Image description
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলের নেতারা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হলো এক নতুন অধ্যায়। জাতীয় ঐকমত্যের প্রতীক হিসাবে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’-এ স্বাক্ষর করেছে দেশের ২৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট। শুক্রবার বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত রাষ্ট্রীয় এক ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে রাজনৈতিক দলের নেতারা জুলাই জাতীয় সনদে সই করেন। পরে তারা নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। নতুন এক অধ্যায়কে সামনে রেখে বিভিন্ন দলের নেতারা বলেছেন, এটি শুধু একটি দলিল নয়, বরং ঐক্যের পথে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। গণতন্ত্র, সাংবিধানিক ভারসাম্য ও অংশগ্রহণমূলক রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে একত্র হওয়াকে তারা দেখছেন নতুন সম্ভাবনার দরজা হিসাবে। আইনি ভিত্তি ও দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি উঠলেও, নেতারা অঙ্গীকারবদ্ধ এই সনদের প্রতিটি শব্দ যেন বাস্তবে রূপ নেয়।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে কমিশনগুলো গঠন করেছিলেন সেগুলো প্রায় দীর্ঘ ৮ মাস পরিশ্রম করে আজকে এই সনদ (জুলাই সনদ) স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। তিনি বলেন, আমি সেজন্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সব রাজনৈতিক দল এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, যারা কাজ করেছেন, যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, যারা সংস্কার কমিশনে দীর্ঘদিন ধরে দিনের পর দিন কাজগুলো করে এটা করেছেন এবং আমাদের দলের সালাহউদ্দিন আহমদসহ সব দলের সদস্যদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আমাদের নতুন যাত্রা শুরু হবে। রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। রাষ্ট্রের কোনো অঙ্গ বা অন্য অঙ্গের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। সাংবিধানিক সীমারেখার মধ্য থেকে সাংবিধানিক ভারসাম্য রক্ষা করে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা হবে। সে দিনের আশায় আমরা আছি।

আমাদের অনেক কাজ, এগুলো কেবল যাত্রা শুরু। সবাই জুলাই সনদ স্বাক্ষর করেছে, যারা দু-একজন স্বাক্ষর করেননি, আশা করি তারাও সামনে স্বাক্ষর করবেন।

নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিয়ে বসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে বলা আছে, বাংলাদেশের প্রত্যেক আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকার মধ্যে সরাসরি প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে ৩০০ জন সংসদ সদস্য নিয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হবে। আর ৬৫(৩) অনুচ্ছেদে আছে নারী সদস্য থাকবে। কিন্তু এখন কেউ কেউ সেটা বর্ণনা করছে যে, নির্বাচন কমিশন শুধু নির্বাচন করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কিছু নয়। এটা সত্য! নির্বাচন কমিশন তো নির্বাচন পরিচালনা করবে কিন্তু কীভাবে করবে সেটা বর্ণিত আছে। সুতরাং জাতিকে বিভ্রান্ত করার কোনো সুযোগ নেই। প্রধান উপদেষ্টা তার পরও যদি আলাপ-আলোচনা করতে চান, আমরা আলাপ-আলোচনায় বিশ্বাস করি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আজকের স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা প্রধান উপদেষ্টার প্রতি সম্মান রেখেছি। আশা করি তিনিও তাদের বক্তব্য অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। আজকের স্বাক্ষরের মাধ্যমে আমরা সনদে একমত হয়েছি, তবে এর আইনি ভিত্তি এখনো বাকি রয়েছে। সরকারের উচিত তা দ্রুত নিশ্চিত করা। সনদে স্বাক্ষর করা হলেও আইনগত স্বীকৃতি না থাকায় এর কার্যকরী প্রয়োগ এখনো সম্পন্ন হয়নি। দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মিটিংয়ে যে নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারিত হয়েছে, সেটি যেন সরকার দ্রুত বাস্তবায়ন করে। যদি সরকার ডিলে করে বা এমন কিছু চিন্তা করে, তাহলে সেটা আবার জুলাইয়ের সঙ্গে জাতীয় গাদ্দারি হিসাবে বিবেচিত হবে এবং নতুন রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি করবে। সনদে যা লিখিত আছে তা বাস্তবায়িত হলে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটা জাতির কাছে অস্পষ্ট রয়ে গেল। আমরা বলেছি আইনি ভিত্তি যদি না দেন তাহলে এই সনদটা, বিপ্লবের স্পিরিট, ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য যে সংস্কার সেই উদ্দেশ্যটা ব্যাহত হবে এবং অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আইনি ভিত্তির জন্য একটা আদেশ জারি করতে হবে এবং গণভোটের মাধ্যমে টেকসই করতে হবে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, সরকার একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য যতটুকু আইনগত ভিত্তি নিশ্চিত করা দরকার, তা যেন করে। পাশাপাশি সমগ্র জাতির সামনে আমাদের যে রাজনৈতিক কমিটমেন্ট, তা বাস্তবায়নে সবাই যেন অঙ্গীকারবদ্ধ থাকে, সেই ভরসায় আজ আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছি। এনসিপি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা আমাদের আন্দোলন সংগ্রামের বন্ধু। কিন্তু তাদের আজ এখানে পাওয়া যায়নি। তারা বোধহয় পরে স্বাক্ষর করতে পারে। কারণ শেষদিকে এসে তাদের মতামত ঐকমত্য কমিশন গ্রহণ করেছে।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বিএনপি সবচেয়ে বড় দল, তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল এবং লম্বা সময় ধরে নির্যাতন-নিপীড়ন সয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে, তাদের মতো অভিজ্ঞ দল দ্বিতীয়টি নেই। এটা তাদের ‘ইগো’। জামায়াত সবচেয়ে সুসংগঠিত দল, চরম দমন-নিপীড়ন সয়েও তারা হাল ছাড়েননি, এই মুহূর্তে তাদের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ঊর্ধ্বমুখী; এটা হলো জামায়াতের ‘ইগো’। অন্যদিকে এনসিপির যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা ছিলেন জুলাই অভ্যুত্থানের শীর্ষ হিরো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটাও তাদের মধ্যে ‘ইগো’র জন্ম দিয়েছে।