Image description

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ থেকে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৬৯ জন কর্মী বিদেশ গেছেন। এর মধ্যে মাত্র ৬১ হাজার ১৫৮ জন নারী কর্মী বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে গেছেন। অর্থাৎ ২০২৪ সালে বিদেশ যাওয়া মূল জনশক্তির মাত্র ৬.৪ শতাংশ গেছেন নারীকর্মী।

বিএমইটির তথ্য বলছে, ২০১৪ সাল থেকে কভিডকালীন বাদ দিলে গত ১০ বছরের যত নারী কর্মী বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন তার মধ্যে গত বছর সর্বনিম্ন রেকর্ড নারী কর্মী বিদেশে কর্মের উদ্দেশ্যে গেছেন। এমনকি গত বছর যাওয়া নারী কর্মীর সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২০.৭ শতাংশ ও ২০২২ সালের তুলনায় ৪২ শতাংশ কমেছে।

বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৭৬ হাজার ১০৮ জন ও ২০২২ সালে এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৬৬ জন নারী কর্মী বিদেশে কাজ করতে গেছেন। এ ছাড়া ২০১৪ সালে ৭৬ হাজার সাতজন, ২০১৫ সালে এক লাখ তিন হাজার ৭১৮, ২০১৬ সালে এক লাখ ১৮ হাজার ৮৮ জন, ২০১৭ সালে এক লাখ ২১ হাজার ৯২৫ জন, ২০১৮ সালে এক লাখ এক হাজার ৬৯৫ জন, ২০১৯ সালে এক লাখ চার হাজার ৭৮৬ জন ও ২০২১ সালে ৮০ হাজার ১৪৩ জন নারী কর্মী বিদেশ গিয়েছেন।

বিদেশে নারী অভিবাসন কমার পেছনে শোভন কর্মক্ষেত্রের অনিশ্চয়তা, শারীরিক-মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়ে ফিরে আসা, আত্মহত্যা, খুনের শিকার হওয়া, অদক্ষতা ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর অনিচ্ছাকে দায়ী করছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।

তবে অভিযোগের পাশাপশি দক্ষতার কারণেও নারীকর্মী কমছে বলে জানান তৃণমূল অভিবাসীদের সংগঠন অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, নারীকর্মী কমার পেছনে প্রথম কারণ হচ্ছে, আমরা আরব দেশগুলোতে শুধু গৃহকর্মী হিসেবে নারীকর্মী পাঠাই। এই গৃহকর্মীদের যে দক্ষতার কথা বলি, সেই দক্ষতার জায়গা থেকে তাদের দক্ষতা অন্য দেশের কর্মীদের চেয়ে কম। এর ফলে এখন আরব দেশগুলো নতুন দেশ হিসেবে আফ্রিকার কিছু দেশ থেকে গৃহকর্মী নিচ্ছে।

ভোগান্তিতে নারীকর্মীরা

ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাসিন্দা রুনু বেগম। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কাজের উদ্দেশ্যে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে গৃহকর্মীর ভিসায় সৌদি আরব যান তিনি। কিন্তু সেখানে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে সেপ্টেম্বর মাসেই দেশে ফেরত আসতে হয় তাঁকে। ফেরত আসার সময় কোনো অর্থ তো নিয়ে আসতে পারেননি, উল্টো অসুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসেন। কালের কণ্ঠকে রুনু বলেন, আমি যে বাসায় কাজ করতে গিয়েছিলাম তারা প্রায় আমাকে মারত।

বেতন চাইলেও  মারত। বলত, কিসের বেতন। তোকে টাকা দিয়ে আনছি। এখন আবার কিসের বেতন। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া দিত না। প্রচুর নির্যাতন করত। একদিন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারাই। তখন ওরা আমাকে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। পরে লোকজন আমাকে উদ্ধার করে দূতাবাসে দিয়ে আসে। সেখানে দুই মাস থাকার পর দূতাবাস থেকে দেশে পাঠিয়ে দেয়।

একই ভোগান্তির কথা জানান মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার বসিন্দা আসমা বেগম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে গৃহকর্মী হিসেবে তিনি সৌদি আরব পাড়ি দেন। কিন্তু আট মাসের মধ্যে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন আসমা বেগম। কালের কণ্ঠকে আসমা বেগম বলেন, ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া দিত না। প্রচুর পরিমাণে কষ্ট করতে হতো। চুরির অভিযোগ করে মারধর করত। কান্নাকাটি করলেও থামত না। মারতেই থাকত। পরে আর না পেরে পালিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে সৌদি পুলিশ উদ্ধার করে কিছুদিন জেলে রাখে। এরপর দূতাবাসের মাধ্যমে দেশে পাঠিয়ে দেয়। বেতনও ঠিকমতো পাইনি। পুরো খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।

তৃণমূল অভিবাসীদের সংগঠন অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারপারসন শাকিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের নারীকর্মী সংখ্যা বাড়াতে হলে গৃহকর্মী সেক্টরের বাইরে নারীদের নিয়ে আসতে হবে। অন্যান্য যে সেক্টর রয়েছে সে সেক্টরগুলোতে কিভাবে নারীকর্মী যেতে পারে তার কৌশল খুঁজে বের করা, নারীদের সেই সেক্টরের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। এটাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ করতে হবে।