Image description

জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনো গণভোট রাজি নয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।

বিএনপি মনে করে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে জনসমর্থন নিশ্চিত করতে গণভোটে রাজি হওয়াটা ভুল ছিল। তবে যেহেতু তারা সম্মতি দিয়েছে, তাই এখন চাচ্ছে, যেদিন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেদিনই গণভোট হতে হবে।

বিএনপি নেতাদের অবস্থান হলো, গণভোট অবশ্যই জাতীয় নির্বাচনের দিনে হতে হবে। তা—ও একই ভোটকেন্দ্র, কর্মকর্তা ও ব্যালট বাক্স ব্যবহার করে অনুষ্ঠিত হতে হবে।

অন্যথায় এটি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে এবং দলের ওপর রাজনৈতিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনের আগে গণভোট চায়।

এ ব্যাপারে বিএনপি নেতারা মনে করছেন, জামায়াত ইসলামী গণভোটের ফলাফল বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে এবং নেতিবাচক প্রচারণা চালাতে পারে।

গত সোমবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব ব্যাপারে আলোচনা হয়।

ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিল এমন একাধিক সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন।

গণভোট কীভাবে আসন্ন নির্বাচনে এবং দলের সামগ্রিক কৌশলে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

তারা বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই গণভোটের বিরোধিতা করেছে। কিন্তু দলটি ঐকমত্য কমিশনে প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে। তাই এখন আবার অবস্থান পরিবর্তন করলে জনসমর্থন হারানোর ঝুঁকি তৈরি হবে।

স্থায়ী কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'গণভোট ইস্যুতে বৈঠকে কেউ সন্তুষ্ট ছিলেন না। এটি জামায়াতে ইসলামীর ফাঁদ। আমরা সেই ফাঁদে পা দিয়েছি। ব্যাপারটা বেশ জটিল হয়ে উঠবে।'

সূত্র জানায়, জুলাই সনদ সব দলের ইচ্ছের প্রতিফলন নয়। এটি কেবল কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করছে এবং বৃহত্তর  জাতীয় ঐকমত্যকে উপেক্ষা করছে।

বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, চার মাসেরও কম সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর আগে গণভোট আয়োজন করতে গেলে অতিরিক্ত চাপ তৈরি হবে। কারণ এতে বাড়তি জনবল ও বাজেটের প্রয়োজন হবে।

তারা মনে করছে, এতে সময় ও অর্থ অপচয় হবে এবং জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, 'জামায়াত এই নির্বাচনের আগে গণভোট ব্যবহার করে বাধা সৃষ্টি ও ভোট বিলম্ব করানোর চেষ্টা করছে।'

এর আগে, গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, জুলাই সনদে জনগণের সমর্থন আছে কি না তা গণভোটের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে।

তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দল একসঙ্গে থাকলেই যে পুরো জনগণের প্রতিনিধিত্ব হয়, তা নয়। আমরা যদি জনগণের অনুমোদন নিতে পারি, সেটিই হবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত মতামত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করেন, আসন্ন নির্বাচনের আগে দলীয় ঐক্য বজায় রাখতে হবে। এজন্য যেসব নেতা শাস্তির মুখোমুখি হয়েছেন কিন্তু নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন, তাদের পুনর্বহাল করা উচিত।

বৈঠকে তারা তারেক রহমানের বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের প্রশংসা করেন।

তাদের মতে, তার বক্তব্য ছিল সময়োপযোগী, যৌক্তিক এবং তিনি দলের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন।