
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের শততম জন্মদিন ছিল গত ২৩ জুলাই। দিনটি উপলক্ষে কয়েকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ঢাকায় এসেছিলেন তাঁর বড় মেয়ে শারমিন আহমদ, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান কেমন হলো, ঢাকায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কী দেখলেন, জানলেন, রাজনীতিতে আগ্রহ আছে কি না—এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন শারমিন আহমদ। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহমেদ।
আপনি ঢাকায় এলেন, এক মাসের বেশি থাকলেন, কী দেখলেন, কী বুঝলেন?
শারমিন আহমদ: আমি গত অক্টোবরে, জানুয়ারিতে এবং সর্বশেষ জুলাইয়ে ঢাকায় আসি। গত অক্টোবরের সঙ্গে তুলনা করলে দেখব, মানুষের মধ্যে অনেক চিন্তা, বিতর্ক ও হতাশা জন্ম নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো নয়। মানুষ ঠিক বুঝতে পারছে না দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, মানুষের ভাগ্যে কী আছে।
কিন্তু বিগত ১৫ বছরের তুলনায় কি পরিবর্তন নেই?
শারমিন আহমদ: ১৫ বছরের তুলনায় ভালো হওয়ার কথা, কিন্তু খারাপ হওয়া উচিত নয়। কিছু ক্ষেত্রে খারাপও হয়েছে। সে জন্য ১৫ বছরকে দায়ী করতে পারি। কারণ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মানুষকে তো বর্তমানে সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সঠিক নেতৃত্ব দেখাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার পর মানুষের ব্যাপক প্রত্যাশার মধ্যে সরকার তেমন আশাব্যঞ্জক ফল দেখাতে পারছিল না। চারদিকে অরাজকতা ও অস্থিরতা চলছিল। সংবাদপত্রে নানা ধরনের গুজবের কথা আসছিল এবং গণমাধ্যম সরকারের কঠোর সমালোচনায় মুখর ছিল। তখন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামস (১৭৩৫-১৮২৬) নতুন আইনের মাধ্যমে সরকার ও তার ফেডারিলিস্ট রাজনৈতিক দলের সমালোচনাকারী সংবাদপত্রগুলো বন্ধ করতে উদ্যত হন। তখন তাঁরই ভাইস প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসন (১৭৪৩-১৮২৬) প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, বাক্স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা অসাংবিধানিক ও আমাদের স্বাধীনতার আদর্শ ও নীতিবহির্ভূত। পরে তিনি প্রেসিডেন্ট হয়ে ‘এলিয়েন অ্যান্ড সিডিশন অ্যাক্টস’ নামে আইন বাতিল করেন, যেখানে সংবাদপত্র বন্ধের সুযোগ ছিল। এই যে জেফারসন নীতির পক্ষে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন, অথবা সেই রাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন তুমুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হবেন না, এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অত্যধিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করার বিরুদ্ধে যুগান্তকারী ‘লিগ্যাসি’ সৃষ্টি করলেন, এমন নেতৃত্ব তো বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে না। অথচ সেটাই তো প্রত্যাশা ছিল। কারণ, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলাম সঠিক ও নিবেদিত নেতৃত্বের গুণেই। দুর্ভাগ্য যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে এই ৫৪ বছরে যাঁরা ক্ষমতার শীর্ষে আসীন হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে এমন অবিচলিত দৃঢ় আচরণ দেখিনি, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদায় উদ্বুদ্ধ গণতান্ত্রিক আদর্শকে ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থ বা দলীয় এজেন্ডার ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়েছে।

আমি গত অক্টোবরে, জানুয়ারিতে এবং সর্বশেষ জুলাইয়ে ঢাকায় আসি। গত অক্টোবরের সঙ্গে তুলনা করলে দেখব, মানুষের মধ্যে অনেক চিন্তা, বিতর্ক ও হতাশা জন্ম নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো নয়। মানুষ ঠিক বুঝতে পারছে না দেশ কোন দিকে যাচ্ছে, মানুষের ভাগ্যে কী আছে।
ঢাকায় এবার আপনার আসার একটা বড় উদ্দেশ্য ছিল তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন। কী কী অনুষ্ঠান করলেন, কেমন হলো?
শারমিন আহমদ: তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যদিও রাষ্ট্রীয়ভাবে এ উদ্যাপন হওয়া উচিত ছিল। কারণ, তাজউদ্দীন আহমদ দল ও মতের ঊর্ধ্বে একজন জাতীয় নেতা ছিলেন এবং এক কঠিন সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে সুদক্ষ নেতৃত্ব দিয়ে বিজয়কে নিশ্চিত করেছিলেন। যা-ই হোক, ২৬ জুলাই প্রায় ৫০০ অতিথির সমাগমে মুখর বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে প্রকাশনা উৎসব, তথ্যচিত্র প্রদর্শন, সম্মাননা প্রদান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘সেন্টার ফর তাজউদ্দীন আহমদ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকটিভিজম’ (সিতারা)। এ অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ড. কামাল হোসেন ও মঈদুল হাসান জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সিতারা প্রকাশিত তাজউদ্দীন আহমদ শতবর্ষে সংশপ্তক ও মুক্তির কণ্ঠস্বর নামের দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রথম বইয়ে নবীন ও প্রবীণ লেখকেরা লিখেছেন। দ্বিতীয় বই ছিল ১৯৭১–এর জানুয়ারি থেকে ১৯৭২–এর জানুয়ারি অবধি দেওয়া তাজউদ্দীন আহমদের বিভিন্ন বক্তৃতা, বাণী ও ঘোষণার সংকলন। অনুষ্ঠানে তাজউদ্দীন আহমদ জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন–বিষয়ক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, মুক্তিযোদ্ধা কামাল সিদ্দিকী ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম আমাদের সঙ্গে ছয়টি শ্রেণিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান, লেখক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গুণীজনদের সম্মাননা প্রদান করেন।
২৮ জুলাই জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগমের উদ্যোগে সারা দেশের বেসরকারি গ্রন্থাগারের পাঠক ও শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ‘রচনা/নিবন্ধ লিখন’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মঈদুল হাসান বক্তব্যে বলেন, ‘তাজউদ্দীন না হলে আমরা স্বাধীনতা পেতাম না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে প্রতিষ্ঠিত ‘তাজউদ্দীন আহমদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ ৩০ জুলাই নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘তাজউদ্দীন আহমদ স্মারক বক্তৃতা-২০২৫’ আয়োজন করে। বক্তা ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম।
২৩ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর তাদের মিলনায়তনে আলোচনা অনুষ্ঠান করে। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। একই দিনে সংগঠন কালের ধ্বনি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে তাজউদ্দীন আহমদ স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এসব অনুষ্ঠানে তরুণদের উপস্থিতি অনেক বেশি ছিল, যেটা আমার কাছে খুব উৎসাহজনক মনে হয়েছে। এ সময়ে তাজউদ্দীন আহমদের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এত তরুণ আসবে, এটা কিন্তু একটা বিশেষ ব্যাপার।
আমরা বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দিয়েছি। পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী আহত ব্যক্তিদেরও সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। কারণ, আমরা বলতে চেয়েছি, কেউ কারও প্রতিপক্ষ নয়, ‘মুক্তিযুদ্ধ হলো একটা বটবৃক্ষ এবং তারই শাখা-প্রশাখা গণ-অভ্যুত্থান।’ এই উক্তি টাঙ্গাইলের স্বনামধন্য কবি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল খান মাহবুব আমার কাছে করেছিলেন। অনুষ্ঠানে জুলাইয়ের আন্দোলনকারীরা বলেছেন, তাঁরা তো মুক্তিযুদ্ধ থেকেই প্রেরণা নিয়েছেন। আর বর্ষীয়ান মুক্তিযোদ্ধারা এই তরুণদের বীরত্বের প্রশংসা করেছেন। একতা ও সম্প্রীতির এমন বিরল ঘটনায় সেদিন অনেকেই আপ্লুত হয়েছেন।
তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যদিও রাষ্ট্রীয়ভাবে এ উদ্যাপন হওয়া উচিত ছিল। কারণ, তাজউদ্দীন আহমদ দল ও মতের ঊর্ধ্বে একজন জাতীয় নেতা ছিলেন এবং এক কঠিন সময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে সুদক্ষ নেতৃত্ব দিয়ে বিজয়কে নিশ্চিত করেছিলেন।
আপনারা যে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিলেন, সেখানে কি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন?
শারমিন আহমদ: হ্যাঁ, অনেক রাজনৈতিক দলকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছি। তবে গণফোরামের সভাপতি মফিজুল ইসলাম খান কামাল ও তাঁর কয়েকজন সহকর্মী ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলের কেউ আসেননি। আসলে আমরা কেউ সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারিনি। তাজউদ্দীন আহমদ রাষ্ট্রের একজন নেতা। তিনি যখন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তখন কি শুধু আওয়ামী লীগের হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন? না, উনি জাতির হয়ে এই জনযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নেতারা এলে ইতিহাসকে সম্মান দেখানো হতো।
আপনারা তো ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে দেশ নিয়ে ভাবনা কী? মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কি আগ্রহ আছে?
শারমিন আহমদ: তরুণদের মধ্যে অনেক আগ্রহ দেখি। ওরা জানতে চায়। তবে অন্যের কথায় বিশ্বাস না করে ওরা নিজেরাই গবেষণা করে। এটা আমার খুব ভালো লেগেছে।
অনেক রাজনৈতিক দলকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছি। তবে গণফোরামের সভাপতি মফিজুল ইসলাম খান কামাল ও তাঁর কয়েকজন সহকর্মী ছাড়া অন্য রাজনৈতিক দলের কেউ আসেননি। আসলে আমরা কেউ সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারিনি।
আপনারা যখন একতার বার্তা দেন, তরুণেরা কি সেটা গ্রহণ করে?
শারমিন আহমদ: হ্যাঁ। তরুণেরা বিভেদ দেখতে চায় না। তারা শান্তি ও ন্যায়বিচার চায়। এমনকি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত তরুণদের নানাভাবে সহায়তা করতে গিয়ে দেখেছি, তারা তাদের আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা পোষণ করে না বা প্রতিশোধের কথা ভাবে না। তাদের অনেকেই আমাকে বলেছে যে তারা আজীবন পঙ্গু হয়ে থাকলেও যদি দেখে দেশের মানুষ নিরাপদে আছে, ন্যায়বিচার পাচ্ছে, তাহলেই তারা অনেক শান্তি পাবে।
আপনি ও আপনার ভাই সোহেল তাজ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কেন, কী আলাপ হলো?
শারমিন আহমদ: আমি সিতারার (সংগঠন) একজন উপদেষ্টা। সেই সংগঠনের পক্ষ থেকে তাজউদ্দীন আহমদের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ জানাতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। সাড়া পাওয়ার পর সোহেল তাজ ও সিতারার সভাপতি আফতাবকে সঙ্গে নিয়ে যাই। অধ্যাপক ইউনূস খুবই হৃদ্যতার সঙ্গে আমাদের অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। এ ধরনের বৈঠক তো সাধারণত ২০ মিনিট বা আধা ঘণ্টা হয়। আমাদের মধ্যে আলাপ হলো এক ঘণ্টার মতো।
তরুণেরা বিভেদ দেখতে চায় না। তারা শান্তি ও ন্যায়বিচার চায়। এমনকি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত তরুণদের নানাভাবে সহায়তা করতে গিয়ে দেখেছি, তারা তাদের আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা পোষণ করে না বা প্রতিশোধের কথা ভাবে না। তাদের অনেকেই আমাকে বলেছে যে তারা আজীবন পঙ্গু হয়ে থাকলেও যদি দেখে দেশের মানুষ নিরাপদে আছে, ন্যায়বিচার পাচ্ছে, তাহলেই তারা অনেক শান্তি পাবে।

অধ্যাপক ইউনূসকে কী বললেন?
শারমিন আহমদ: আমি অধ্যাপক ইউনূসকে মূলত চারটি বিষয়ে বলেছি। প্রথমত, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। কারণ, এখন আইনশৃঙ্খলা ও ন্যায়বিচারের অবস্থা বেশ খারাপ এবং বহু নিরীহ মানুষ মামলা-হামলার শিকার। দ্বিতীয়ত, জুলাই আন্দোলনে আহতদের সুষ্ঠু চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও তাঁদের জীবিকার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছি। তৃতীয়ত, অধ্যাপক ইউনূসকে বলেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধকে সব রাজনীতির ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। কারণ, মুক্তিযুদ্ধই আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়ের মূল ভিত্তি। নিরপেক্ষ মানুষদের দিয়ে গবেষণা করে ইতিহাস সংরক্ষণ ও পাঠ্যসূচিসহ সব ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধ পর্বকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সোহেল তাজ গত বছর নভেম্বরে তাঁর তিন দফা দাবির মধ্যে অধ্যাপক ইউনূসের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ-সংক্রান্ত এ কথাগুলোই তুলে ধরেছিলেন। চতুর্থ বিষয়টি ছিল, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার। অধ্যাপক ইউনূস মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘তুমি ঠিকই বলেছ।’
অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আপনারা দেখা করার পর অনেকে বলছেন, আপনারা নাকি পুনর্গঠিত আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) দায়িত্ব নেবেন?
শারমিন আহমদ: আমার যদি রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা থাকত, তাহলে ২০ থেকে ২৫ বছর আগেই রাজনীতিতে যোগ দিতাম। সেই সুযোগও ছিল। আমার জীবনটা শিক্ষকতার, সেখানেই সন্তুষ্টি পাই।
আপনি বলছেন, আপনার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।
শারমিন আহমদ: আমার কোনো চিন্তা নেই। সোহেল তাজেরও নেই।
আমার যদি রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা থাকত, তাহলে ২০ থেকে ২৫ বছর আগেই রাজনীতিতে যোগ দিতাম। সেই সুযোগও ছিল। আমার জীবনটা শিক্ষকতার, সেখানেই সন্তুষ্টি পাই।
কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগের পরিণতি হবে মুসলিম লীগের মতো। আপনি কী মনে করেন?
শারমিন আহমদ: আসলে মুসলিম লীগ হারিয়ে গেছে। কারণ, তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সামন্ততান্ত্রিক নবাব, জমিদার ও তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর তল্পিবাহকে পরিণত হয়েছিল। সে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের উত্থান হয়েছিল। সে যুগে আওয়ামী লীগ ছিল উদার ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল। তাদের সম্পর্ক ছিল তৃণমূলের মাটি ও মানুষের সঙ্গে। এখনকার আওয়ামী লীগের পরিণতি মুসলিম লীগের মতো হবে কি না, সেটা নির্ভর করে তারা কি ‘আমরা কোনো অপরাধ করিনি, সবই আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’—এমন অবস্থানে অনড় হয়ে থাকবে; নাকি আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করবে। অন্যদিকে নতুন কোনো রাজনৈতিক দল যদি গঠিত হয়, যারা প্রজ্ঞাবান, উদার ও প্রগতিশীল হবে; ত্যাগ, সততা ও স্বচ্ছতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ রাখবে, তাহলে শুধু আওয়ামী লীগ কেন, বাকি সব রাজনৈতিক দলকেই তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে।
তেমন কোনো দল গড়ে ওঠার লক্ষণ কি দেখছেন?
শারমিন আহমদ: আপাতত দেখছি না। তবে আমি আশাবাদী যে ভবিষ্যতে অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
শারমিন আহমদ: প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।