Image description
 

রংপুরের তারাগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটনের তিনটি প্রতিষ্ঠানের ৭১ লাখ ৭৯ হাজার ৩১৯ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হ‌লেও প্রভাব খাটিয়ে প‌রি‌শোধ কর‌ছেন না। বরং তি‌নি এবং তার প্রতিষ্ঠা‌নের ম্যানেজারসহ কমর্চারীরা এ বিলকে ভূতুরে ব‌লে পরিশোধে গ‌রিম‌সি কর‌ছেন।

 

বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে চেয়ারম্যান লিটন ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর তারাগঞ্জ জোনাল অফিস কর্তৃপক্ষকে কোণঠাসা ক‌রে রাখায় বকেয়া বিল আদায়ে সক্ষম ছিলো না পল্লী বিদ্যুৎ স‌মি‌তি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পল্লী বিদ্যুৎ বকেয়া আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে শুরু করে।

 

তারাগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর তারাগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. মোসলেহ্ উদ্দিন জানান, সা‌বেক উপ‌জেলা চেয়ারম্যানের ৩টি প্রতি‌ষ্ঠান এন. এন. কোল্ড স্টোরেজ, সাবেরা অটো রাইস মিলস লি‌মি‌টেড ও সাবেরা ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারের দেড় কো‌টি টাকা ব‌কেয়া থাকায় লাল নো‌টিশ প্রদান করার প‌রেও বিল না দি‌লে এন. এন. কোল্ড স্টোরেজ ও ছাবেরা অটো রাইচ মিলের সং‌যোগ বি‌চ্ছিন্ন ক‌রা হ‌লে গত ২৬ জুন ২৫ এন.এন কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার মো. শরিফুল ইসলাম ও তার দলবল অফিস এসে সহকর্মীদের সামনে তা‌কে অকথ্য গালিগালাজ এবং টেবিলে থাপ্পড় দেয়াসহ লাঞ্চিত ক‌রে ও ইকরচালী উপকেন্দ্রে হামলার হুমকি দেয়। কোল্ড স্টো‌রে রাখা আলু মা‌লিক‌দের দি‌য়ে সড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দেয়।

 

এ ব্যাপারে ডি জি এম মোসলেহ্ উদ্দিন আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারাগঞ্জ থানার গে‌লে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুরোধে বিষয়টি নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করে এবং স্টোরে রাখা কৃষকদের আলু নষ্ট হ‌য়ে যাবার বিষয় বিবেচনা ক‌রে কোল্ড স্টো‌রে মান‌বিক কার‌ণে সংযোগ দেয়ার ব্যবস্থা করতে বলেন। পরে আলোচনা সাপেক্ষে দেড় কোটি টাকার বিপরীত কমপ‌ক্ষে অর্ধেকে অর্থাৎ ৭০ লাখ টাকা বিল প‌রি‌শোধ কর‌তে বললে তারা ৩৫ লাখ টাকা বিল দি‌য়ে লিখিত মুচলেকা দিয়ে সংযোগ দেওয়া হয়।

 

এ ঘটনার পর থেকেই আওয়ামী লীগ নেতা লিটনের লোকজন ডিজিএম মো. মোসলেহ্ উদ্দিন বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ায় মিথ‌্যা অপবাদ দেয়া শুরু করে।

 

মোসলেহ্ উদ্দিন আমার দেশকে জানান, জনস্বার্থে কাজ করার জন্য আমি এখানে এসেছি। আমার বিরুদ্ধে যদি কোন ঘুষের প্রমাণ কেউ দিতে পারে আমি চাকরি ছেড়ে চলে যাবো।

 

তিনি আরো বলেন, কোন ভূতুড়ে বিল তাদেরকে প্রদান করা হয়নি। তা‌দের ব‌্যবহৃত বিদ‌্যুৎ রি‌ডিং অনুযায়‌ী বিলিং শাখা কর্তৃক বিদ্যুৎ বিল প্রস্তুত ক‌রে‌ছে। এখা‌নে অতিরিক্ত বা ভূতুরে বি‌লের কোনো প্রশ্নই আসে না। বিদ্যুৎ আইনের বিধি মেনে পূর্বের বিচ্ছিন্ন সংযোগের বকেয়া বিলসহ তাদের চলমান ২টি সংযোগসহ তিন‌টি প্রতিষ্ঠান থেকে বর্তমান মাস পর্যন্ত মোট ৭১ লাখ ৭৯ হাজার ৩১৯ টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পাওনা রয়েছে।

 

রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জিএম মো. খুরশীদ আলম আমার দেশকে জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ সবসময় স্বচ্ছতা ও আইনের শাসন মেনে কাজ করে।

 

সম্প্রতি তারাগঞ্জ জোনাল অফিসের বিরুদ্ধে উত্থাপিত ভূতুড়ে বিদ্যুৎ বিল ও ঘুষ দাবির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা। আমাদের রেকর্ডে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে সবসময় কোটি টাকার উপরে বিল বকেয়া থাকে। বিল আদায় কালে নানান ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়।

 

বিগত সময়ে লিটন সাহেবের মালিকানাধীন তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী রংপুর দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে অবস্থিত এন.এন. কোল্ড স্টোরেজের বকেয়া বিলের দায়ে সংযোগ বিছিন্ন করার উদ্যোগ নিলে কর্মচারী ও আলু গ্রাহকদের দিয়ে সড়ক অবরোধের হুমকি দেয়। বকেয়া বিলের জন্য আমাদেরও নানামুখি জবাবদিহিতা রয়েছে।

এখনো তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৭১ লাখ টাকারও বেশি বকেয়া বিল রয়েছে যা দীর্ঘদিন ধরে পরিশোধ করা হয়নি।

 

উল্লেখ্য, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের তথ্যানুসারে, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটনের ৩টি প্রতিষ্ঠান এন. এন. কোল্ড স্টোরেজ (হিসাব নং-১০/২৯৫০), মেসার্স সাবেরা অটো রাইচ মিল (হিসাব নং-৮৩৬/১২৯৫) এবং মেসার্স সাবেরা ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচার (হিসাব নং-১০/১৮৬৪) এর বকেয়া বিলের পরিমাণ যথাক্রমে ৩২ লাখ ৯৩ হাজার ২৬৮ টাকা, ২৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৩০ টাকা এবং ১৪ লাখ ৬ হাজার ১২১ টাকা করে সর্বমোট ৭১ লাখ ৭৯ হাজার ৩১৯ টাকা বিদ্যুৎ বিল বর্তমান বকেয়া রয়েছে।

 

এ ব্যাপারে তারাগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান লিটনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এসব ভূতুড়ে বিল। অন্য প্রতিষ্ঠানের বিল আমার প্রতিষ্ঠানের নামে দেয়া হয়েছে।