Image description

কেউ যাচ্ছেন ২২ বছর পর, কেউ আবার ১৬ বছর, কেউবা ৭ বছর পর ...। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর ‘স্বাধীন বাংলাদেশে’ যাত্রার হিড়িক পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতাদের মধ্যে। ফেসবুকে সবাইকে  ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে যেতে না পারা   
‘ত্যাগী-নির্যাতিত নেতা’ হিসেবে অবহিত করা হচ্ছে  তাদের একনিষ্ঠ কর্মীদের পক্ষ থেকে। যদিও শেখ হাসিনা ৫ই আগস্ট পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন প্রায় ষোল বছর। 
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যেহেতু দেশের অবস্থা এখন পরিবর্তন হয়েছে তাই দেশের আত্মীয়স্বজন দেখার লক্ষ্যে এবং সেইসঙ্গে সামনে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা, তাই ‘নমিনেশন’ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র  নেতারা দেশমুখী হতে পারেন। 

দীর্ঘদিন ধরেই অভিভাবকহীন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। বর্তমানে অনেক সিনিয়র নেতার নেই কোনো সাংগঠনিক পদ, ‘প্রাক্তন’ পদবি দিয়েই চলছে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। নিউ ইয়র্ক মহানগর উত্তর-দক্ষিণ নামে কমিটি আছে, আছে অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন গ্রুপিং-মনোমালিন্য,  এমনকি কেন্দ্রীয় কোনো নেতা আমেরিকায় এলে তাকে নিয়েও চলে ‘বলয়ভিত্তিক’ কার্যক্রম। শুধু নেই নেতৃত্বের জন্য মূল কমিটি। কেনই বা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র আমেরিকার মতো দেশে বিএনপি’র কমিটি নাই- এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র পক্ষ থেকেও সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা পাননি নেতারা । এ অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বেবি নাজনীন, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র প্রভাবশালী নেতা আব্দুল লতিফ সম্রাট, গিয়াস আহমেদ, জিল্লুর রহমান জিল্লু, মিল্টন ভূঁইয়া, আলহাজ সোলেমান ভূঁইয়া, আবু সাইয়িদ, আহবাব চৌধুরী খোকন, সেলিম রেজা, ওয়ালিউল্লাহ আতিকুর রহমান, জসিমউদ্দীন ভূঁইয়া ভিপি, সাইফুর রহমান হারুন, কাওসার আহমেদসহ বিভিন্ন স্তরের অনেক নেতা দেশে অবস্থান করছেন-কেউ কেউ যাওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন । 

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিএনপি’র অনেক নেতাই নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক। এর মধ্যে আব্দুল লতিফ চৌধুরী সম্রাট নড়াইলে, মিল্টন ভুঁইয়া চট্টগ্রামে, গিয়াস আহমেদ ঢাকায়, জিল্লুর রহমান জিল্লু সিলেটে, আবু সাইয়িদ মৌলভীবাজারে, সেলিম রেজা ঝালকাঠিতে নির্বাচন করার লক্ষ্যে নমিনেশন চাইতে পারেন। 
বিএনপি’র এক নেতা জানান, দেশে এতদিন নেতারা যেতে পারেননি ভয়ে, কারণ দেশে গেলেই মামলা-মোকদ্দমা, জেল জরিমানার ভয় থাকতো। এমনকি নেতাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্যাতন মামলা মোকদ্দমা দেয়া হতো। এখন সু-সময়। সামনে নির্বাচন। তাই দেশপ্রেম আর নমিনেশন দুটোই দেশে ফিরে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

তবে বিদেশি নেতাদের হঠাৎ করে দেশে আসার হিড়িক আর বিমানবন্দরে সংবর্ধনা-গাড়ির মহড়া দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সিলেট বিএনপি’র অন্যতম নেতা সালেহ আহমেদ খসরু। তিনি জানান এটা পরিহাস! জীবনের সব সুখ ভোগকারী এসে যখন বিপ্লবী বক্তব্য দেন তখন গুম খুন হওয়া আত্মা বাতাসে হু হু করে কাঁদে। শেখ হাসিনার আমলে রাজপথে থেকে আন্দোলন করা এই নেতা জানান, দেশনায়ক তারেক রহমান যা নিষেধ করেছেন সেই হোন্ডা মহড়া চলছে, এ যেন একশ’ হোন্ডা দুইশ’ গুণ্ডা। প্রিয়নেতা দেশ টেনে নিয়ে যেতে চাইছেন নিঃশঙ্ক উচ্চতায় আর বিদেশ প্রত্যাগতরা বিএনপিকে জনতার কাঠগড়ায় প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। 

বাংলাদেশে অবস্থান করা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা গিয়াস আহমেদ মানবজমিনকে জানান, দেশের বাইরে থাকলেও সব সময়ই নির্বাচনী এলাকার (ঢাকা-১ এর) মানুষের পাশে ছিলেন। সমপ্রতি দেশে আসার পর বিভিন্ন পক্ষ থেকে নির্বাচন করার জন্য অনুরোধ করছেন। 
আরেক প্রভাবশালী নেতা জিল্লুর রহমান জিল্লু জানান, ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকেই তিনি দেশে যেতে পারেননি, ডিজিএফআই’র তালিকাভুক্ত ছিলেন। তাকে হুমকিও দেয়া হয়েছিল। তাই বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামও দেশে যেতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু আমেরিকা থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, আন্দোলন করেছেন, বহির্বিশ্বে জনমত সৃষ্টি করতে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছেন  কিন্তু নমিনেশনের বিষয়ে এখনোই কোনো মন্তব্য করতে চান না। তবে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র এই  সাবেক সাধারণ সম্পাদক মানবজমিনকে জানান, নির্বাচনী সংস্কারের যে প্রক্রিয়া চলছে তা সম্পূর্ণ  হওয়ার পরই নির্ভর করবে একজন প্রবাসী হিসেবে তার জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ।