Image description
 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার ফেরানোর যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের দ্রুতই আসন ছাড়ের সিদ্ধান্ত জানাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ইতোমধ্যে দলগুলোর কাছে তালিকা চেয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

সূত্র জানিয়েছে, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা প্রায় ৫০টি দল যে তালিকা দেবে সেখান থেকে যারা ভোটে জিতে আসতে পারে এমন নেতাদের আসন ছাড় দেওয়া হবে।

 

মিত্র দলগুলোর জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, বিএনপি এরই মধ্যে তাদের কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম চেয়েছে। দলগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিরা প্রার্থীদের নামের তালিকা এখনো প্রস্তুত করেনি। ছয় দলের সমন্বয়ে গঠিত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মিত্র জোট গণতন্ত্র মঞ্চ এ বিষয়ে বৈঠক করেছে। সেখানে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেনÑ আগামী ৪ অক্টোবরের মধ্য তাদের জোটের শরিক দলগুলোর তালিকার প্রাথমিক বাছাই হবে। আর ১২ দল ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এখনো প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করেনি।

বিএনপি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা জানান, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলো তাদের তালিকা দিলে তা যাচাই-বাছাই করা হবে। প্রার্থীদের এলাকায় জনপ্রিয়তা, সাধারণ মানুষ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা আছেÑ সেসব বিবেচনা রেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

নেওয়া হবে। এই লক্ষ্যে চলতি সপ্তাহ থেকে ফের দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। দলটি চূড়ান্তভাবে সমমনাদের চাহিদা ও মনোভাব বুঝতে চাইছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিনের মিত্র বা সমমনা দলগুলোকে ২৫ থেকে ৩০টি আসনে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক বিএনপি। আসনের ব্যাপারে নিশ্চিত না করলেও ছোট দলের নেতাদের নিয়ে ভাবছে তারা। এসব দলের নেতাদের বিএনপির সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আবার অনেকে লাভ-ক্ষতির সমীকরণে এখনই অবস্থান পরিষ্কার করছে না।

প্রসঙ্গত, বিগত সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির সঙ্গে থেকে আন্দোলনে ছিল গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি । এছাড়া সমমনা দলের মধ্যে কর্নেল অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ববি হাজ্জাজের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম), ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের বাংলাদেশে জাতীয় পার্টি (বিজেপি), নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদ, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) মাঠে ছিল।

এদিকে ৫ আগস্টের পরে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর ৬ জনকে নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ চালাতে নির্দেশনায় দেয় বিএনপি। ওই ছয় নেতা হলেন, আ স ম আবদুর রব লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর), মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া-৪ (শিবগঞ্জ), জোনায়েদ সাকি (ঢাকা-১২ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬), নুরুল হক নুর পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা), রাশেদ খান ঝিনাইদহ-২ (সদর ও হরিণাকুণ্ডু), এহসানুল হুদা কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসন। এছাড়া আরো একাধিক নেতাও দাবি করেছেন তাদেরও এলাকায় নির্বাচনি প্রচারণা করতে নির্দেশনা দিয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, যারা দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে মাঠে ছিল তাদের মূল্যায়ন করা হবে। সমমনাদের আসন বণ্টন এখনো চূড়ান্ত না হলেও বিষয়টি নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা চলছে।

জানা গেছে, সমমনা দল এলডিপিকে দুটি আসন ছাড়তে পারে বিএনপি। এর মধ্য কুমিল্লা-৭ আসনে দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ ও চট্টগ্রাম-১৪ থেকে কর্নেল অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক সানি নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছেন।

৫ আগস্টের পর নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ চালাতে বিএনপি নির্দেশনায় গণঅধিকার পরিষদকে দুটি আসনে ছাড় দিতে পারে।

ইতোমধ্যে গণফোরাম বিএনপির কাছে ১৬ আসনের একটি তালিকা জমা দিয়েছে বলে আমার দেশকে নিশ্চিত করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী। তিনি বলেন, বিএনপিকে আমরা দলের পক্ষ থেকে ১৬টি আসন চেয়ে প্রার্থী তালিকা জমা দিয়েছি। তিনি আরো জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে ঢাকা-৬ থেকে নির্বাচন করেছেন। আগামী নির্বাচনেও এই আসন থেকে ভোটে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট এখনো বিএনপির কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কোনো তালিকা দেয়নি। জোটের আহ্বায়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নড়াইল-২ আসনে ভোট করতে পারেন বলে জানা গেছে।

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) পক্ষ থেকে বিএনপিকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা দেওয়া হয়েছে। তবে কতটি আসনের জন্য তালিকা দেওয়া হয়েছে এই বিষয়টি না জানালেও দলটির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ আমার দেশকে জানান, ঢাকা-১৩ থেকে তিনি ও তার দলের মহাসচিব মোমিনুল আমিন রাজবাড়ি-২ থেকে নির্বাচনি গণসংযোগের কাজ শুরু করেছেন।

বিএনপির সঙ্গে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা ১২ দলীয় জোট থেকে এখনো বিএনপিকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা দেওয়া হয়নি। জোটপ্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার আমার দেশকে বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। এই বিষয় নিয়ে আমাদের জোটের মধ্যে আলোচনা চলছে। এখনো কোনো তালিকা বিএনপিকে আমরা দিইনি। তবে ইতোমধ্যে জোটের শরিকদের মধ্যে পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার ও কুষ্টিয়া-২ আসনে দলটির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন। বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম লক্ষ্মীপুর-১ আসন ও কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে রয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) পাঁচটি আসন চেয়ে বিএনপির কাছে তালিকা দিয়েছে। এর মধ্যে দলের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থ ঢাকা-১৭ এবং দলটির মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদ ঢাকা-৫ আসনে নির্বাচনি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

গণতন্ত্র মঞ্চ এখনো বিএনপিকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা দেয়নি। জোটটি জানিয়েছে, আগামী ৪ অক্টোবরের মধ্যে প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করবে তারা। তারপর বিএনপির কাছে তালিকা দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, ‘এ নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত হচ্ছেÑ আগামী ৪ অক্টোবরের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা প্রাথমিক বাছাই করবে। তারপর তালিকা চূড়ান্ত হলে ওই তালিকা বিএনপির কাছে জমা দেওয়া হবে।

তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব অসুস্থ থাকায় তার স্ত্রী তানিয়া রব লক্ষ্মীপুর-৪ থেকে নির্বাচন করবেন। ইতোমধ্যে তিনি এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

বগুড়া-৪ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নির্বাচনি গণসংযোগ চালানোর জন্য ৫ আগস্টের পর চিঠি দেয় বিএনপি। একই সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিকে চিঠি দেওয়া হয়। আর ঢাকা-৮ আসনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক নির্বাচন করতে চান বলে জানা গেছে। এছাড়া পিরোজপুর-২ বা ঝালকাঠি-১ আসনের যে কোনো একটি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান নির্বাচন করতে চান বলে আমার দেশকে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আমার দেশকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল তাদের প্রত্যেককে আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জানিয়েছেন, সবাইকে নিয়ে আগামীতে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। এই লক্ষ্যে আমরা আমাদের শরিক দলগুলোর কাছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চেয়েছি। তারা তালিকা জমা দিলে তা যাচাই-বাছাই শেষে বিএনপি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।