
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো না কোনো সময় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্রদের মধ্যে এ হার অনেক বেশি। একটি সাম্প্রতিক জরিপে উঠে এসেছে এ চিত্র।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ’ এর উদ্যোগে ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট শিব্বির আহমদের নেতৃত্বে পরিচালিত জরিপে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন।
জরিপে অংশ নেয়া ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আন্তরিক হলে ক্যাম্পাসকে নির্যাতনমুক্ত করা সম্ভব।
জানা গেছে, গত ১ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থিতা ও প্যানেল ঘোষণার আগেই এ জরিপ করা হয়। জরিপে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী।
জরিপে যেসব বিষয়গুলো উঠে এসেছে, সেগুলো হলো-
শিক্ষার্থী নির্যাতনের হার
জরিপে অংশ নেয়া মোট ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ছাত্রদের হার ৫৮ শতাংশ। এছাড়া, ৬৯ শতাংশ শিক্ষার্থী স্বচক্ষে অন্যকে নির্যাতিত হতে দেখেছেন। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থীই নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
ভোটের অধিকার ও প্রত্যাশা
জরিপে অংশ নেয়া ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ডাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে আগ্রহী, যদিও প্রায় ১৩ শতাংশ মনে করেন না যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। ৫৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, নির্বাচিত ডাকসু প্রতিনিধিরা ক্যাম্পাসকে নির্যাতনমুক্ত করতে পারবেন।

প্রার্থী বাছাইয়ের মানদণ্ড
৮২ শতাংশ ভোটার প্যানেলের চেয়ে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চান। ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন, প্রার্থীর ব্যক্তিগত পরিচয় নয়, বরং তার যোগ্যতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা সততা, ভালো সংগঠক, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, ধার্মিক, প্রগতিশীল, হাস্যরস এবং জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা রাখা প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে চান।
ডাকসুর কাছে শিক্ষার্থীদের মৌলিক চাহিদা
শিক্ষার্থীদের মতে, ডাকসুর প্রধান কাজ হওয়া উচিত গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি এবং নির্যাতনমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা। এছাড়া, বহিরাগতদের আনাগোনা কমানো, আবাসন ও খাদ্য সংকট দূর করা, অ্যাকাডেমিক পরিবেশের উন্নয়ন এবং দলের ঊর্ধ্বে উঠে শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া তাদের মূল প্রত্যাশা।
ভোটের ক্ষেত্রে অপছন্দ
শিক্ষার্থীরা এমন কোনো প্রার্থীকে ভোট দিতে চান না যিনি ব্যক্তিত্বহীন, মাদকাসক্ত, মিথ্যাবাদী, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, ছাত্র নির্যাতনে জড়িত, ধর্মবিদ্বেষী বা বদমেজাজী।
ভিপি পদে সম্ভাব্য বিজয়ী
জরিপ অনুযায়ী, ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতামতে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থী ভিপি পদে এগিয়ে আছেন। অন্যদিকে, ৭ শতাংশ ছাত্রদলের প্রার্থীকে সমর্থন করেছেন এবং ২২ শতাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। ৩৪ শতাংশ ভোটার এ বিষয়ে কোনো মতামত দেননি।