমিকদের পরিশ্রমের জন্য বাংলাদেশ এগিয়ে গেলেও তারা রাজনৈতিক নেতাদের বন্ধু হতে পারে না। তারা তাদের ধারের কাছেও যেতে পারে না। তারা এমপিদের কাছে যেতে পারে না। তাদের কাছে যেতে হলে ১৭-১৮টা ব্যারিকেড ভেঙ্গে কেউ যেতে পারে না। এটা শুধুমাত্র ইসলামী শাসন ব্যবস্থা না থাকার কারণে।
তিনি বলেন, আজকে কৃষক ভাইয়েরা যারা কঠোর পরিশ্রম করে চাল উৎপাদন করে মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে তাদের সন্তানরা যখন পড়ালেখা করতে যায়, তখন জমি বিক্রি করতে হয়। জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে বিনামূল্যে তাদের লেখাপড়া সুয্গো করে দেওয়া হবে। ঠাকুরগাঁওয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল আছে কিন্তু উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। একটু সমস্যা হলে দিনাজপুর, রংপুর এবং ঢাকায় রেফার্ড করে দেয়। কিন্তু, দিনাজপুর, রংপুর এবং ঢাকায় যাওয়ার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন সে অর্থ অধিকাংশ মানুষের নেই। ফলে বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যাচ্ছে। যারা যেতে পারে তারাও জমি-জমা বিক্রি করে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। শ্রমিকদের অবস্থা আরো খারাপ। তাই আগামীদিনে শ্রমিকদের জন্য হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হবে। আগামী দিনে জামায়াতে ইসলামী শ্রমিকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করবে।
দেলোয়ার বলেন, রাষ্ট্রের যে সম্পদ রয়েছে, সেই সম্পদ দিয়েই ঠাকুরগাঁওয়ের উন্নয়ন করা সম্ভব। যে পরিমান বরাদ্দ ঠাকুরগাঁওয়ের জন্য আসে শুধুমাত্র অসাধু রাজনীতিবদের জন্য সেই টাকার কোনো কাজ হয় না। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ২২৫০ কিলোমিটার রাস্তা আছে। মাত্র সাড়ে ৭০০ কিলোমিটার রাস্তা পাকা। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে অনেকে এমপি, মন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু, এই রাস্তাঘাটের সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। বরাদ্দ আসে কিন্তু সে বরাদ্দগুলো খেয়ে ফেলে। সরকারের সেই বরাদ্দগুলো যদি সঠিকভাবে কাজে লাগতো তাহলে অধিকাংশ রাস্তাই পাকা হয়ে যেতো। আমরা নির্বাচিত হই বা না হই, ইতিমধ্যে কাঁচা রাস্তাগুলোর তালিকা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়ে বলেছি যে, এই রাস্তাগুলো পাকা করে দিতে হবে।
তিনি বিমানবন্দর প্রসঙ্গে বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের কিছু রাজনীতিবিদদের কারণে বিমানবন্দর চালু হয়নি। তারা যদি উদ্যোগ গ্রহণ করতো তাহলে এই বিমানবন্দর অনেক আগেই চালু হয়ে যেতো। স্বাধীনের পরে অনেক দলকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছি, শুধুমাত্র একটি দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে পারিনি। সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
তিনি হিন্দু, খ্রীষ্টানসহ অন্য ধর্মের মানুষদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে সব সময় ভুল বোঝাবুঝি তৈরী করে দেয় একটি কুচক্রী মহল ও ষড়যন্ত্রকারীরা। তারা বলে আমরা ক্ষমতায় আসলে নাকি হিন্দুরা থাকতে পারবে না। তাদের মন্দির থাকবে না, গির্জা থাকবে না। ৫৪ বছরে কেউ কি দেখাতে পারবেন যে, জামায়াতে ইসলামীর কোনো কর্মী চাঁদাবাজী করেছে, মন্দিরে আঘাত করেছে, গীর্জায় আঘাত করেছে, বাড়িঘর দখল করেছে, লুটপাট করেছে? বরঞ্চ জামায়াতে ইসলাম এবং ছাত্র শিবিরের কর্মীরাই তাদের পাহাড়া দিয়েছে।
অধ্যক্ষ কফিল উদ্দীনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক হারুনর রশিদ খান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক জেলা আমীর মাওলানা আব্দুল হাকিম, কেন্দ্রী মজলিসে শুরা সদস্য ও জেলা আমীর অধ্যাপক বেলাল উদ্দীন প্রধান, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের রংপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক আবুল হাসেম বাদল, জেলা সেক্রেটারী মোহাম্মদ আলমগীর, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের ঠাকুরগাঁও জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ মতিউর রহমানসহ অনেকে।