
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সিস্টেম অ্যানালিস্ট মোহাম্মদ ইয়াহইয়া তানহারের বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া গোপনে একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পঞ্চম গ্রেডে কর্মরত এই কর্মকর্তা সরকারি আদেশ অনুযায়ী বিদেশ ভ্রমণের প্রয়োজনীয় বিধিবিধান অনুসরণ না করেই বিদেশে গিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরকারি বিধি অনুযায়ী, কোনও কর্মকর্তা ব্যক্তিগত কারণে চিকিৎসা, পারিবারিক বা ধর্মীয় সফরের জন্য বিদেশ যেতে চাইলে ভ্রমণের অন্তত ১৫ দিন আগে ব্যাংকের নির্বাহী প্রধানের প্রত্যয়নসহ নির্ধারিত ফরমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে আবেদন করে সরকারি আদেশ (জিও) গ্রহণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু অভিযোগ অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করেই একাধিকবার বিদেশ সফর করেছেন ইয়াহইয়া তানহার।
একাধিকবার বিদেশ সফর
ব্যাংক সূত্র জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমতি ছাড়া তিনি—২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত কানাডা, ২০২৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারত, ৫ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত থাইল্যান্ড, ১৩ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত ভ্রমণ করেছেন। মাত্র নয় মাসে চারবার বিদেশ সফর করায় বিষয়টি ব্যাংকের অভ্যন্তরে ব্যাপক সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করার উদ্দেশ্যেই এসব সফর করেছেন তিনি।
রাজনৈতিক যোগাযোগ ও অভ্যন্তরীণ প্রভাব
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ঘনিষ্ঠ ছিলেন ইয়াহইয়া তানহার। এ সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে তিনি ব্যাংকের সাবেক এমডি শেখ মো. জামিনুর রহমানের সহযোগিতায় বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন বলেও অভিযোগ আছে।
তদন্তে সত্যতা, তবু ব্যবস্থা নেই
ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উল্লিখিত তারিখগুলোতে ইয়াহইয়া তানহার ব্যাংকে অননুমোদিত অনুপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার দায়ের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) তার পাসপোর্টের তথ্য যাচাই করে বিদেশ ভ্রমণের সত্যতাও নিশ্চিত করেছে। তবু ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
বিভাগ বদল, তবু বিতর্ক বহাল
২০২৪ সালের ১৫ আগস্টের পর ব্যাংকের অভ্যন্তরে গ্রুপিং ও সংঘর্ষের ঘটনায় ইয়াহইয়া তানহারের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় তাকে আইসিটি বিভাগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে কর্মী ব্যবস্থাপনা বিভাগে সংযুক্ত করা হয়।
এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মোহাম্মদ ইয়াহইয়া তানহার বলেন, ‘আমার বৈধ জিও রয়েছে এবং আমি বৈধভাবেই বিদেশে ভ্রমণ করেছি।’