Image description

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমের এক বিস্ফোরক বক্তব্যে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রামগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি শেখ মো. কামরুজ্জামানের বাসভবনে এক মতবিনিময় সভায় সেলিম বলেন, দাঁড়িপাল্লায় ভোট না দিলে বেহেশত যাওয়া যাবে না এ ধরনের কথা যারা বলবে, তাদের জিহ্বা টেনে ছিঁড়ে ফেলবো! 

বিএনপির আন্দোলন সঙ্গী ১২ দলীয় জোটের এ নেতার এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় রাজনীতিতে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। কেউ একে ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে সাহসী উচ্চারণ বলে অভিহিত করেন, আবার কেউ বলেন এটি চরম আক্রমণাত্মক ও অশালীন ভাষা, যা রাজনৈতিক ভদ্রতার সীমা লঙ্ঘন করেছে।

কিন্তু সরাসরি এমন বক্তব্য দেননি বলে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান শাহাদাত হোসেন সেলিম। তিনি জানান, আমি সেই প্রোগ্রামে বলেছি, ধর্মের নামে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা কখনোই ইসলামের শিক্ষা নয়। ভোট একটি নাগরিক অধিকার, ধর্মীয় ফতোয়া দিয়ে মানুষকে ভয় দেখানো অন্যায়।

সেলিম আরও বলেন, আমি বলেছি, যারা ইসলামকে ব্যবহার করে ভোট আদায় করতে চায়, তারা প্রকৃত মুসলমানদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। একটি দলের নেতাকর্মীরা প্রচার করছে যে, বিএনপিকে বা ধানের শীষে ভোট দিলে দোজখে যাবে আর দাড়ি পাল্লায় ভোট দিলে বেহেশতে যাবে। এটা রীতিমত বিভ্রান্তি। জনগণকে ভুল মেসেজ দেয়া। সেই প্রেক্ষিতে আমি বলেছি- যারা ইসলামের এমন অপ ব্যাখ্যা দেয়, প্রচার করে যে, ‘দাড়ি পাল্লায় ভোট না দিলে বেহেশতে যেতে পারবে না’-সেই অপপ্রচারকারীদের জিহ্বা ছিড়ে ফেলার কথা বলেছি।

সেলিম অভিযোগ করেন, আমার পূর্ণাঙ্গা বক্তব্য বা মূল বক্তব্য প্রচার না করে সরাসরি দাড়ি পাল্লায় ভোটের কথা বললেই জিহ্বা কেটে ফেলব বলে প্রচার করেছে কিছু সংবাদ মাধ্যম। এটা বিকৃত বক্তব্য। বিতর্ক সৃষ্টি করতেই এ ধরণের প্রচার করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।  

ব্যাখ্য দিয়ে শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আমার বক্তব্য নিয়ে রামগঞ্জের জামায়াত ইসলামী বেশ জলঘোলা করতে চাইছে। একটু আগেই দেখলাম উপজেলা জামায়াত একটা সংবাদ সম্মেলন করেছে সেখানে তারা অভিযোগ করেছে, শাহাদাত হোসেন সেলিম নাকি জামায়াত ইসলাম বাড়ি বাড়ি ভোট চাইতে গেলে তাদের যেন জিভ কেটে নেওয়া হয় সেই হুমকি দিয়েছেন। কী নির্লজ্জ মিথ্যাচারিতা!

আসলে গতকালকে নাগমুদে একটা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবার সময় বলেছিলাম, বাড়ি বাড়ি গিয়ে যারা বলবে দাঁড়িপাল্লায় ভোট না দিলে জাহান্নামে যেতে হবে তাদের জিহ্বা টেনে ছিঁড়ে ফেলতে হবে। বক্তব্যের পাঞ্চ লাইন মোটামুটি এটা। এটা নিয়েই বিতর্ক তৈরি করার চেষ্টা চলছে। 

তিনি বলেন, জামায়াত এ কথাটা হরদম বলে। ইদানিং প্রকাশ্যে কম বললেও তাদের যে মহিলা টিম, সহি কোরআন শিক্ষার নামে যারা গ্রামের সহজ সরল ধর্মভীরু মহিলাদের বিভ্রান্ত করে, তারা এই ধরণের কথাবার্তা হামেশাই বলে থাকেন।

কে জাহান্নামে যাবে, কে জান্নাতে যাবে সেটা নির্ধারণ করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। কোন রাজনৈতিক দলকে জান্নাত-জাহান্নামের টিকিট বিক্রি করার অধিকার দেওয়া হয়নি। কেউ যখন রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্যে এ ধরণের ভ্রান্ত কথাবার্তা বলে সহজ সরল মহিলাদের বিভ্রান্ত করতে চায় তখন তাদেরকে প্রতিহত করা যেকোন ধর্মপ্রান মুসলমানের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। আমি এদেরকেই প্রতিহত করার কথা বলেছি। একটু কঠিন ভাষায়, এ আর কি। 

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে দলীয় কৌশল ও তরুণদের ভূমিকা নিয়ে আয়োজিত ওই মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন রামগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম পিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বাসার সতুসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।