Image description

সামনে নির্বাচন। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী এই ভোটে বিভিন্ন ইস্যুতে দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতভেদ দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যেও ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। তবে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, ভোটের নতুন পদ্ধতিসহ তাদের কিছু চাওয়া রয়েছে। এসব নিয়ে দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের সঙ্গে কথা বলেছে আজকের পত্রিকা। ঢাকার গুলশানের বাসভবনে গত বৃহস্পতিবার তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন উপসম্পাদক সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী

প্রশ্ন: জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি চায় জামায়াতে ইসলামী। এই সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার কী কী সুযোগ অন্তর্বর্তী সরকারের আছে?

সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের: সনদ আমরা তৈরি করেছি বাস্তবায়নের জন্য, শুধু আলোচনা বা ঐকমত্যের জন্য নয়। সনদ তখনই সনদ হবে, যখন তা আইনি ভিত্তির মাধ্যমে কার্যকর হবে এবং এর ভিত্তিতেই এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কারণ, সনদে এমন কিছু প্রস্তাব আছে, যেগুলো নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কাজেই সনদ যদি এখনই আইনি ভিত্তি না পায়, তাহলে সনদের ভিত্তিতে নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। প্রশ্ন আছে, সনদের আইনি ভিত্তি কীভাবে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমরা তিন-চারটি বিকল্পের কথা বলেছি।

এক, রাষ্ট্রপতির ঘোষণার মাধ্যমে সনদ কার্যকর করা যেতে পারে, পরে নির্বাচিত সরকার এটাকে অনুসমর্থন (রেটিফিকিশন) দেবে। যেমনভাবে জিয়াউর রহমানের সময় অনেকগুলো পরিবর্তন এসেছিল রাষ্ট্রপতির ঘোষণার মাধ্যমে।

দুই, দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতেও এটা হতে পারে। ১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের অধীনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন করার জন্য যে প্রক্রিয়ায় আনা হয়েছিল, সে প্রক্রিয়ায়। তখনো সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছিল না। যেহেতু সব রাজনৈতিক দল তখন ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। পরে এটাকে জাতীয় সংসদ অনুসমর্থন দেয়।

তিন, যদি কোনো পদ্ধতিতেই দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারে, তাহলে সেটা জনগণের কাছে দেওয়া। যেটাকে আমরা গণভোট বলছি। দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নিক, তারা কী চায়। যদি অধিকাংশ মানুষ এটার পক্ষে থাকে, তাহলে কারও বাধা দেওয়ার কিছু নেই। আর যদি বেশির ভাগ লোক না চায়, আমরা সেটা মেনে নেব। জনগণের কাছে রায়ের জন্য যাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। অনেকে প্রশ্ন করছেন, গণভোট কি অল্প সময়ে সম্ভব। জামায়াত মনে করে, গণভোটের জন্য এক মাসই যথেষ্ট। এই রায়ের ভিত্তিতে নির্বাচনের জন্য আরও চার মাস থাকে।

প্রশ্ন: সনদকে সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে? এটা কি যথাযথ মনে করেন?

তাহের: সংবিধানে বলা আছে, জনগণের ইচ্ছাই চূড়ান্ত। জুলাই সনদ হচ্ছে জুলাই বিপ্লবের একটি ফসল, যাতে গণপ্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেছে। জনগণের আকাঙ্ক্ষা হিসেবে এটা সংবিধানের ওপর বিবেচিত হতে পারে।

প্রশ্ন: সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না, এমন প্রস্তাব আছে। এটা কেন?

তাহের: অতি প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলোকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এ ব্যবস্থা প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে যেকোনো লোক চাইলেই এটাকে চ্যালেঞ্জ করতে না পারে।

প্রশ্ন: সংসদে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ—উভয় ক্ষেত্রে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) দাবি করছে জামায়াত। এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে জামায়াত তুলনামূলক বেশি আসন পেতে পারে, এমন কৌশল থেকে কি এই অবস্থান জামায়াত নিয়েছে?

তাহের: ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সভায় ৩১টি দল অংশ নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২৫টি দল পিআরের পক্ষে ছিল। দলের সুবিধার জন্য এই ব্যবস্থা চাওয়া হচ্ছে না। দুটি বড় কারণে পিআর চাওয়া হচ্ছে। দেশে ৫৪ বছর ধরে প্রচলিত পদ্ধতিতে যেসব নির্বাচন হয়েছে, তার কোনোটিই সঠিক হয়নি। গত ১৫ বছর নির্বাচনই হয়নি। দিনের ভোট রাতে হয়েছে। কেন্দ্র দখল হয়েছে। কোনো প্রার্থী রাস্তায় নামতে পারেননি। এবার একই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা আছে। এবারও নির্বাচন ছিনতাই হয়ে গেলে দেশ ভঙ্গুর অবস্থায় চলে যাবে। সে কারণে আমরা পিআরের মাধ্যমে আগের অভ্যাসের পরিবর্তন চাচ্ছি, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে। পিআরে সেই (নির্বাচন ছিনতাই) সুযোগ কমে যাবে।

প্রশ্ন: ১৯৯১ সালে জামায়াত ১৮টি আসনে জিতেছিল। সেই নির্বাচনও কি তাহলে সঠিকভাবে হয়নি?

তাহের: ওই নির্বাচনও কিছুটা বিতর্কিত ছিল, যদিও গ্রহণযোগ্য ছিল।

প্রশ্ন: বিএনপি বলছে, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কোনো নির্দিষ্ট আসনের নাগরিকেরা জানবেন না, কে তাঁর এলাকার এমপি। একজন নাগরিক কীভাবে বুঝবেন, কে তাঁর এমপি?

তাহের: পিআর সম্পর্কে ধারণার অভাবে এমনটা বলা হচ্ছে। আট রকম পিআর পদ্ধতি চালু আছে বিভিন্ন দেশে। জার্মানিতে মিশ্র পদ্ধতি চালু আছে। সেখানে আসন ভিত্তিতে এমপি হয়, আবার পিআরের মাধ্যমেও এমপি হয়। ধরুন, একটি দল আসনভিত্তিক ভোটে ১০টি আসন জিতল। আবার একই দল ১০ শতাংশ ভোটও পেল। পিআরের জন্য নির্ধারিত যদি ২০০ আসন থাকে, তাহলে দলটি আরও ২০টি আসন পাবে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে এলাকার প্রতিনিধিত্বের যে প্রশ্ন উঠছে, তার সমাধান হয়ে যাবে। আবার জেলাভিত্তিক পিআরও আছে। যেমন কুমিল্লায় ১১টি আসন আছে। পুরো জেলার জন্য পিআর ব্যবস্থা নির্ধারিত থাকলে স্থানীয়ভাবে প্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে আসবেন। আমাদের দেশে লোকেরা তেমন পড়তে চায় না, সে কারণে দেখি পণ্ডিত ব্যক্তিদের অনেকের কাছেও তথ্যের অভাব আছে।

প্রশ্ন: পিআরের পরিবর্তে যদি সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যবস্থা বহাল থাকে, সে ক্ষেত্রে জামায়াতের অবস্থান কী হবে?

তাহের: আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাচ্ছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের অবস্থা দুর্বল। অন্যদিকে বিএনপির আচরণে কোনো পরিবর্তন নেই। সারা দেশে আওয়ামী লীগের লোকেরা যে জায়গাগুলো দখলে রেখেছিল, সেগুলো বিএনপি নিয়ে নিয়েছে। দখলমুক্ত কিন্তু কোনোটিই হয়নি। আগের লোকেরা যেভাবে চাঁদা তুলত, এখন রেট বাড়িয়ে একইভাবে তোলা হচ্ছে। এতে বোঝা যায়, রাজনৈতিক দলের কর্মীদের চরিত্রের ও চিন্তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। যারা চাঁদা তুলতে পারবে, তারা তো কেন্দ্রও দখল করতে পারবে। সে কারণে আমরা মনে করি, প্রচলিত পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা ক্ষীণ।

প্রশ্ন: জামায়াত ‘সিলেকশন’ নয়, ইলেকশন চায়, এমনটা কয়েক দিন আগে এক বক্তৃতায় আপনি বলেছেন। ‘সিলেকশনের’ মাধ্যমে এমপি ঠিক করার জন্য তৎপরতা কি চলছে?

তাহের: গত তিনটি নির্বাচনে যে অবস্থা দেখেছি, বর্তমানে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবস্থা, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের আচরণের যে অবস্থা, তাতে মনে হয় ‘সিলেকশনেও’ এমপি হয়ে যেতে পারে, এমন অবস্থা বিরাজ করছে। জামায়াত সে ধরনের নির্বাচন চাচ্ছে না।

প্রশ্ন: ন্যূনতম ৫ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দলগুলোকে আহ্বান জানানোর কথা সনদের খসড়ায় বলা আছে। জামায়াত কতগুলো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারে?

তাহের: নারী-পুরুষ ব্যবধান না করে যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা—এ দুটি দিক সমন্বয় করে আমরা প্রার্থী মনোনয়ন দেব। সংস্কারের প্রস্তাবে যে ৫ শতাংশের কথা বলা হয়েছে, আমরা এতে সম্মতি দিয়েছি। সংস্কারের প্রস্তাব যদি শেষ পর্যন্ত আইনে পরিণত হয়, আমরা নিশ্চয় তা বিবেচনায় নেব।

প্রশ্ন: ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার বিষয়ে কি জামায়াতের সন্দেহ আছে?

তাহের: জামায়াতে ইসলামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায়। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার। কিন্তু আমরা চাই নির্বাচন যেন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়। যে সকল দাবি অধিকাংশ রাজনৈতিক দল করেছে, সেগুলো সম্পন্ন করে যাতে সকলে মিলে উৎসবমুখর ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা হয়। এখনো সময় আছে। সরকার ইচ্ছা করলে কোনো একটি দলের প্রতি ঝুঁকে না গিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে পারে।

প্রশ্ন: সরকারে তো দৃশ্যমান কোনো দল নেই। তাহলে এই সন্দেহ কেন?

তাহের: সরকারের আচরণে। সরকার একটি দলের সঙ্গে দেশের বাইরে গিয়ে লিখিত চুক্তি করেছে, যেটা একেবারেই অস্বাভাবিক আচরণ। এতে সরকারের নিরপেক্ষতা নষ্ট হয়েছে বলে আমি মনে করি। যে তারিখে (সময়সীমা) সরকার নির্বাচনের কথা বলছে, সেই তারিখ নিয়ে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু পদ্ধতি হিসেবে যা করেছে, তাতে একটি দলের প্রতি তারা ঝুঁকে গেছে, এটা বোঝা গেছে। দ্বিতীয়ত, সরকার একই দিনে (গত ৫ আগস্ট) জুলাই সনদের ঘোষণা দিয়েছে। সেদিনই রাতে টেলিভিশনে (প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের) ভাষণে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, একই দিনে দুটি জাতীয় পর্যায়ের বিষয় উনি কেন আনলেন? রাতেরটা কি কোনো চাপে? কার চাপে? বাধ্যতামূলকভাবে এ ঘোষণা দেওয়ার মতো কোনো অবস্থা তৈরি হয়েছিল? এতে আমাদের মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আমরা ওনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আমি বলেছি, আপনি কারও চাপে এটা করেছেন কি না? সেদিন তিনি এর তেমন জবাব দেননি।

প্রশ্ন: কী কী করলে সব দলের জন্য নির্বাচনে সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ হবে?

তাহের: সরকার যা এর মধ্যে করে ফেলেছে, তাতে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নষ্ট হয়েছে। লন্ডনে গিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা, একই দিনে দুটি জাতীয় বিষয়ে ঘোষণা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) মন্তব্যে এটা হয়েছে। তারা (সিইসি) বলেছে, পিআর পদ্ধতি সংবিধানে নেই, আমরা এটা করতে পারব না। সংবিধানে কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতিতে ভোটের কথাও বলা হয়নি। সংবিধানে নির্বাচন করার কথা বলা আছে। নির্বাচনের দুটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। একটি প্রচলিত পদ্ধতি, অন্যটি পিআর। তারা পিআরের বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ার পর নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া দরকার ছিল। আমাদের দাবি উপেক্ষা করে তারা যে রোডম্যাপ দিয়ে দিয়েছে, মনে হয় কোনো একটি দলের সঙ্গে বোঝাপড়া করে তারা এটা করেছে। এবং বিএনপি এসব ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছে। এতে কিছুটা সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

প্রশ্ন: জামায়াতের আমির ও আপনি সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁর সঙ্গে কী কথা হয়েছে?

তাহের: তখন একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে আমরা আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। সেনাপ্রধানের কিছু বক্তব্যে দেশে একটি অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল যে সেনাবাহিনী ‘টেকওভার’ করে কি না। আমরা সেই মুহূর্তে দায়িত্বশীল একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে সংকট উত্তরণের জন্য এগিয়ে গিয়েছিলাম। আর কোনো দল যায়নি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে প্রথম দেখা করেছি। তাঁকে বলেছি, সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা জরুরি। আবার সেখান থেকে আমরা সেনাপ্রধানের কাছে গিয়েছি। তাঁকে বলেছি, আপনার এ রকম ভূমিকা জাতি গ্রহণ করবে না। এবং আপনি ভিন্ন কিছু করারও চিন্তা করবেন না। আমরা উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য দুপক্ষের দূতিয়ালির কাজটা করেছি।

প্রশ্ন: আলোচনা আছে, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জামায়াত নিজেদের লোক বসিয়েছে। ক্ষমতায় না থেকেও ক্ষমতা ভোগ করছে। আপনারা কি ক্ষমতার স্বাদ পাচ্ছেন?

তাহের: এটা হচ্ছে জামায়াতকে বঞ্চিত করার জন্য অপপ্রচার। একটি উদাহরণ দিই। কিছুদিন আগে সুপ্রিম কোর্টে ২৫ জন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর ভেতরে জামায়াতের একজনও নেই। বিএনপির ডজনখানেক কমপক্ষে আছে। অথচ তারা বলছে, সব বিচারপতি জামায়াতের। আসলে জামায়াতের নিন্দা করে উল্টো নিজেরা সুবিধা নেওয়ার জন্য এমন বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে।

প্রশ্ন: ডিসি, এসপিসহ বিভিন্ন পদে নিরপেক্ষ লোক বসানোর কথা বলা হচ্ছে। একজন প্রার্থী অভিযোগ করলেই একজন কর্মকর্তা পক্ষপাতদুষ্ট, এমন অভিযোগ ওঠে। সেখানে সকল আসনে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য নিরপেক্ষ যথেষ্টসংখ্যক কর্মকর্তা পাওয়া কীভাবে সম্ভব হতে পারে?

তাহের: নিরপেক্ষ ব্যক্তি প্রয়োজন নয়, প্রয়োজন ব্যক্তির নিরপেক্ষ ভূমিকা। ডিসি, এসপি, ইউএনও, ওসিসহ নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাঁরা আছেন, তাঁদের ভূমিকা নিরপেক্ষ হচ্ছে কি না, সরকারকে সেটা দেখতে হবে। সেটা যদি সরকার দেখে, তাহলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হচ্ছে বলে আমরা ধরে নেব।

প্রশ্ন: ইসলামপন্থী দলগুলো নিয়ে জামায়াতের নির্বাচনী জোট করার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে? কতগুলো আসন ছাড়বেন জোটের শরিকদের?

তাহের: এটা শুধু ইসলামপন্থীদের জোট হবে না; সকল ইসলামপন্থী, জাতীয়তাবাদী শক্তি, ডানপন্থা অনুসরণকারী শক্তি, বিএনপির বাইরে প্রায় সকলকে নিয়েই আমরা একটি ঐক্য করার চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন: বিএনপির বাইরে কেন?

তাহের: যেহেতু বিএনপি বলে দিয়েছে, জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য হবে না। সালাহউদ্দিন আহমদ সাহেব বলেছেন। আমাদের সঙ্গে ঐক্য হবে না, এমন সিদ্ধান্ত যেহেতু বিএনপি নিয়েছে, আমরা মনে করি, এটা নিয়ে টানাহেঁচড়া করার কিছু নেই। কিন্তু বিএনপির বাইরে সম্ভাবনাময় যত দল আছে, সকলেই এখন একসাথে হওয়ার চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন: এনসিপির সঙ্গে কি জোট হচ্ছে?

তাহের: এনসিপির সঙ্গে আমরা ইস্যুভিত্তিক ঐক্যে আছি। যেমন তারাও জুলাই সনদ চাচ্ছে, গণভোট চাচ্ছে। ইস্যু ভিত্তিতে আমরা অনেকগুলো দল এখন এক জায়গায় আছি।

প্রশ্ন: নির্বাচন নিয়ে কি এনসিপির সঙ্গে কথা হচ্ছে?

তাহের: নির্বাচন নিয়েও কথা বলছি, যারা এখন এক আছি, তাদের সঙ্গে। দেখা যাক কত দূর যেতে পারি।

প্রশ্ন: নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠনের কথা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন। জামায়াত কি এমন সরকারে যোগ দেবে?

তাহের: জাতীয় সরকারের ধারণা আলাদা, তিনি কি সেটা বিবেচনায় নিয়ে বলেছেন? জাতীয় সরকার হলো সকল প্রধান দল নিয়ে একটি সরকার। আর বিএনপির মাননীয় নেতা বলেছেন, নির্বাচনে ওনারা জিতলে সবাইকে নিয়ে একটি সরকার করবেন। ওটা তো জাতীয় সরকার হবে না। তাহলে বিরোধী দল কোথায় থাকবে? অতীতে এমন হয়েছে যে বিভিন্ন দল থেকে মন্ত্রীরা ছিলেন। এটা হতে পারে। এটাকে জাতীয় সরকার বলা যাবে না।

প্রশ্ন: নির্বাচনের সময় দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অন্তর্বর্তী সরকারে থাকলে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান কী?

তাহের: তাঁরা যদি নির্বাচন করতে চান, তাহলে পদত্যাগ করতে হবে। সরকারের মন্ত্রী থেকে তো নির্বাচন করা যাবে না।

প্রশ্ন: কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নের সুযোগ এখনো নেই। ১৯৯১, ১৯৯৬সহ বিভিন্ন নির্বাচনে এটা প্রমাণিত যে দলটির জনসমর্থন আছে। তাহলে দলটির অংশগ্রহণ ছাড়া আগামী নির্বাচন কি অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিনিধিত্বশীল হবে?

তাহের: কোনো দলকে বাইরে রাখলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয় না, বিষয়টি এমন নয়। নির্বাচনে ভোটারের অংশগ্রহণ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন আওয়ামী লীগের সময় নির্বাচনে ৫ শতাংশ ভোটার এসেছে। কিন্তু নির্বাচনে ২৪ থেকে ২৮টি দল অংশ নিয়েছে। তাতে তো নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। অংশগ্রহণমূলক মানে ভোটারের অংশগ্রহণ। আওয়ামী লীগের বাইরে এখন ৭০-৮০টি দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে।

প্রশ্ন: ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবি নাগরিকদের একটি বড় অংশ করে থাকে। এ বিষয়ে জামায়াতের বর্তমান নেতৃত্বের অবস্থান কী?

তাহের: জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান নেতৃত্বের সকলেরই বাংলাদেশে জন্ম, বাংলাদেশে বড় হওয়া, বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। জামায়াতই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য প্রথম এবং প্রধান অংশীজন হিসেবে কাজ করবে।