Image description

আমাদের শরীরে প্রতিদিন নানা জৈব প্রক্রিয়া চলে, যার বেশকিছু আমাদের চোখের আড়ালে। ইউরিক অ্যাসিডও এমনই এক উপাদান। এটি মূলত প্রোটিনজাত খাবার হজমের সময় তৈরি হয় এবং সাধারণত কিডনির মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হয় তখন, যখন এর পরিমাণ বেড়ে যায়।

এই অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড ধীরে ধীরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে ক্ষতি করে, তাও এমনভাবে যে আমরা শুরুতে বুঝতেই পারি না। দেখা যায়, একসময় বড় কোনো রোগ ধরা পড়লে তবেই আমরা চট করে সচেতন হই। অথচ আগেই সতর্ক হলে অনেক ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব।

চলুন জেনে নিই, অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড কীভাবে নিঃশব্দে শরীরের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ক্ষতি করে চলেছে।

১. হৃদয় ও রক্তনালির ক্ষতি করে

যখন রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেশি হয়ে যায়, তখন রক্তনালিতে প্রদাহ শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে সেগুলো শক্ত হয়ে যায়। এতে রক্তচাপ বাড়ে, হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি হয়, এমনকি হৃদযন্ত্র হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দিতে পারে—যা হতে পারে প্রাণঘাতী।

২. কিডনিকে ধ্বংস করে

কিডনি আমাদের শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড ছেঁকে বের করে দেয়। কিন্তু মাত্রা বেশি হলে, এটা কিডনিতে জমে গিয়ে ক্ষতি করতে থাকে। ছোট ছোট স্ফটিক কিডনির কোষে আঘাত করে, যা ধীরে ধীরে কিডনি বিকলের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

৩. ডায়াবেটিসসহ নানা রোগের ঝুঁকি

ইউরিক অ্যাসিড ইনসুলিনকে ঠিকভাবে কাজ করতে বাধা দেয়, যাকে বলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। এর ফলে বাড়তে পারে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, পেটের চর্বি, খারাপ কোলেস্টেরল—অর্থাৎ পুরো মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি।

৪. হাড় ও জয়েন্ট দুর্বল করে ফেলে

গাউটের নাম শুনেছেন? সেটা হঠাৎ ব্যথা দিয়ে শুরু হলেও, ইউরিক অ্যাসিড আসলে অনেক আগে থেকেই ধীরে ধীরে হাড় ও জয়েন্টে জমতে থাকে। এতে জয়েন্টের ভেতরের কার্টিলেজ ক্ষয় হয়ে যায়, ব্যথা ছাড়াই স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

৫. কিডনিতে পাথর তৈরি করে

ইউরিক অ্যাসিড বেশি হলে কিডনিতে পাথর তৈরি হয়—ছোট হলে সেগুলো প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়, কিন্তু বড় হলে মারাত্মক সমস্যা হয়। প্রস্রাব আটকে যাওয়া, ইনফেকশন এমনকি কিডনির স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

৬. রক্তচাপ চুপিচুপি বাড়ায়

রক্তনালি যখন ইউরিক অ্যাসিডে সংকুচিত হয়ে পড়ে, তখন স্বাভাবিকভাবে রক্ত চলাচলে সমস্যা হয়। আপনি হয়তো টেরও পাবেন না, অথচ ভেতরে ভেতরে আপনার রক্তচাপ বেড়েই চলেছে।

৭. শরীরে লুকিয়ে থাকা প্রদাহ

সবার অজান্তেই ইউরিক অ্যাসিড শরীরের ভেতরে হালকা কিন্তু স্থায়ী প্রদাহ তৈরি করে। এটা ধীরে ধীরে বিভিন্ন অঙ্গকে দুর্বল করে দেয় এবং হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়— কোনো উপসর্গ ছাড়াই!

তাহলে করণীয় কী?

ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে দিকটা খেয়াল রাখতে হবে। সময়মতো রক্ত পরীক্ষা করান, পানির পরিমাণ বাড়ান, পিউরিনযুক্ত খাবার যেমন লাল মাংস বা অ্যালকোহল কম খান, আর নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।

স্বাস্থ্য এমন একটা জিনিস—যখন থাকে তখন গুরুত্ব কম বুঝি, কিন্তু হারালে বুঝি তার আসল দাম। তাই আগে থেকে সতর্ক থাকাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া