Image description

ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময়ের ব্যবধানে এক দশক পরে গঠিত হয়েছে পে কমিশন। এই কমিশনের সুপারিশের ওপর ঘোষিত হবে নবম পে স্কেল। ফলে বাড়বে সরকারি চাকুরীজীবীদের সুযোগ সুবিধা। সেদিকেই এখন তাকিয়ে আছেন কর্মজীবীরা।

এ বছর বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাধীনতার পর প্রথম গ্রেড ভেঙে কমানো বিষয়ে জোর আলোচনা চলছে। পাশাপাশি সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত কমিয়ে বৈষম্য দূর করার চিন্তাও রয়েছে কমিশনের।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত আটটি পে স্কেল পেয়েছেন কর্মজীবীরা। এসব স্কেল ঘোষণার সময়ের ব্যবধান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সর্বোচ্চ ৮ বছর ব্যবধানে দুইবার (১৯৮৫ ও ২০০৫ সাল) পে স্কেল ঘোষণা করা হয়েছে। ১৯৮৫ সালে সর্বোচ্চ বেতন দ্বিগুণ করে ৬ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন বেতন ১২২.২ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় ৫০০ টাকা। আর ২০০৫ সালে গঠিত কমিশন সর্বোচ্চ বেতন ৫৩.৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে ২৩ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন বেতন ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে দুই হাজার ৪০০ টাকা করে।

এছাড়া ছয় বছরের ব্যবধানে পে কমিশন গঠিত হয়েছে দুইবার। ৪র্থ কমিশন (১৯৯১) সর্বোচ্চ বেতন ৬৬.৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১০ হাজার এবং সর্বনিম্ন বেতন ৮০ শতাংশ বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করে। আর ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ বেতন ৯৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৭৮ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন বেতন ১০১.২২ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয় ৮ হাজার ২৫০ টাকা।

পাঁচ বছর বিরতি দিয়ে ১৯৯৭ সালে গঠিত কমিশন সর্বোচ্চ বেতন ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন বেতন ৬৬.৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে দেড় হাজার টাকা করে। ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ে (৪ বছরের ব্যবধানে) পে স্কেল ঘোষণা করা হয় ১৯৭৭ সালে। এই কমিশন সর্বোচ্চ বেতন ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে তিন হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন বেতন ৭৩ শতাংশ বাড়িয়ে ২২৫ টাকা করে।

‘সুপারিশ করার ক্ষেত্রে সক্ষমতাও বিবেচনা করবে কমিশন। পে কমিশনের এক সদস্য বলেন, আমরা অনেকগুলো প্রশ্ন দিয়েছি মতামতের জন্য। চার ক্যাটাগরিতে প্রশ্নের উত্তর ইতোমধ্যে আসছে। মিটিংয়ে আমরা উত্তরগুলো পর্যালোচনা করবো। পরে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবো’- সদস্য, পে কমিশন-২০২৫ 

 

২০১৫ সালের ঘোষিত সর্বশেষ পে স্কেলের সময় পর্যন্ত ধরলে ৪৪ বছরে (১৯৭১-২০১৫) সরকারি কর্মজীবীরা গড়ে সাড়ে পাঁচ বছরের ব্যবধানে একটি পে স্কেল পেয়েছেন। ইতোমধ্যে অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী বছর (২০২৬) নতুন স্কেল ঘোষণা করা হবে। সে হিসেবে প্রায় ১১ বছর পর নতুন স্কেল পাবেন সরকারি চাকুরীজীবীরা। এই সময়ে অন্তত দুইটি স্কেল ঘোষণা করা উচিত ছিল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এই বিষয়টিই সামনে আনছেন কর্মজীবীরা। তাদের দাবি, ২০১৫ সালের পর অন্তত দুটি কমিশন গঠিত হলে, দুইবার বেতন বাড়তো। এই বিবেচনায় যেহেতু দুইবারের সময়ে একবার পে স্কেল দেয়া হচ্ছে, তাই বেতন বৃদ্ধির সময় বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।

১১-২০তম গ্রেড সরকারী চকুরীজীবি ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুর রাজ্জাক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ১১ বছরে অন্তত দুইবার পে স্কেল পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেটা হয়নি। বেতন ৭৫% করে বৃদ্ধি ধরা হলেও দুইবারে অনেক বাড়তো। এই বিবেচনায় যেহেতু দুইবারের সময়ে একবার পে স্কেল দেয়া হচ্ছে, তাই বেতন অন্তত ১৫০% বৃদ্ধি করা হোক। এছাড়া বাজার দরের সঙ্গে মিল রেখে গ্রেড ভেঙে বেতনের অনুপাত কমিয়ে বৈষম্য দূর করা দাবিও করেছেন তারা। ফোরামের দাবি, মূল বেতনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ৩২ হাজার এবং সর্বোচ্চ এক লাখ ২৮ হাজার টাকা করা হোক।

বিষয়টি নিয়ে কমিশনের পরিকল্পনা জানতে পে কমিশন-২০২৫ এর একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস। তারা বলছেন, বাজার দর, কর্মজীবীদের চাহিদা সবকিছু কমিশনের বিবেচনায় আছে। ১০ বছর পর কমিশন গঠিত হয়েছে, এই দশ বছরের মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের চাহিদাও অনেক। মূলত মানুষের চিন্তার সঙ্গে মিল রেখেই আমাদের চিন্তা করতে হবে।

তবে সুপারিশ করার ক্ষেত্রে সক্ষমতাও বিবেচনা করবে কমিশন। পে কমিশনের এক সদস্য বলেন, আমরা অনেকগুলো প্রশ্ন দিয়েছি মতামতের জন্য। চার ক্যাটাগরিতে প্রশ্নের উত্তর ইতোমধ্যে আসছে। মিটিংয়ে আমরা উত্তরগুলো পর্যালোচনা করবো। পরে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবো। 

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সুপারিশের ক্ষেত্রে আমাদের আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করতে হবে, তাই না? আমাদের সক্ষমতার আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে ওই সদস্য বলেন, ‘আল্লাহ ভরসা দেখা যাক কতটুকু করা যায়’।

পে কমিশনের অপর এক সদস্য মূল বেতন দ্বিগুণ হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েচেন। যদি দিগুণ হয়, সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মূল বেতন হবে ১ লাখ ৫৬ হাজার (১ম গ্রেড) এবং ২০তম গ্রেডের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন হবে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। তবে গ্রেড ভেঙে কমালে সর্বনিম্ন গ্রেডের মূল বেতন আরও বাড়বে বলে ধারনা করা হচ্ছে।