Image description
পররাষ্ট্র-পরিবেশ উপদেষ্টারা কার স্বার্থ দেখছেন?, রেন্টাল-কুইন রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটকারী সামিটের পৃষ্ঠপোষক সাবের হোসেন চৌধুরী পরিচ্ছন্ন নেতা?

নির্বাচনের ট্রেন চলতে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী বাছাই-ঘোষণা করছে। ভোট দেয়ার জন্য ১২ কোটি ভোটার মুখিয়ে। তখন দেশে-বিদেশে ফের ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ প্রতিষ্ঠার তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। খুনের দায়ে অভিযুক্ত হাসিনা এবং ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িত পলাতক নেতাদের বাদ দিয়ে বিদেশিদের ভাষায় অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্নদের নিয়ে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ প্রতিষ্ঠার কৌশল চলছে।

অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে সাবের হোসেন চৌধুরীকে। অতি গোপনে নরওয়ে, ডেনমার্ক ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূতদের সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে তোলপাড় চলছে। পশ্চিমাদের কাছে পরিচ্ছন্ন অথচ দেশে বিতর্কিত এই সাবের হোসেন চৌধুরী ’৯৬ সালে ব্যর্থ সামরিক ক্যু চেষ্টার মন্ত্রণাদাতা ছিলেন। রেন্টাল কুইন রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে বিদেশে পালানো সামিট গ্রুপের এই পৃষ্ঠপোষক সাবের চৌধুরী ওয়ান-ইলেভেনের সময় মাইনাস টু ফর্মুলার নেপথ্যে ছিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের সময়ের গড়ে ওঠা সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোকে দিয়ে নিজেকে অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন নেতা জাহির করার চেষ্টা করছেন। গত বছরের আগস্টে রাষ্ট্রক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর গ্রেফতার হন সালমান এফ রহমান, সাবের হোসেন চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের শত শত নেতা এবং অসংখ্য সাবেক মন্ত্র¿ী-এমপি ব্যবসায়ী-শিল্পপতি। সবাই এখনো কারাগারে রয়েছেন এবং কারো কারো বিচার চলছে। অথচ মার্কিনিদের চাপে সাবের হোসেন চৌধুরীকে জামিন দেয়া হয়েছে। জামিনে কারামুক্তি পাওয়ার পর ১১ মে গোপনে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন সাবেরের সঙ্গে বৈঠক করেন। গত সোমবার নরওয়ে, ডেনমার্ক ও সুইডেনের রাষ্ট্রদূতরা ফ্ল্যাগ ছাড়া তথা কোনো কূটনৈতিক স্বাক্ষর ছাড়াই একই গাড়িতে চড়ে সাবের হোসেনের গুলশানের বাসভবনে প্রবেশ করেন। মানুষের নজর এড়াতে তারা বৈঠক শেষে বাসভবনটি থেকে বেরিয়ে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করে চলে যান। এত গোপনীয়তা অথচ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন দাবি করে বলেছেন, ‘সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের যাওয়া স্বাভাবিক একটি ঘটনা’। ভারত বা পাকিস্তানে বিদেশি কোনো রাষ্ট্রদূত সাংগঠনিক কাজকর্ম নিষিদ্ধ কোনো দলের নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক করলে পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যেত ভাবা যায়?

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী প্রফেসর মো: রাশেদ আলম ভুঁইয়াকে বলেন, ‘আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটা অংশ যাতে ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারে সে জন্য সাবের হোসেনের সঙ্গে তিন দেশের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ ও আলোচনা হতে পারে। বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগ যে অপকর্ম করেছে সেটা নিয়ে তাদের মধ্যে ন্যূনতম রিগ্রেট (অপরাধবোধ) নেই। নর্ডিক দেশের রাষ্ট্রদূতদের সাথে সাবের হোসেন চৌধুরীর বৈঠক যদি ইনিয়েবিনিয়ে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের জন্য হয়ে থাকে কিংবা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার জন্য হয়ে থাকে, তাহলে এটা শুভ লক্ষণ নয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে গণতান্ত্রিক উপায়ে অবশ্যই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু বিগত ১৭ বছর তাদের যেসব অন্যায়-অপকর্ম আছে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে তাদের দ্বারা নির্বিচারে হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়েছে সেসবের বিচারের পর তারা যদি পারে তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগের অপরাধসমূহের যে বিচার কার্যক্রম চলছে সেগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ফেরাটা রক্তস্নাত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটবিরোধী।

সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক নিয়ে আওয়ামী লীগের অনুগত সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত নবনীতা রায় চৌধুরী নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন, সাবের হোসেন চৌধুরীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জানিয়ে দিয়েছে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না এবং তারা এই ড. ইউনূস সরকারকে আন্দোলনের মাধ্যমে পতন করেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সাবের হোসেনের সাথে বিদেশি রাষ্ট্রদূতের দেখাসাক্ষাৎ সেই মে মাস থেকেই চলছে। সেনাপ্রধান ক্ষমতা নিয়ে নিবেন, জাতীয় সরকার গঠন করবেন এমন আওয়াজ যখন চলছিল তখনও কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাবের হোসেনের বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছেন। আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, কারো সাথে দেখা করবে না, নির্বাচন নিয়ে কারো সাথে কোনো কথা বলবে না। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না তাদের কোনো বিদেশি শক্তি তাদের ক্ষমতায় বসাতে পারবে।

সাবের হোসেনের সঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গে তিন রাষ্ট্রদূতের গোপন বৈঠক নিয়ে জনপ্রিয় অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখক পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় রাষ্ট্রদূত যাইয়া বৈঠক করে কেমনে? সাবের হোসেন চৌধুরীর জামিনের শর্ত কী ছিল? ওরে জামিন দিছেন কি আওয়ামী লীগ নিয়া দেন-দরবার করার লাইগ্যা? হয় এই রাষ্ট্রদূত গুলারে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগে খেদান, নয়তো সাবের হোসেনরে জেলে ভরেন। কথা ক্লিয়ার।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘কিছু উপদেষ্টা রয়েছেন তাদের জন্য মৃত্যু ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই। পৃথিবীর যে প্রান্তে যাক বাংলাদেশের মানুষ তাদের ধরবে’। গত ৭ অক্টোবর সারজিস আলমের এ বক্তব্যের কয়েক দিন আগে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবছেন’। প্রশ্ন হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া সাহসী নেতাদের মধ্যে হঠাৎ করে ভীতি-আতঙ্ক ধরলো কেন? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা যখন এনসিপি নেতাদের এসব বক্তব্যের রহস্য অনুসন্ধানে তৎপর তখন গণমাধ্যমে খবর বের হলো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন আরাল্ড গুলব্রানসেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস লিনাস রাগনার উইকস ও ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মলার আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। এর আগে ১১ মে সন্ধ্যায় সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের এই গোপন মিশন হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা সাবের হোসেন চৌধুরীকে ‘পরিচ্ছন্ন ইমেজ’ দিয়ে তার নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করা। এর আগে গত এপ্রিল মাসে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছিল ‘সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ঢাকার সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসের নেতৃত্বে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে’। প্রশ্ন হচ্ছে বিদেশি রাষ্ট্্রদূতরা গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন; গোয়েন্দাদের কাজ কি? গোয়েন্দারা কি যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ কি? পররাষ্ট্র উপদেষ্টা কি শুধু বিদেশ সফর আর সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ব্যস্ত? পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন আওয়ামী লীগ নেতা সাবেরের সঙ্গে তিন উপদেষ্টার গোপন বৈঠক নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে নেট দুনিয়ায়। সোশ্যাল মিডিয়ার নেটিজেনরা বলছেন, জুলাই অভ্যুত্থান এবং বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগবিরোধী আন্দোলনে এই পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদের কোনো ভূমিকা ছিল না। পশ্চিমাদের প্রেসক্রিপশনে তিনি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে বসে হাসিনার অলিগার্ক আমলা ও বিভিন্ন দেশে কর্মরত রাষ্ট্রদূতদের চাকরিচ্যুত না করে প্রটেকশন দিচ্ছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা এবং কিছু এইড পাওয়ার জন্য মার্কিনিদের কোনো গোপন এজেন্ডা বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না।

এনসিপির নেতা নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করে বলেছেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে’। প্রশ্ন হচ্ছে কে সেই উপদেষ্টারা? সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা রেজোয়ানা হাসানের নাম। পরিবেশ রক্ষাবিষয়ক এনজিও বেলা’র কর্ণধার ছিলেন রেজোয়ানা হাসান। বহু বছর ধরে বিদেশি টাকায় পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন। সাবের হোসেন চৌধুরী ছিলেন গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী। এ জন্য দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ। এছাড়া বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন এবং মানবাধিকার নিযে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা নরওয়ে, সুইডেন এবং ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতরা সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন। ফলে উপদেষ্টা রেজোয়ানা হাসান, বিদেশি তিন কূটনীতিক এবং সাবের হোসেন চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে জাহির করার চেষ্টায় যোগসূত্র মেলানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়ম কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বিপু পালিয়েছেন। কিন্তু তার রিয়েল এসেট ব্যবসা, গার্মেন্টস ব্যবসা পরিচালনা করছেন রিজওয়ানা হাসানের স্বামী এ বি সিদ্দিকী এবং তার পুত্র আহমেদ জহির সিদ্দিকী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, পরিবেশ উপদেষ্টারা কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেছেন, ‘ভারত প্রত্যাশার কথা প্রকাশ করে বলছে, তারা চায় বাংলাদেশে নির্বাচন হোক। কিন্তু নির্বাচন না হয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পড়লে ভারত সবচেয়ে বেশি খুশি হবে। কারণ তাদের অলিগার্ক হাসিনা দেশছাড়া। যে দেশের শাসনক্ষমতায় দিল্লির পুতুল হাসিনা নেই সে দেশের ভালো দেখতে চাইবে না’। দেশে নির্বাচনী আবহ তৈরি হয়েছে অথচ পশ্চিমা শক্তিগুলো নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। পিআর পদ্ধতি নির্বাচনের দাবি মাঠেমারা যাওয়ায় গণভোটের ফর্মুলা বাজারে ছেড়েছে। পাশাপাশি তারা খুনি হাসিনার আওয়ামী লীগকে ‘রিফাইন’ দেখতে চায়। এ জন্য তারা সাবের হোসেনকে পরিচ্ছন্ন নেতা হিসেবে বেছে নিয়ে তাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে। অথচ সালমান এফ রহমানসহ আরো কয়েকজন শিল্পপতি বর্তমানে কারাগারে। যুগের পর যুগ ধরে দেশের অর্থনীতিতে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন। তিনি ওষুধ রফতানি এবং বিদেশে শেয়ারবাজার নিয়ে গেছেন। তাকেসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ শিল্পপতিদের মুক্তি দেয়া হয়নি; অথচ রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ লুটপাটের সঙ্গে জড়িত সামিটের পৃষ্ঠপোষক সাবের হোসেন চৌধুরীকে ‘পরিচ্ছন্ন’ নেতার সার্টিফিকেট দিচ্ছেন। এক সময় তারা জামায়াতকে ‘মডারেট ইসলামি দল’ সার্টিফিকেট দিয়েছিল। দেশের অর্থনীতি বেহাল দশায়, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনো টলটলায়মান। গত বছরের আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। হাসিনার অপরাধের বিচার চলছে। মানবাধিকার লংঘনের দায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। ফলে হাসিনার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় দলটি তাদের প্রকাশ্য কার্যক্রমে আসতে পারছে না। এমন প্রেক্ষাপটের মধ্যেই সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে তিন বিদেশি রাষ্ট্রদূতের বৈঠকের ঘটনা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, বিদেশিদের রিফাইন আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে। যার জন্য এনসিপি নেতারা ‘উপদেষ্টারা মৃত্যু ছাড়া এক্সটি পাবে না’ মন্তব্য করছে। এ নিয়ে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান এবং বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলনে উপদেষ্টাদের অনেকেই জড়িত ছিল না। তাই তারা পদ- পদবিতে বসে জুলাইয়ের পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারছেন না।

পশ্চিমা তিন দেশের রাষ্ট্রদূতদের গোপনে সাবের হোসেনের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে নবনীতা রায় চৌধুরী বলেন, সাবের হোসেনের সাথে এই বৈঠকে আমি নিশ্চিত যে, পশ্চিমারা চাইছে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণসহ একটি নির্বাচন হোক। জাতিসংঘের গুয়েন লুইস বিএনপির মহাসচিবের সাথে তার বিদায়ী বৈঠকেও তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক। অথচ ভাবুন তো কয়েক মাস আগেই এই জাতিসংঘ বলেছিল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন মানেই নাকি ভোটারদের অংশগ্রহণ। নির্বাচন মানে সব দলকে নির্বাচনে অংশ নিতেই হবে এমন কোনো কথা নয়। এখন ড. ইউনূস ও তার পরিষদবর্গ কোনো রকমের একটি গণভোট বা নির্বাচনের কথা বলে কিভাবে আরও কয়েক বছর থাকা যায় সেই চেষ্টা করছেন। অথচ নাহিদ বলছেন, উপদেষ্টাদের কেউ কেউ আখের গুছিয়ে সেভ এক্সিজিটের পথ খুঁজছেন। অন্যদিকে সারজিস বলছেন, মৃত্যু ছাড়া তাদের কোনো সেভ এক্সজিট নেই। বিদেশি বন্ধুরা বুঝতে পারছেন এই সরকারের অধীনে বড় কোনো বিনিয়োগ করলে তা স্থিতিশীল হবে না। এখন সবাই বুঝতে পারছেন আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে কোনোভাবেই বৈধ হবে না। বিদেশি বন্ধুদের সাথে মিলে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হলো, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের নামে আওয়ামী লীগের বিচার করা শুরু হলো এমন কথা চলছে কিন্তু নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে সেসব দেশি-বিদেশি বন্ধুদের মনে আতঙ্ক বেড়েই চলছে। বিদেশি দেশগুলো বুঝতে পারছে আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন করা হলে তারপর যে সরকারই আসুক না কেন তা দিয়ে কোনো স্থিতিশীল সিদ্ধান্ত বা বাণিজ্যিক চুক্তি করে তা লাভজনক হবে না বা তারা কখনো দেশকে স্থিতিশীল থাকতে দেবে না।

সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্র্কের রাষ্ট্রদূতরা প্রায় তিন ঘণ্টা সাবের হোসেনের গুলশানের বাড়িতে দেখা করেন। অনেকেই বলছে, সেখানে আলোচনা হয়েছে কিভাবে আওয়ামী লীগকে একত্রিত করে শক্তিশালী করে রাজনীতিতে আনা যায়, কিভাবে আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ করানো যায়।