
জাতীয় পার্টির (জাপা) নির্বাচনী প্রতীক লাঙল নিয়ে আবার টানাটানি শুরু হয়েছে। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাপাও লাঙলের দাবি জানিয়েছে। তার দাবি, কাউন্সিলে নির্বাচিত হওয়ায় তিনিই বৈধ নেতা। তাই জি এম কাদের নয়, তার নেতৃত্বাধীন জাপার লাঙল প্রতীক পাবে।
শনিবার গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেছেন। যদিও জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি এ দাবি নাকচ করেছে। এই জাপার মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি সমকালকে বলেছেন, জি এম কাদের কাউন্সিলে নির্বাচিত বৈধ চেয়ারম্যান। পরবর্তী কাউন্সিল পর্যন্ত তিনিই চেয়ারম্যান। তিনি ছাড়া অন্য কেউ কাউন্সিল ডাকতে পারেন না। ফলে অন্য কেউ কাউন্সিল করলেও, তা অবৈধ। তাই লাঙল জি এম কাদেরেরই রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছিলেন, 'জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের দাবিদার একাধিক, মালিক কে তা খুঁজে পাচ্ছি না'। জাতীয় পার্টি নামে ছয়টি দল সংক্রিয় রয়েছে। তিনটি দল লাঙল দাবি করছে।
লাঙল নিয়ে অতীতেও লড়াই হয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরকারে থাকা না থাকা প্রশ্নে ১৯৯৯ সালে ভাঙে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টি (জেপি) গঠন করা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু লাঙল প্রতীক দাবি করেন। তবে আদালতের রায়ে লাঙল এরশাদেরই রয়ে যায়।
২০২৩ সালের সংসদের উপনির্বাচনের সময়ে নিজের মনোনীত প্রার্থীকে লাঙল প্রতীক বরাদ্দ দিতে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। পরের বছরের মার্চে কাউন্সিল করে তার নেতৃত্বে আরেকটি জাতীয় পার্টি গঠিত হয়।
গত আগস্টে আনিসুল ইসলামের নেতৃত্বে জাপায়, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মুজিবুল হক চুন্নুসহ অনেকেই জি এম কাদেরকে ছেড়ে যোগ দিয়েছেন।
শনিবার সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম বলেছেন, গঠনতন্ত্র এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী ৯ আগস্ট দলের কাউন্সিল হয়েছে। এতে আমি চেয়ারম্যান এবং রুহুল আমিন হাওলাদার মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিলের পর তা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে সবরকম নথি দিয়েছিল। নতুন কমিটি গঠনের পর জি এম কাদের আর কোনভাবে নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পরিচয় দিতে পারে না।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে চারটি নির্বাচনে সমঝোতা করে অংশ নিয়ে ফ্যাসিবাদের দোসর তকমা পেয়েছে জাতীয় পার্টি। আওয়ামী লীগের শাসনমালে গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে পরিচিতি জাপাকে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি দল।
বিরোধী দলের আসনে বসেও দশম সংসদে শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী ছিলেন আনিসুল ইসলাম। রাতের ভোটখ্যাত ২০১৮ এবং ডামি নির্বাচন খ্যাত ২০২৪ সালের নির্বাচনে এমপি হয়েছিলেন তিনি এবং তার অনুসারী। কিন্তু ৫ আগস্টের পর তারা জি এম কাদেরকে পরিত্যাগ করেন।
লাঙল দাবি করে আনিসুল ইসলাম বলেন, প্রতীকের মালিক কোন ব্যক্তি নয়। আইন ও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আমাদের জাতীয় পার্টিই বৈধ। তাই আমরাই লাঙ্গল প্রতীকের একমাত্র দাবিদার। কিছু পক্ষ নির্বাচন কমিশনে ভিন্ন ভিন্ন আবেদন দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
জি এম কাদেরের সমালোচনা করে আনিসুল ইসলাম বলেন, তিনি এক সময় শেখ হাসিনার ফাঁসি চান। আবার বলেন আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন বৈধ হবে না। এমন দ্বৈতনীতির লোক রাজনীতিতে কতটা প্রাসঙ্গিক তা ভাববার সময় এসেছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য নাকচ করে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই লাঙ্গলের বৈধ দাবিদার একমাত্র আমরাই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাপা (আ-হা) জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।