Image description
 

জাতীয় নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, রাজনৈতিক অঙ্গনে ততই বাড়ছে গুঞ্জন গণঅভ্যুত্থানের শক্তি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে, নাকি এককভাবে লড়াইয়ে নামবে? যদিও এখনই এর স্পষ্ট উত্তর মিলছে না, তবুও বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির পর্দার আড়ালের আলোচনার খবর জোরালো হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।

 

তবে এনসিপির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন আলোচনার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। অপরদিকে, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার জানিয়েছেন, সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।

অন্যদিকে, বিএনপি এখনই এনসিপির সঙ্গে জোটের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি নয়। আর জামায়াত জানিয়েছে, জোট গঠনের বিষয়ে তাদের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি, যদিও ফ্যাসিবাদবিরোধী সব দলের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

 

বিএনপি’র প্রস্তুতি ও এনসিপির প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ ইতিবাচকতা

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই জাতীয় সরকারের মডেল বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় দলটি তাদের মিত্রদের জন্য অন্তত ৫০টি আসন ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এ প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যে তরুণদের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম এনসিপির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি এনসিপির সঙ্গে নির্বাচনী জোটের সম্ভাবনারই ইঙ্গিত।

তবে বিএনপির শীর্ষ নেতারা এখনই স্পষ্ট করে বলছেন না যে এটি নির্বাচনী জোট হবে, নাকি বিএনপি জয়ী হলে সরকার গঠনের অংশীদারিত্ব পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকবে এনসিপি।

বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন “আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলনে ছিল, সংগ্রাম করেছে, নির্যাতনের শিকার হয়েছে—তাদের দাবিও যৌক্তিক। বিএনপি একটি বড় দল, তাই আমাদেরও কিছু আসন ছাড় দিতে হবে। নির্বাচনের নমিনেশন থেকে সরকার গঠনের ক্ষেত্রেও তাদের একোমোডেট করার পরিকল্পনা আছে।”

জামায়াতের অবস্থান: ‘যোগাযোগ আছে, সিদ্ধান্ত এখনো নয়’

রাজনৈতিক মহলে জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতাদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। তবে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, “জোট করার বিষয়ে জামায়াতে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিলাম, গণতন্ত্রের জন্য লড়েছি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। জনগণের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে পারলে তবেই আমরা নির্বাচনমুখী সিদ্ধান্ত নেব। অন্য দল কার সঙ্গে জোট করছে, সেদিকে এখন আমাদের নজর নেই।”

এনসিপির কৌশল: সক্রিয়তা বজায় রেখে স্বাধীন সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ

এনসিপির নেতারা বলছেন, এখন পর্যন্ত তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিএনপি, জামায়াত বা অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা তারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

সদস্য সচিব আক্তার হোসেন বলেন, “আমাদের জোটের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়েই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আপাতত আমাদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়িয়ে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।”

যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “আগামী এক মাসের মধ্যে আমাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। আমরা যাদের সঙ্গেই জোট করি না কেন, কয়েকটি বিষয়ে আমরা আপসহীন চাঁদাবাজি ও সহিংস রাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের রিজার্ভেশন আছে। মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় সম্পদ, এগুলোকে আমরা বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে চাই।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা সক্রিয়তা বজায় রেখে সাংগঠনিক কলেবর বাড়ানোর চেষ্টা করছি, যাতে নিজেদের সামর্থ্যে নির্বাচনে অংশ নিতে পারি।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টি

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এনসিপি নতুন দল হলেও সাম্প্রতিক সময়ে তরুণ ভোটারদের মধ্যে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে সম্ভাব্য সম্পর্ক ভবিষ্যতের নির্বাচনী সমীকরণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।