
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে এখনো জটিলতা কাটেনি। যদিও চূড়ান্ত সনদে স্বাক্ষরের জন্য বিএনপিসহ ১৫টি দলের পক্ষ থেকে প্রতিনিধির নাম পাঠানো হয়েছে, এখন আটকে আছে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ কিছু দলের কারণে। এই দলগুলোসহ ১৮টি দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি দেয়া হয়নি। তারা বলছেন, আইনি কাঠামো ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করবে না। আবার সনদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপত্তি তুলছেন কেউ কেউ। ফলে সনদ স্বাক্ষর ও বাস্তবায়ন ইস্যুতে এই জটিলতার প্রেক্ষিতে আজ বেলা ২টায় আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে ঐকমত্য কমিশন। এর আগে সকালে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ১৫ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এই মেয়াদ আরো ১৫ দিন বাড়তে পারে। অন্যদিকে কমিশনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে তিনি সনদ বাস্তবায়নে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চূড়ান্ত ‘জাতীয় জুলাই সনদ’ পাঠায় ঐকমত্য কমিশন। সনদে স্বাক্ষর করতে প্রতিটি দলের পক্ষ থেকে দুইজনের নাম শনিবার বিকাল ৫টার মধ্যে জমা দিতে বলা হয়। বিএনপিসহ আরো কয়েকটি দল এর মধ্যেই সনদে সই করতে সম্মত হয়েছে। বিএনপির পক্ষে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে যাবেন সনদে স্বাক্ষর করতে।
অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বলছে, আইনি কাঠামো ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করবে না তারা। তাদের সঙ্গে আরো কিছু ছোট দল সুর মিলিয়েছে। জামায়াত-এনসিপিসহ ১৮টি দল একই কথা বলছে। তাদের দাবি হচ্ছে, আইনি ভিত্তি ছাড়া সনদে সই করলে এর কোনো কার্যকর ফল পাওয়া যাবে না।
কিন্তু তাদের এই দাবির পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য কাজ করছে বলে মনে করে বিএনপি। গতকাল শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “সাংবিধানিক সংস্কারসহ যেসব দাবি এখনই তোলা হচ্ছে, সেগুলোর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।”
তিনি বলেন, “সংস্কার তো চাই-ই। তবে সেটা যেন প্রকৃত গণতান্ত্রিক ধারা ও জনগণের স্বার্থ রক্ষায় হয়।”
তার মতে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত স্বার্থে সংস্কার নয়।
একই দিন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ গণমাধ্যমকে বলেন, তাদের দল এখনো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছে। অভ্যন্তরীণ পরামর্শ শেষে সিদ্ধান্ত নেবে।
এনসিপি মনে করে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের ওপর দেয়া হলে তা অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে। শনিবার এক অনুষ্ঠানে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এ বিষয়ে বলেন, “শুধু সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার কথা বলে নির্বাচন হলে তা দেশের গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দিতে পারবে না। আমরা নির্বাচন আয়োজন করব এবং পরে দেশটা কীভাবে পরিচালিত হবে, সেটা যদি আমরা এখন ঠিক করতে না পারি, তাহলে সেই নির্বাচন আমাদের কাঙ্ক্ষিত সফলতা দেবে না। আমাদের কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জায়গায় পৌঁছে দেবে না।”
তিনি আরো বলেন, বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে নতুন রাষ্ট্রকাঠামোর প্রস্তাবনার জন্য তারা ঐকমত্য কমিশনে বসেছেন। কিন্তু সেটা যদি আগের কাঠামোতেই থাকে, সে নির্বাচন শুধুই কি নির্বাচন, সেটি একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুরক্ষা দিতে পারবে না।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যমুনায় বৈঠক করেন। এতে কমিশনের মেয়াদ ১৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
শীর্ষনিউজ