
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অন্তত ১৫০টি আসন চিহ্নিত করেছে, যেখানে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে শক্তিশালী প্রার্থী মনোনয়নে সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
তাদের দাবি, অভ্যন্তরীণ জরিপ ও তৃণমূল নেতাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাকি ১৫০ আসনে একজন করে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
বিএনপির এক নেতা বলেন, '১৫০ আসনে যোগ্য প্রার্থী নেই, প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে জেতার সম্ভাবনাও কম। যদি বিরোধীরা বিএনপির দুর্বল প্রার্থীর সুযোগ নেয়, তাহলে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'
মনোনয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্তরা প্রার্থী সংকটের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে—সম্ভাব্য প্রার্থীদের মৃত্যু, জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া, বয়সজনিত সমস্যা ও কিছু আসনে অতিরিক্ত প্রার্থী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এসব আসনে বিএনপি ১০০ জনেরও বেশি নতুন প্রার্থীর বিষয়ে বিবেচনা করছে।
এক বিএনপি নেতা জানান, এই সম্ভাব্য নতুন প্রার্থীদের বাছাই করা হচ্ছে সততা, ত্যাগ, তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রিয়তা ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির জন্য।
২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সহিংসতার কারণে সমাবেশ করা সম্ভব হয়নি। সেই ঘটনার পর যারা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন তাদেরকে প্রার্থী হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলে জানান এক নেতা।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার টিম প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেন। ইতোমধ্যে পাঁচটি অভ্যন্তরীণ জরিপ সম্পন্ন হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিএনপি যেসব আসনে শক্ত অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করছে, এমন ১৫০ আসনে তারেক রহমান ইতোমধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন। তাদের অনেকেই ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জ্যেষ্ঠ নেতারা শত শত মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে বৈঠক করছেন। তাদের লক্ষ্য হলো, নির্বাচনে দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এড়ানো।
যেসব আসনে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি, সেগুলো দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যকে। আর পরামর্শ দিতে সহায়তা করছেন সাংগঠনিক সম্পাদকরা। তারেক রহমানও ভিডিও কলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, '১০০ থেকে ১২০টি আসনে তিন-চারজন করে শক্তিশালী প্রার্থী মনোনয়ন চাইছেন।'
দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'এখন দল ভাবছে, মনোনয়ন দেওয়ার আগেই প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করা ভালো। কারণ, দল আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দিয়ে দেওয়ার পর নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এ কারণেই দল এখন থেকেই তাদের সঙ্গে আলোচনা করছে।'
কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের বলেছেন, তারা দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন। তবে একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রার্থী বলেন, যদি 'ভুল ব্যক্তি'কে মনোনীত করা হয়, তাহলে তৃণমূল কর্মীরা তাকে সমর্থন দেবে না।
চাঁদপুর বিএনপির সহ-সভাপতি এম এ শুক্কুর পাটোয়ারী চাঁদপুর-২ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইছেন। তিনিসহ আরও পাঁচজন স্থানীয় নেতা গত ২২ সেপ্টেম্বর বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'আমাদের বলা হয়েছে, দল যাকে মনোনীত করবে তাকেই সমর্থন করতে হবে, তার হয়েই নির্বাচনে কাজ করতে হবে।'
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরিশাল-৫ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী মুহাম্মদ রহমতুল্লাহও একই দিন জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি বলেন, 'জ্যেষ্ঠ নেতাদের আশ্বস্ত করেছি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব এবং দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেউ যাব না।'
দলীয় কর্মকর্তারা বলেন, অক্টোবরের শেষে বিএনপি প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে চায়।
বিএনপি তার মিত্রদেরও প্রার্থী তালিকা জমা দিতে বলেছে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে যারা বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল, তাদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা হবে।
তিন দিন আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জোটের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তালিকা চেয়েছেন। ১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র শহীদুল হোসেন বলেন, 'দু-একদিনের মধ্যেই নাম পাঠানো হবে।'
বিএনপির নেতারা বলেন, তারা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এবং কয়েকটি ইসলামী ও বামঘেঁষা সংগঠনের সঙ্গেও আলোচনা করছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত এসব আলোচনা চলতে পারে।
তারা বলেন, এবার আসন ভাগাভাগিতে বিএনপি আরও সতর্ক থাকবে। কারণ, সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী আর অন্য দলের প্রতীক—যেমন: বিএনপির ধানের শীষ—ব্যবহার করতে পারবেন না।
এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি জানে যে তাদের সঙ্গে জোটে থাকা দলগুলোর নেতাদের তৃণমূলে সমর্থন নেই। তারপরও দল পূর্ণাঙ্গ তালিকা চাইছে, যাতে ঐক্যের ভাঙন ঠেকানো যায় এবং আলোচনায় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা যায়।