
আগামী নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে নিজেদের আত্মবিশ্বাসী বলে দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ সময় পর প্রথমবারের মতো লন্ডনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে ইংরেজিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। সেখানে তারেক রহমান বলেছেন, আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, আমরা জয় পাবো। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে বলেও মনে করেন দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকা এই নেতা। তিনি খুব শিগগিরই দেশে ফেরার কথা জানিয়েছেন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হওয়া বিরোধীদলীয় নেতা তারেক রহমান বলেছেন, তিনি খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। গত বছর সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর তার দল নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে বলেও আশা করছেন তিনি। তারেক রহমান মনে করেন, হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা ছাত্র-জনতার বিপ্লব সম্পূর্ণ করতে স্বচ্ছ ও অবাধ ভোট অনুষ্ঠিত হতে হবে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলছে, নড়বড়ে অর্থনীতি মোকাবিলা করতে হবে পরবর্তী সরকারকে। এ ছাড়া মার্কিন শুল্কের প্রভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বেশ নাজুক অবস্থা আছে। এ ছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ফলে এ অবস্থা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় ত্রয়োদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে বিএনপি জয় পেলে তারেক রহমান পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন জরিপও অবশ্য একই কথা বলছে। একাধিক জরিপের ফলাফল বলছে আগামী নির্বাচনে বিএনপি’র জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। বর্তমানে হাসিনার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী’ দল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তার এই বক্তব্য সমর্থন করেছেন তারেক রহমান। পাশাপাশি অন্যান্য দল, বিশেষ করে ছাত্র নেতৃত্বাধীন নতুন দলের সঙ্গে সরকার গঠন করার বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, আমরা তাদেরকে রাজনীতিতে স্বাগত জানাবো। কেননা, তরুণদের ভবিষ্যৎ আছে।
১৭ কোটি জনগণের দেশটির জন্য নতুন অর্থনৈতিক কর্মসূচি তুলে ধরেন তারেক রহমান। তিনি মনে করেন পোশাক খাতের ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে অ্যামাজন, ইবে এবং আলিবাবার মতো অনলাইন ভিত্তিক প্ল্যাটফরমগুলোর জন্য ‘সরবরাহ কেন্দ্র’ হিসেবে কাজ করতে হবে। ভারতের সঙ্গে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’- নীতি অনুসরণ করার কথা জানিয়েছেন বিএনপি’র এই নেতা। এ ছাড়া হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে ‘একতরফা’ বলেও সমালোচনা করেন তিনি। তারেক রহমান বলেছেন, তিনি দুই দেশের সম্পর্ক নতুন করে ঢেলে সাজাতে চান। লন্ডনের এই সংবাদমাধ্যমটি বলছে, দুর্নীতির মামলায় সাজা এড়াতে ২০০৮ সালে দেশ ছাড়েন ৫৯ বছর বয়সী বিএনপি’র এই নেতা। তার বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তার সরকার প্রতিশোধের চক্র থেকে বের হয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তারেক রহমান জানিয়েছেন, ৫ই আগস্টের পর থেকে অন্তত সাত হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে তার দল। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ দেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, যদি দলটির নেতাকর্মীরা অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে আওয়ামী লীগ কীভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
তারেক রহমান বলেন, যদি তিনি নির্বাচিত হন তাহলে তিনি ইউনূস প্রশাসনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। হাসিনার আমলে লুট হওয়া কোটি কোটি টাকা উদ্ধারে ধারাবাহিকতা ধরে রাখবেন।