Image description
৯ দলের বৈঠক

জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানা সমীকরণ। ভোটের মাঠে অবস্থান তৈরি করতে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো চালাচ্ছে তৎপরতা। ইতিমধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ, এনসিপিসহ ৯টি রাজনৈতিক দল নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছে। নতুন জোট গঠন নিয়ে আলোচনা করেছে তারা। যদিও এই জোট গঠনের প্রক্রিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সামনে এনিয়ে আরও বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলগুলো। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া এবং সব ইস্যুতে ঐকমত্য হলেই জোটের ঘোষণা হতে পারে। সে কারণে এনিয়ে এখনই তারা স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তবে এই ৯টি দলের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের দিন জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এই ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াত এবং বামদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবে তারা। যদিও সংস্কার প্রশ্নে বিএনপি এবং জামায়াতের দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে। রয়েছে মতভিন্নতা। তাদের মিত্র দল এবং জোটের অবস্থানও একই। নির্বাচনকে সামনে রেখে বড় দু’টি দলের মধ্যে মতানৈক্য কাটিয়ে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফেরাতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এ ছাড়া আলাদা জোট গঠনের প্রক্রিয়া নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর হাতিরপুলের একটি রেস্তরাঁয় ৯টি দলের এই বৈঠক হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক হয়। বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় দল- নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ভাসানী জনশক্তি পার্টির নেতারা অংশ নেন। মঞ্চের বাইরে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) এবং গণঅধিকার পরিষদের নেতারাও অংশ নেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে জুলাই সনদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সংস্কার নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মতবিরোধের বিষয়টি আলোচনা হয়। এই মতপার্থক্য দূর করতে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বৈঠকে।

তবে বৈঠকে উপস্থিত দুটি দলের শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, নতুন জোট গঠন নিয়ে বৈঠকে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। জোট গঠনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে ৯ দলের বাইরে আরও কিছু দল যোগ দিতে পারে। 

বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার জন্য তিন নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু এবং গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান। অন্যদিকে সাংবিধানিক ও আইনগত বিষয়েও তিন নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই নেতা হলেন- রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ূম, এনসিপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন ও এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সানী আবদুল হক। সূত্র জানিয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিএনপি ও জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ হবে। তারপরে এবিষয়ে আলোচনা হবে। এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক দিন-তারিখ ঠিক হয়নি। 
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক মানবজমিনকে বলেন, জুলাই সনদ কীভাবে কার্যকর করা যাবে, বিভিন্ন প্রস্তাব যেগুলো আছে-সেগুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এই বিষয়ে আমরা এই ৯টি দল একটা জায়গায় আসতে পারি কিনা। একইসঙ্গে বিএনপি এবং বামদলসহ ইসলামী ঘরানায় দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু মানবজমিনকে বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চসহ ৯টি দল উদ্যোগ নিয়েছি, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করবো। জুলাই সনদকে কীভাবে আইনি ভিত্তি দেয়া যায়, এটা নিয়ে আমরা চেষ্টা করছি। বিএনপি, জাসদ, বামদল এবং গণফোরামসহ আরও বিভিন্ন দলের সঙ্গে এবিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। 

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু মানবজমিনকে বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সবাই একমত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বিএনপি এবং জামায়াতসহ অন্যান্য  রাজনৈতিক দলগুলোও যাতে একই জায়গায় একমত হতে পারে, সেটা নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আর আমরা বলেছি, গণভোট আগেও হতে পারে এবং নির্বাচনের দিনও হতে পারে। গণভোট হলেই হয়, অসুবিধা নাই।  

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান মানবজমিনকে বলেন, বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। এই মতবিরোধ কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, সেজন্য ৯টি দল আমরা বসেছিলাম। আমরা সবাই একমতে এসেছি, এই পয়েন্টে বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে বসে কীভাবে সবাই ঐকমত্যে আসা যায়।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাভেদ রাসিন মানবজমিনকে বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে আলোচনায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কীভাবে দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনা যায়, সে বিষয়গুলো নিয়ে মূলত আলোচনা হয়েছে।