
‘মৃত্যুপুরী’তে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা। রাজনৈতিক বিবাদ, মাটি-বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি এবং আধিপত্য বিস্তারের জেরে সংঘাত-খুনের জনপদে পরিণত হয়েছে এ উপজেলা। কখনো ফিল্মি স্টাইলে দিনদুপুরে গুলি করে, কিংবা গুপ্ত হামলায় হচ্ছে একের পর এক খুন। গত ১৩ মাসে এ জনপদে খুনের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। গুলি ও হামলার শিকার হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন কয়েক শ।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল বলেন, ‘প্রতিনিয়ত সংঘাত হওয়ার কারণে পুলিশের দৃষ্টি সব সময় রাউজানের দিকে থাকছে। বিগত সময়ে খুনের ঘটনায় নেপথ্য হোতাসহ ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খুনের কাজে ব্যবহার করা আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।’
রাউজান উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দাবি করেন, ‘ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ, যুবলীগের কিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসী বিএনপির বিভিন্ন গ্রুপে অনুপ্রবেশ করেছে। তারাই আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ নানান অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ নিয়েই একের পর এক সংঘর্ষ হচ্ছে।’
অভিযোগ থেকে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জুলাই বিপ্লবের পর সংঘাতের জনপদে পরিণত হয়েছে রাউজান উপজেলা। ১৩ মাসে এ উপজেলায় প্রকাশ্যে খুন হয়েছেন ১৫ জন। তাদের মধ্যে ১২ জনই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী। প্রকাশ্যে বন্দুকযুদ্ধ, হামলা-পাল্টা হামলা এ অঞ্চলের নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গুপ্ত হামলায় গুলিবিদ্ধ কিংবা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন কমপক্ষে ৫০০ মানুষ। এসব ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক বিরোধ, বালুমহাল ও মাটি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, ইটভাটা, ইট-বালু সরবরাহ ও বিল ভরাটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্ব। রাউজানের কিছু অংশ পাহাড়ি সীমান্ত এলাকা হওয়ায় কাঠ, মদ ও কখনো অস্ত্র পাচারের রুট হিসেবে রাউজান ব্যবহৃত হয়। এসব ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করেও খুনখারাবি ঘটছে। এর মধ্যে গত ৭ অক্টোবর প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় ব্যবসায়ী আবদুল হাকিমকে। ৬ জুলাই যুবদল নেতা মোহাম্মদ সেলিমকে প্রকাশ্যে স্ত্রী-সন্তানের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। ১৯ এপ্রিল বাগোয়ান ইউনিয়নের গরিব উল্লাহ পাড়ায় মানিক আবদুল্লাহ নামে যুবদলের এক কর্মীকে প্রতিবেশীর বাড়িতে রাতের খাবার খাওয়ার সময় গুলি করে হত্যা করা হয়। ২২ এপ্রিল উপজেলার সদর ইউনিয়নের শমসের নগরের গাজীপাড়ায় মুহাম্মদ ইব্রাহিম নামে এক যুবদলকর্মীকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল বলেন, ব্যবসায়ী হাকিম খুনের ঘটনায় এখনো মামলা দায়ের করা হয়নি। নিহতের পরিবারকে মামলা দায়েরের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।