Image description
 

চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের কালীরচরে চরাতে আনা সেই ২৮৪ মহিষের মালিকের সন্ধান মিলেছে দীর্ঘ দেড় মাস পর।

 

উপজেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি দীর্ঘ যাচাই-বাচাই শেষে ১৪ জনকে চিহ্নিত করে তাদের কাছে মহিষগুলো হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসন মহিষ হস্তান্তরের লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি উপ-কমিটি গঠন করেছে।

এছাড়াও দু’টি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মংচিংনু মারমা জানিয়েছেন, মহিষ নিতে হলে প্রকৃত মালিকরা কমিটির সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে এসব মহিষ হন্তান্তর করা হবে। প্রশাসনের জিম্মায় থাকা ২৮৪ মহিষের ১৪ জন মালিককে কমিটি ইতিমধ্যেই সনাক্ত করেছে। মহিষগুলোর বাজারমূল্য আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা।

 

এদিকে ভবিষ্যতে সন্দ্বীপে মহিষ চরাতে আনতে হলে প্রশাসনের অনুমতি লাগবে মর্মে সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয়রা জানান, দ্বীপ এলাকায় মহিষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চরাতে আনা নতুন ঘটনা নয়। ঋতু পরিবর্তন হলে এটা এখানে প্রায় হয়। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটে যাওয়ায় প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া এরপর থেকে কেউ আর স্বাভাবিকভাবে মহিষ চরাতে আনবে না।

 

সূত্র জানায়, মহিষের মালিকেরা উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উড়িরচরের বাসিন্দা। সেখান থেকে মহিষগুলো গত ৪ জুলাই বাল্কহেডে করে কালীরচরে চরাতে নিয়ে আসা হয়েছিল। ওই দিন ভোরে তারা প্রথমে ভাসানচরে গেলেও জোয়ারের কারণেই সন্দ্বীপে আনা হয়। বাল্কহেড থেকে তিন ব্যক্তি মহিষগুলো নামিয়ে দিয়ে চলে যান। দেখাশোনার লোক আসার আগেই মহিষ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড শুরু হয় সন্দ্বীপে।

 

জানা যায়, গত ৪ জুলাই উপজেলা কালীরচরে ২৮৪টি মহিষ দাঁড়িয়ে থাকার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিতর্ক শুরু হয়। এরপর থেকে সেখানে মহিষগুলো দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় করতে থাকেন। কে এসব মহিষের মালিক, কারা আনল? কিভাবে আসল? এসব কৌতূহল দেখা দেয় স্থানীয়দের মনে। এখানেই শেষ নয়। বিষয়টি গড়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিএনপির একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে ফাঁসাতে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও ওঠে। কেউ বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরের খামার থেকে লুট করা। আবার কেউ বলছেন, উড়িরচরের পলাতক কোনো আওয়ামী লীগ নেতার খামার থেকে লুট করে আনা।

এসব নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষে-বিপক্ষের বক্তব্য কোন্দলের জন্ম দেয়। এতে বিভ্রান্তিতে পড়ে যায় সন্দ্বীপবাসি।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন যুবদল নেতা জানান, মহিষ নিয়ে রাজনীতি চলেছে। মহিষগুলো উড়িরচরের এক চেয়ারম্যান চরাতে আনলেও দলের এক পক্ষ ছড়িয়ে দেয় এগুলো ওবায়দুল কাদেরের খামার থেকে লুট করে আনা। তারা মিডিয়াকে ভুল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করে। যা ভিত্তিহীন। মূলত মহিষগুলো আনতে স্থানীয় কয়েকজন যুবদল নেতার সহযোগিতা চেয়েছিল উড়িরচরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবদুর রহিম। সেখানে মহিষ চরার স্থান সংকট হওয়ায় তারা এপারে নিয়ে আসে।

 

এ ঘটনায় ৯ ‍জুলাই উপজেলা প্রশাসন প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং মহিষগুলো স্থানীয় প্যানেল চেয়ারম্যানের জিম্মায় দেওয়া হয়। ১২ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। তদন্ত কমিটি প্রকৃত মালিকদের কাছে কাগজপত্র তলব করে। কিন্তু মহিষের কাগপত্র বলতে তেমন কিছু থাকে না। বিশেষ করে মহিষের গায়ের রং, শিংয়ের ধরণ, শরীরের দাগ বলতে পারলে বুঝা যায় কে আসল মালিক। প্রশাসনের কাছে সন্দ্বীপ, নোয়াখালীর হাতিয়া, সুবর্ণচরের অনেকে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। যাদের প্রত্যেকের মহিষ হারিয়েছিল। আর এতেই মহিষের মালিকানা নির্ণয় নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়।

 

শুরুর দিকে এসব মহিষ সন্দ্বীপের দ্বীপ ইউনিয়ন উড়িরচর থেকে আনা হয়ে জানিয়ে মালিকানা দাবি করেন উড়িরচর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং ওই ইউনিয়নের বিএনপি সভাপতি আবদুর রহিম ও তার বোনের পরিবার।

 

আবদুর রহিম জানান, মহিষগুলোর কয়েকজন মালিক রয়েছে। এর মধ্যে চারজন রাখাল, অন্যরা তার স্বজন ও প্রতিবেশী। দীর্ঘদিন ধরে তারা একই জায়গায় মহিষ লালনপালন করেন। উড়িরচরে ফসলের মৌসুম শুরু হওয়ায় মহিষগুলো কালীরচরে চরাতে নিয়ে এসেছিলেন। আরেক মালিক মো. রিয়াদ জানান, ‘আমরা মহিষের টিকার কার্ড ও মহিষের দাগ-বর্ণের লিখিত বিবরণ কমিটিকে জমা দিয়েছি।

 

মহিষের মালিক আবদুর রহিমের ছেলে আজিম জানান, বিএনপির বিরোধ থেকে পুরো বিষয়টিকে জটিল করে ফেলেছে একটি পক্ষ। আমরা ২৮৪ টি মহিষের টিকার কার্ড জমা দিয়েছি।

 

সন্দ্বীপ থানার ওসি এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী আমার দেশকে জানান, উড়িরচরের চেয়ারম্যানের ৮০টি, তার ছেলের কয়েকটি মহিষ রয়েছে। অন্য মালিকরা তার আত্মীয় বলে জেনেছি। আমরা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ইউএনওর কাছে জমা দিয়েছি। প্রাণীসম্পদ অফিস থেকে এগুলো হস্তান্তর করা হবে।

 

সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মংচিংনু মারমা জানান, ভবিষ্যতে সন্দ্বীপের কোনো চারণভূমিতে পশু স্থানান্তর করলে অবশ্যই প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে। এই নিয়ম না মানলে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।