
দেশ যখন নির্বাচনমুখী, তখন সংসদের উভয় কক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনধিত্ব) পদ্ধতি চালু এবং জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামিসহ সাতটি রাজনৈতিক দল গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন শুরু করেছে। তবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এজেন্ডায় না থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করে পিআর ইস্যুতে দলগুলোর রাজপথে নামার বিষয়টিকে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছে বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতমুখী এমন অবস্থানে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়া না হওয়ার নানা গুঞ্জন ডালপালা ছড়াতে শুরু করেছে। সর্বশেষ গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও বলেছেন, কিছু শক্তি এখনো নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে। তিনি অবশ্য আশাবাদ ব্যক্ত করে একই সময় বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে অনেকের মুখ থেকে শোনা যাচ্ছে, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হলে দেশে বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে। অর্থনীতিবিদ, রাজনীতি বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীদের অনেকের মতে, যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সর্বত্র অস্থিরতা তৈরি হবে। তৃতীয় পক্ষ এবং পতিত ফ্যাসিবাদ আবারও সুযোগ নেবে। নতুন করে উত্থান ঘটতে পারে চরমপন্থার, যা কারও জন্যই কাম্য হতে পারে না। তাদের মতে, অতীতের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। এমনিতেই বিভিন্ন প্রতিকূলতায় বর্তমানে দেশে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ না আসায় নতুন কর্মসংস্থানও ব্যাহত হচ্ছে। অনেক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিও বন্ধ হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতি খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই। তা ছাড়া দেশে এক ধরনের সামাজিক নৈরাজ্য চলছে, যা আরও বিস্তৃত হতে পারে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক মতভিন্নতা কিংবা ভূরাজনীতিগত খেলায় নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হলে কিংবা নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়লে দেশ আরও গভীর সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করেন তারা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হলে সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দল, ভোটার সবার মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি-হতাশা তৈরি হবে। বিদ্যমান সামাজিক নৈরাজ্য তখন সংঘাত-সংঘর্ষের রাজনৈতিক নৈরাজ্যে পর্যবসিত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়বে। দেশে উগ্রপন্থারও উত্থান ঘটতে পারে। আর তখন সেই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি, যা গণতন্ত্রকামী শক্তি কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। তাই সংকট থেকে উত্তরণে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন প্রয়োজন।
নির্বাচন ইস্যুতে এমন প্রেক্ষাপটের মধ্যে কয়েকটি দাবিতে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দলের আন্দোলন গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ সময়ে এ ধরনের কর্মসূচির প্রয়োজন ছিল না। কারণ আলোচনা এখনও শেষ হয়নি। আলোচনা চলা অবস্থায় এই ধরনের কর্মসূচি সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে শুভ নয়। আলোচনা চলা অবস্থায় এই ধরনের কর্মসূচির মানে অহেতুক চাপ সৃষ্টি করা।’
তিনি বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমেই সব কিছুর সমাধান করতে চাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, এটা আলোচনার মাধ্যমেই শেষ হবে।’
তবে আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় সংস্কার বাস্তবায়ন প্রশ্নে কেন মাঠের কর্মসূচি দেওয়া হলো, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘আলোচনার টেবিলে যাচ্ছি কিন্তু সে আলোচনায় সফলতার মুখ দেখছি না। মনে হয় কোনো চাপের মধ্যে পড়ে সরকার একটি শুভংকরের ফাঁকির দিকে যাচ্ছে।’ গতকাল বিকেলে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এ কথা বলেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, এই আন্দোলন জনগণের আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরার জন্য।
এই আন্দোলনকে ‘রাজনীতির অংশ’ উল্লেখ করে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিয়ে সেটার ভিত্তিতেই নির্বাচন হতে হবে। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কাঠামো সংশোধনের জন্য এত রক্ত দেওয়া হলো। এত আলোচনা হলো। এখন যদি একটি দল বলে সংস্কার পরে হবে, তাহলে এত পরিশ্রম করানো হলো কেন?’
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালবেলাকে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিদায় হলেও দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান হচ্ছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে এখন সাম্প্রদায়িকতা-উগ্র উন্মাদনা শুরু হয়ে গেছে, যেটার মধ্য দিয়ে মব তৈরি হয়। আমরা যদি গণতন্ত্রের পথে রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে না রাখতে পারি, তাহলে সাম্প্রদায়িকতা হবে ফ্যাসিবাদের চেয়ে দ্বিগুণ কঠিন এবং জনজীবন ধ্বংসের শেষ মাথায় নিয়ে যাবে।’
সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হলে জাতীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তাও হুমকির মধ্যে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘দেশে যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত না হয়, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হয়, তাহলে দেশে একটা সাংবিধানিক শূন্যতা বিরাজ করতে পারে। সেই শূন্যতার মধ্যে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হবে এবং ঐক্য বিনষ্ট হলে সেটার সূত্র ধরে পতিত ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে। তাদের হাত ধরে আঞ্চলিক শক্তিগুলো এখানে জড়িত হয়ে যেতে পারে পরস্পরের বিরুদ্ধে। একটি বৈশ্বিক শক্তিও সেই সুযোগটা নিতে পারে।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই আশঙ্কাগুলো প্রকাশ করেই বলেছি যে, যদি আমরা জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে স্থিতিশীল রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারি, তাহলে এই আশঙ্কাগুলো একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না। শুধু জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে তা নয়, এখানে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত হয়ে যেতে পারে।’
ঘোষিত সময়ে নির্বাচন না হলে তা বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী সমমনা কোনো দলের জন্যই সুখকর হবে না বলে মনে করছেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘যদি নির্বাচন না হয় তাহলে পাওয়ার (রাষ্ট্র ক্ষমতা) কারা নেবে? যারা পাওয়ার নেবে, সেটা আমাদের জন্য সুখকর হবে না। বিএনপির জন্যও না, আমাদের জন্যও না। কারও জন্যই সুখকর হবে না। সুতরাং আমরা মনে করি, নির্বাচন হতে হবে। তবে তার আগে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। এটা বিলম্ব করা যাবে না।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল কালবেলাকে বলেন, ‘বঙ্গোপসাগর এবং ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক একটা অবস্থান আছে। সেখানে শ্রীলঙ্কা দিয়ে শুরু হলো, বাংলাদেশ মাঝখানে, পরবর্তী সময়ে এসে নেপাল; এখন আবার ভারতে একটা অশান্ত পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। এদিকে আবার চীনের সঙ্গে ভারতের যে চিরবৈরিতা, সেটাও অনেকটা উল্টোদিকের গতি পেয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের যে সম্পর্কটা, সেখানটায় এটা কীভাবে ব্যালেন্স হবে বা কী হবে- সবকিছু মিলিয়ে আমরাও কিন্তু এই ভূরাজনীতির মধ্যে পড়েছি।’
তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘নির্বাচন সঠিক সময়ে না হলে দেশে উগ্রপন্থারও উত্থান ঘটতে পারে। মিশরের বিপ্লবকে সামনে রাখলে দেখব, সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। অন্যান্য অনেক জায়গায়ও ঘটেছে। এখানেও তেমনটা আশঙ্কা করা তো অমূলক কিছু নয়।’
অংশীজনের মধ্যে বিরোধের সুযোগে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির ফিরে আসার জমিন তৈরি হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, যারা আন্দোলন বা অভ্যুত্থানে প্রকাশ্যে, গোপনে বা গুপ্তভাবে ছিল, তাদের কেউ কেউ নানা এজেন্ডা নিয়ে হাজির হচ্ছে। নির্বাচনে যাওয়ার শর্ত হিসেবে জামায়াতে ইসলামী বা ইসলামী ধারার কয়েকটি দল মিলে এখন যদি এগুলো সামনে নিয়ে এসে চাপ দিতে থাকে, তাহলে তো এটা বাস্তবে একটা সংকট। নির্বাচন তথা নির্বাচিত সরকার যখন অনিশ্চিত হয়ে যাবে, তখন নানা মাত্রায় অবিশ্বাস-সন্দেহ বাড়বে। দলগুলোর মধ্যেও সন্দেহ-অবিশ্বাস বাড়বে, সরকারের সঙ্গে অন্য দলগুলোর দূরত্ব বাড়বে। আর দেশবাসী যাদেরকে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা থেকে উচ্ছেদ করে হটিয়েছে, তারা তো এক বছর ধরে এই রকম একটা পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করছে। সে ক্ষেত্রে তারা তাদের নানা ধরনের ছক, নাশকতা, বহু ধরনের অপতৎপরতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। অংশীজনের মধ্যে যখন বিরোধ হয়, তখন তৃতীয় পক্ষ সব সময় এর সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। ফলে যারা এখন নানা শর্ত দিচ্ছেন, তারা প্রকারান্তরে পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির ফিরে আসার জমিনটা তৈরি করে দিচ্ছেন কি না, সেই সন্দেহ-আশঙ্কাটা বাড়ছে। এ থেকে উত্তরণের একটাই পথ, তা হলো সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যদি দৃঢ় থাকে, তাহলে এই সংকট উত্তরণ সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে কিছু জিনিস ভালো যাচ্ছে, আবার কিছু জিনিস খারাপ যাচ্ছে। তবে রাজনৈতিক সরকার না থাকার কারণে আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত আটকে আছে। যেমন- প্রাইভেট সেক্টর বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে না, বিনিয়োগে খরা যাচ্ছে। তারা কোনো চুক্তিতে আসতে চাচ্ছে না কিংবা বড় রকমের বিনিয়োগ নিয়ে আসতে চাচ্ছে না। বিদেশি বিনিয়োগও আসছে না। তারাও চাচ্ছে একটা রাজনৈতিক সরকার আসুক। তা ছাড়া সেভাবে কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হচ্ছে না। সুতরাং অর্থনীতির স্বার্থেই নির্বাচন হওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে আগামী ফেব্রুয়ারি কিংবা দু-এক মাসের বিলম্ব ম্যাটার করে না। কিন্তু নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়লে সেটা দেশের জন্য ক্ষতিকর হবে। সে ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সংকট আরও প্রবল হবে।’ তবে রাজনৈতিক সরকার এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।
নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হলে ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দল, ভোটার সবার মধ্যে হতাশা তৈরি হবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় কর্তৃত্ববাদের পতনের পর একটা যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সম্প্রতি নেপালেও একই রকম একটা কর্তৃত্ববাদের পতন হয়েছে। সেখানেও ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর আগামী ফেব্রুয়ারিতে প্রায় দেড় বছর হয়ে যাবে। মানুষ এমনিতেই ১৭ বছর ভোট দেয় না। নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য তারা আর কত সময় অপেক্ষা করবে। তা ছাড়া বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগ সেভাবে আসছে না। ফরেন কমিউনিকেশনটাও সেভাবে শক্তিশালী হচ্ছে না। নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে যেভাবে অন্য রাষ্ট্রগুলো সম্পর্ক তৈরি করতে চায়, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সেভাবে চায় না। ব্যবসায়ীরাও ব্যবসা-বাণিজ্য করতে কমফোর্ট ফিল করেন না।’
তিনি বলেন, ‘এখন যদি নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করা না যায়- তাহলে ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দল, ভোটার সবার মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি-হতাশা তৈরি হবে। রাজনৈতিক দলগুলো তো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। ফলে সেটা তো রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে আরও সংকটে ফেলবে।’ দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নির্বাচনের ব্যাপারে যত অনুঘটক আছে, সব অনুঘটকের মধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য এখনো স্পষ্ট নয় বলে অভিমত এই রাজনৈতিক বিশ্লেষকের।
নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যবসায়ীদের : বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান কালবেলাকে বলেন, ‘একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন এখন সব মহলের দাবি। কারণ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় সব ধরনের বিনিয়োগ আটকে আছে। নির্বাচন যত আগে হবে বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচন হওয়ার সম্ভাবনা ততই বাড়বে।’
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি ফজলে শামীম এহসান আরও বলেন, ‘অতীতে রাজনৈতিক দলগুলোর একগুঁয়েমি ও অদূরদর্শিতার খেসারত দিতে হয়েছে ব্যবসায়ী সমাজসহ দেশের আপামর জনগণকে। ভবিষ্যতে আমরা আর সে ধরনের পরিস্থিতি দেখতে চাই না। যথাসময়ে নির্বাচন না হলে দেশ আবারও চরম অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হবে।’
নির্বাচন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে দ্রুত সমঝোতায় আসার পরামর্শ দিয়েছেন বিজিএমইএর জেনারেল বডির মেম্বার ও সংগঠনটির আরবিটেশনের (সালিশি বোর্ড) সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান এম কফিল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘অনেক বিনিয়োগকারী সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন। তারা নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা করছেন। যদি আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন না হয় বা নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, তাহলে এই সংকট আরও বৃদ্ধি পাবে, অর্থনীতি আরও সংকটজনক পরিস্থিতিতে পড়বে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘বল এখন রাজনৈতিক দলগুলোর কোর্টে। আমরা তাদের দিকে তাকিয়ে আছি। তারা যদি গোল করতে পারে, তাহলে জিতবে। না হলে আমরা আবারও অনিশ্চয়তার দিকে যাব। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কী করণীয়, সেই সিদ্ধান্ত সম্মানিত রাজনীতিবিদদেরই নিতে হবে। কারণ, তাদের দায়িত্ব সরকার পরিচালনা করা এবং রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা। না হলে এর পরিণতি অমঙ্গলকর হতে পারে সবার জন্যই।’