Image description
 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কে রাজনীতি করবে, না করবে এটা আইনের ব্যাপার, সরকারের ব্যাপার। বিএনপি কোথাও কোনো মব সংস্কৃতি তৈরিও করে না, উশৃঙ্খল জনতাতন্ত্রে বিশ্বাসী নয় বিএনপি। কিন্তু বিএনপির তো এনালাইসিস আছে, একটা বিশ্লেষণ আছে, গেল ১৬ বছর জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী ছিল, আর অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ভূমিকা কী ছিল? এই ভয়ঙ্কর রক্ত পিপাসু শেখ হাসিনার আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে কারা রক্ষা করেছে, জনগণের লাখ কোটি টাকা পাচারের সুবিধা করে দিয়েছে কারা, দেশে আওয়ামী ভয়ঙ্কর স্বেচ্ছাতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার সিল দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছে জাতীয় পার্টি।

মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে ‘উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম’র উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান হয়।

রিজভী বলেন, একবারে দেশটা ছিল শেখ হাসিনার বাপের সম্পত্তি, যখন যা মনে করেছে তাই করেছে। একটার পর একটা ব্যাংক দিয়ে দেওয়া হয়েছে এস আলমকে। সেই এস আলম এখন দিল্লিতে শেখ হাসিনার কাছে আড়াই হাজার কোটি পৌঁছে দিয়েছেন বাংলাদেশের মধ্যে কিছু ঘটাবেন। আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আরও দুই হাজার কোটি টাকা দেবেন। আরেকজন নেতা শেখ হাসিনার একেবারে ডান হাত মাহবুব উল আলম হানিফ বিদেশ বা ইন্ডিয়ায় আছেন। তিনি বাংলাদেশে তার এলাকায় একটা বেশ বড় ধরনের এলাকা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ওপেন করছেন ও উদ্বোধন করেছেন কালকে। কীভাবে সম্ভব এটা?

 

তিনি বলেন, তারেক রহমান সাহেবের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার করেছে আওয়ামী লীগ। বলছে, মালয়েশিয়াতে তার অনেক কলকারখানা আছে। কিন্তু ১৬ বছর তারেক রহমানের কারখানার নাম কী, শিল্প প্রতিষ্ঠানের নাম কী শেখ হাসিনা তো বলতে পারেননি।

 

‘এখন জাতীয় পার্টিকে রক্ষার দায়িত্ব বিএনপির’ জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারীর এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, বিএনপি তো রাষ্ট্র ক্ষমতায় নেই। এখনো তো আবার সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। আপনি কিসের দায় দায়িত্বের কথা বলছেন? আপনি আবার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলছেন কেন? বিএনপি জাতীয় পার্টির দায়িত্ব নেবে কেন? আপনারা কারা? যখন ইলিয়াস আলীসহ বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীর গুম হয় তখন কোথায় ছিলেন, তখন জাতীয় পার্টি কোথায় ছিল?

 

২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে কোনো ভোটার নেই সেই চিত্র স্মরণ করে রিজভী বলেন, সেখানে কুকুর-বিড়াল গরু ছাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে। সেই নির্বাচনে যাব না, যাব না করতে করতে জাতীয় পার্টি গেল, আপনারা ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর প্রায় ৪৫ জন প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হলো অর্থাৎ শেখ হাসিনা বিএনপি নির্বাচনে আসুক সেটা চাইনি। জাতীয় পার্টি কী ভূমিকা রেখেছে ২০২৪ সালের আগে দেখেছি। জিএম কাদের সাহেব তিনি ইন্ডিয়ায় গেলেন এখানে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করল, আপনাকে কী কথা বলছে ভারত, তিনি বলেন ওদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তবে ওদের ( ভারতের) পারমিশন ছাড়া কথা বলব না। এই দল জাতীয় পার্টি।

রিজভী বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আপনাকে (জিএম কাদের) নির্দেশ দিয়েছিল ভারত, এটা পাবলিক সবাই জানে। সেটাও আপনি তাদের অনুমতি ছাড়া বলতে পারবেন না। তো আপনি কি ভারতের কোনো রাজনৈতিক দল? না বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল? এই আপনাদের মেরুদণ্ড, এই আপনাদের নীতি, এই আপনাদের আদর্শ, এই আপনাদের চরিত্র?

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আপনারা কুলিং, আপনারা কি বলে একটা কুলিং টাইম চান। যে শেখ হাসিনা নাকি ক্ষমতায় এসে দুই বছর একটা কুলিং টাইম দিয়েছিলেন তারপরে টর্চার করেছেন। বিএনপি কখনো টর্চার বিশ্বাস করে না। কুলিং টাইম আবার কিসের? আর বিএনপি তো ক্ষমতাই নেই। এখন তো নির্বাচনই হয়নি। বিএনপি কখনো কোনোভাবে কোনো অবস্থাতেই বেআইনি কোনো ধরনের অত্যাচার নির্যাতন নিপীড়ন এটাতে বিশ্বাসী নয়। প্রত্যেকে যারা বসে আছেন বা সামনে বসে আছেন সর্বনিম্ন ৫০টা সর্বোচ্চ ৫০০টা মামলায় আমরা প্রত্যেকেই আক্রান্ত। তো আমরা নিজেরা যেখানে আক্রান্ত অন্যকে কেউ অত্যাচারিত হোক অন্য কেউ লাঞ্ছিত হোক নির্যাতিত হোক সেটা আমরা চাই না। কিন্তু যারা ফ্যাসিবাদকে সমর্থন দিয়ে তাদের বয়ানের সঙ্গে গলায় সুর মিলিয়ে যারা কাজ করেছে তাদের আইনের আওতায় এনে, তাদের বিচার জনগণ দেখতে চায়। অবশ্যই তাদের বিচার জনগণ দেখতে চায়।

১৬ বছরের সাংবাদিকতা বাদ দিয়ে অনেকে এক্টিভিজম করেছে; এমন সমালোচনা করে রিজভী বলেন, চেতনার বয়ান তৈরি করেছে, চেতনার নামে নানা কিছুর নামে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, নির্বাচন ধ্বংস করেছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ধ্বংস করেছে, সত্য কথা যদি বলেছে তার মৃত্যু হয়েছে, হত্যাকাণ্ডে শিকার হয়েছে না হলে কারাগারে থাকতে হয়েছে। বিশেষ করে সত্যবাদী সাংবাদিকরা তারা কেউ নিস্তার পায়নি শেখ হাসিনার করাল গ্রাস থেকে। আওয়ামী লীগের দাসত্ব করা সাংবাদিকরা আজকে বড় বড় কথা বলেন, এটা তো অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।

স্মরণ করে দিয়ে তিনি বলেন, অনেক সংবাদপত্র শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে প্রয়াত জিয়াউর রহমান লিখেছেন, এটাও কিন্তু আমরা দেখেছি। সংবাদপত্রগুলো এত বেদনা এত দুঃখ দিয়েছে, এটা কিন্তু আমরা ভুলব না।

আমরা বিএনপি পরিবারের আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বিএফইউজের কাদের গণি চৌধুরী, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলাল প্রমুখ।