Image description

আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাম সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী মেঘমল্লার বসুকে হারানোর ঘোষণা দিয়েছেন আরেক প্রার্থী আশিকুর রহমান। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন। ভিন্ন আঙ্গিকে প্রচারণা শুরু করে ইতোমধ্যেই ভাইরাল হয়েছেন তিনি। 

আশিকুর রহমান বলেন, ডাকসু নির্বাচনে আমি অন্তত মেঘমল্লার বসুকে হারাব। আমি যেহেতু একটা পদে দাঁড়িয়েছি, অবশ্যই আমি একটা কিছু নিয়ে ফিরব।  যারা আদর্শের রাজনীতি করে তাদের মধ্যে সবচেয়ে লোয়েস্ট ক্যান্ডিডেট হলো মেঘমল্লার। ওরে যদি না হারাতে পারি, তাহলে তো আমার ম্যান্ডেটই থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচনের আর ১৯ দিন বাকি আছে। এই ১৯ দিন আমি নো খাওয়া-দাওয়া নীতি গ্রহণ করেছি। আমি কাউকে খাওয়াব না, কারও থেকে খাব না। কিন্তু  ৯ সেপ্টেম্বর জিতে যাওয়ার পরে সূর্যসেন হলের পানি শেষ হয়ে যাবে, চা-পাতি শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু আমার যারা শুভাকাঙ্ক্ষী আছে তাদের তৃষ্ণা মিটবে না। 

প্রসঙ্গত, অদ্ভুত এক ইশতেহার ঘোষণা করে আলোচনায় এসেছেন জিএস প্রার্থী মো. আশিকুর রহমান। সেটার শিরোনামে তিনি লিখেছেন, ‘ডাকসুতে আগুন লাগাতে চলে এলাম বন্ধুরা’। ফেসবুকের পোস্টারে আশিকুরের চোখে সানগ্লাস, হাতে লাইটার আর ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট দেখা গেছে। তার এই ব্যতিক্রমী প্রচারণার ছবি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে এমন ছবি পোস্ট করেছেন আশিক।

ফেসবুকের ওই পোস্টে আশিক লিখেছেন, ‘আই ডিক্লেয়ার ওয়ার অন মাই ফ্যাকাল্টিজ। কেন আমাকে ওই ৫ মার্কের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বস্তাপচা লেকচার শোনা লাগবে? এর থেকে ক্লাস না করে ভালো রেজাল্ট করা যায়। অ্যাটেনডেন্স ৭০-৭৫% হলেই ফুল মার্ক দেয়া উচিত। আর ৫০% থাকলেও পরীক্ষায় বসতে দেয়া উচিত। কিউএস র‍্যাঙ্কিং দিয়ে আদৌ কিছু হয়? আমাদের ঘাড়ের ওপর পা দিয়ে জাতে ওঠার চেষ্টা করলে হবে না। অবশ্যই শিক্ষার্থীদের সুবিধা আগে।

এই একটা কারণই যথেষ্ট ডাকসুতে দাঁড়ানোর। আরও পয়েন্ট আছে। যেগুলা সবাই দিয়েছে, অমুক উন্নয়ন, তমুক উন্নয়ন, এগুলা চাইলেই কপি করে এখানে যোগ করে দেয়া যাবে। কিন্তু আমি ওই ‘উদ্দীপকের গুরুত্ব অপরিসীম’ টাইপ লোক না।’

তিনি আরও লেখেন, ‘বাস্তবতা হলো সদস্য হিসেবে তেমন পরিবর্তন আনার কারোরই সেরকম সুযোগ/মুরোদ নাই। সর্বোচ্চ প্রেশারাইজ করতে পারবে তারা। আর সমস্যাগুলো খুঁজবেন আপনারা। আমি রিপ্রেজেন্টেটিভ। আপনারা আমাকে সমস্যাগুলো বলবেন, সেটা নিয়ে দায়িত্বশীলদের সাথে ফাডাফাডি করার দায়িত্ব আমার। ফাডাফাডি, প্রেসারাইজ, আলোচনা করে দাবি আদায় আমার কাজ, সোফায় বসে আরাম করে তামাশা দেখা আপনার কাজ। কিন্তু হয় উল্টোটা। সমস্যা বের করে নেতারা আর তার জন্য রাস্তায় কষ্ট করে আন্দোলন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।’

আশিক লেখেন, ‘মেয়েদের যাতায়াত, নিরাপত্তা, বিশেষ করে আবাসন সমস্যার জন্য ক্যাম্পাসে হল নির্মাণ অথবা কর্মচারীদের যেকোনো একটি ভবন হোস্টেলে (হল না) রূপান্তরের বিষয়ে কাজ করব। এছাড়াও, ক্যাম্পাস যেন বহিরাগত জনসমাবেশের পার্কিং স্লট আর মূত্র বিসর্জনের জায়গা না হয়ে যায়, একাডেমিক এরিয়ায় সকল মিটিং মিছিল শব্দদূষণ বন্ধ আর সর্বোচ্চ রাজুতে (রাজু ভাস্কর্য) প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে করার এখতিয়ার, সেই চেষ্টা করব।’

ইনক্লুসিভ কালচারের প্রসঙ্গ তুলে তিনি লেখেন, ‘ঢাবিতে কুরআন তেলাওয়াত হবে, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা হবে, কনসার্ট সব হবে। কেউ কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানবে না। এছাড়াও, এনিমে কসপ্লে, ড্রোন মেকিং ইভেন্টসহ নানা কম্পিটিশন হবে।’

ডাকসুতে তাকে কেন ভোট দেওয়া হবে এ প্রসঙ্গে আশিক লেখেন, আর্থিক সততা: ইনভেস্টমেন্ট সে-ই করে, যে লাভের আশায় থাকে। আমার এখানে কোনো ইনভেস্টমেন্ট নাই, সুতরাং লাভও নাই। আর আমি কেমন হিসাবী লোক, আমার বন্ধুরা জানে। ১৭ জুলাই হল দখলের দিনেও গণিমতের মাল হিসেবে কিছুই নেইনি। যেখানে অন্যরা বাইকের তালা ভেঙে..’

ঢাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী দাবি করেন, তার নামে নারী কেলেঙ্কারি নেই, ভাই-ব্রাদার কোরাম নেই বরং তার আছে স্ট্র্যাটেজিক দক্ষতা। তিনি বলেন, নেতার পরিবর্তে একজন রাজনৈতিক আমলা হিসেবে কাজ করতে চাই। ডাকসু জিএসের কাজও মোটাদাগে এমনই। সো আমি এখানে মূলত ‘দ্য ওয়ারটাইম কনসিলিয়ার’ ফ্রম গডফাদার।’

এক্সপোজ করার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে ওই পোস্টে  তিনি লেখেন, ‘যেহেতু অন্যায়-অনিয়ম একদমই সহ্য করতে পারি না, তো যদি অন্য সদস্যরা একটুও অনিয়ম বা সিকি পয়সার কমিশনবাজি করে, তাদের এক্সপোজ করে দেব। তো যাদের সিলেটের পাথরচুরির সর্বদলীয় ঐক্যর মতো কিছু করার ইচ্ছা আছে, তারা আমাকে ভোট দেবেন না।’