
সৈয়দ মনিরুল ইসলাম ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা, ছিলেন পৌর মেয়রও। তাঁর বড় ভাই সৈয়দ নুরুল ইসলাম পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। নাশকতাসহ অন্তত পাঁচটি মামলা হয়েছে সৈয়দ মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এখন তিনি পলাতক।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মনিরুল ২০০৭ সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সহকারী কমিশনার (ট্যাক্স) পদে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সেই বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা বাতিল করে দেয়। পরে চাকরি না করে রাজনীতিতে যোগ দেন মনিরুল। গত ফেব্রয়ারি মাসে ২৭তম বিসিএস পরীক্ষার ১৭ বছর পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে নিয়োগের রায় পান ১ হাজার ১৩৭ জন। সেই তালিকায় রয়েছেন সৈয়দ মনিরুল ইসলাম। পলাতক থেকেই বিসিএসে যোগ দিতে ১২ অক্টোবর ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করেন তিনি। পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্যও আবেদন জমা দিয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কিবরিয়া আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, সৈয়দ মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে তাঁর থানায় একটি নাশকতার মামলা রয়েছে। সেই মামলায় তিনি এখন পলাতক। তাঁর পুলিশ ভেরিফিকেশনের কোনো আবেদন এখনো থানায় আসেনি।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মনিরুল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। পরে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে গিয়ে রাজনীতি শুরু করেন। তাঁর বড় ভাই সাবেক ডিআইজি নুরুল ইসলামের সহযোগিতায় তিনি আওয়ামী লীগের নেতা হন। সর্বশেষ কমিটিতে মনিরুল ইসলাম শিবগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ২০২২ সালের নির্বাচনে পৌর মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের পর থেকে ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। পলাতক থেকে তিনি ও তাঁর ভাই নাশকতার চেষ্টা করছেন বলে থানায় মামলা হয়েছে।
এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য সৈয়দ মনিরুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হয়। তবে তাঁর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
“আ.লীগের রাজনীতিতে ‘এসপি লীগের’ দাপট” শিরোনামে ২০২২ সালে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সৈয়দ নুরুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একটি প্রভাবশালী পক্ষ গড়ে তোলেন, যারা ‘এসপি লীগ’ নামে পরিচিত। দলীয় রাজনীতিতে আগে তেমন ভূমিকা না থাকলেও এই পুলিশ কর্মকর্তার বড় ভাই সৈয়দ নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের মনোনয়নে হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ছোট ভাই মনিরুল ইসলাম হয়েছেন পৌরসভার মেয়র।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের জালমাছমারি গ্রামে সৈয়দ নুরুল ইসলামদের বাড়ি। নুরুল ইসলাম ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) থাকাকালে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাব রাখতে শুরু করেন। এরপর তাঁদের পক্ষের লোকজন ‘এসপি লীগ’ নামে পরিচিতি পান।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা–কর্মীরা তখন অভিযোগ করেছিলেন, সৈয়দ নুরুল ইসলাম সরকারি চাকরিজীবী হয়েও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেন। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ এখন তাঁর সমর্থিত নেতাদের হাতে।
তবে সৈয়দ নুরুল ইসলাম সে সময় প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছিলেন, ২০১৪ সালে শিবগঞ্জে জামায়াত-শিবির তাণ্ডব শুরু করলে তিনি এলাকার আওয়ামী লীগের নির্যাতিত নেতা–কর্মীদের পাশে দাঁড়ান। তখন থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা ও যোগাযোগ তৈরি হয়।