Image description
ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের আনাগোনা : দিল্লিতে হাসিনা

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বহু শীর্ষ নেতা দেশ ছাড়েন বা আত্মগোপনে যান। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের দাবি, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাদের কলকাতাকেন্দ্রিক আনাগোনা ও সমন্বয় বেড়েছে। দলের প্রধান শেখ হাসিনা দিল্লিতে অবস্থান করছেন- এমনটিও ওই সূত্রগুলোর দাবি। তবে

ক্ষমতাচ্যুতির পর দলের কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায় পর্যন্ত সব স্তরেই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সংগঠিত যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে পড়ে। বহু নেতা বিদেশে গেছেন, কেউ আবার দেশের ভেতরে থেকেই আড়ালে থাকছেন। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হওয়ার অপেক্ষায় এবং দলীয় যোগাযোগ টিকিয়ে রাখতে কলকাতা ধীরে ধীরে ‘নিরাপদ মিলনস্থল’ হিসেবে উঠে এসেছে আওয়ামী লীগ নেতাদের জন্য- এমনটাই জানায় সূত্রগুলো।

কারা, কোথায় : দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ও মাহবুবউল আলম হানিফ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, এস এম কামাল হোসেনসহ আরো কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা কলকাতায় অবস্থান করছেন- এমন অভিযোগ ও দাবিও রয়েছে। সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন নেতা, যেমন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনও কলকাতায় আছেন বলেও সূত্রের ভাষ্য।

উপরের তথ্যসমূহ সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবিনির্ভর; প্রতিবেদনের সময় পর্যন্ত স্বতন্ত্রভাবে নিশ্চিত করা যায়নি।

কী হচ্ছে কলকাতায় : সূত্র মতে, দলীয় প্রধানের দিকনির্দেশনা ধরে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা নেতাদের সাথে সমন্বয় হচ্ছে। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সের আশপাশে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক-আড্ডায় দলীয় করণীয়, সংগঠনের ভবিষ্যৎ ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। কখনো শীর্ষ নেতারা, কখনো মধ্যম সারির নেতারাও এসব জমায়েতে যোগ দেন। দলের ভেতরের যোগাযোগের বড় অংশই ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক ও ডিজিটাল মাধ্যমে হয়- এমনটাই শোনা যায়।

‘পার্টি অফিস’ গুঞ্জন : কলকাতায় আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক কোনো পার্টি অফিস খোলা হয়েছে- এমন গুঞ্জন থাকলেও সংশ্লিষ্টদের মতে বিষয়টি সত্য নয়। বিদেশের মাটিতে দলীয় অফিস খোলায় কূটনৈতিক ও আইনি জটিলতা থাকায় নেতারা ব্যক্তিগত জায়গা বা নিরপেক্ষ স্থানে দেখা-সাক্ষাতে সীমাবদ্ধ থাকছেন বলে সূত্রের ব্যাখ্যা।

আগস্টকে ঘিরে সমন্বয় : আগস্টকে ‘শোকের মাস’ ধরা হয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। সূত্র বলছে, গত জুলাইয়ে দিল্লিতে দলের প্রধানের সাথে কয়েকজন সিনিয়র নেতার বৈঠকে আগস্টের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা দেশে অবস্থানরত নেতাদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেন এবং বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালনের চেষ্টা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাঝে মাঝে দিকনির্দেশনামূলক বার্তাও আসে- এমন দাবিও রয়েছে।

বিশ্লেষণ : কেন কলকাতা

বিশ্লেষকদের মতে- কলকাতায় আওয়ামী লীগ নেতারা সমবেত হওয়ার পেছনে নানা কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো-

ভৌগোলিক সান্নিধ্য ও প্রবেশপথ : বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলসীমান্ত পথ হওয়ায় দ্রুত যাতায়াত তুলনায় সহজ।

ভাষা-সংস্কৃতি : ভাষা ও সামাজিক পরিবেশ কাছাকাছি হওয়ায় অবস্থান ও যোগাযোগ সুবিধাজনক।

ডায়াসপোরা নেটওয়ার্ক : চিকিৎসা, শিক্ষা, ব্যবসায়িক কারণে বাংলাদেশী যাতায়াত পুরনো; অনানুষ্ঠানিক সমাবেশ আড়ালে রাখাও সেখানে তুলনামূলক সহজ।

অসুবিধা : বিদেশে প্রকাশ্য রাজনৈতিক তৎপরতা আইনি ও কূটনৈতিক সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করতে পারে; তাই বেশির ভাগ কার্যক্রম ব্যক্তিগত পরিসরেই সীমিত থাকার সম্ভাবনা বেশি।

বিশেষজ্ঞের মত : রাজনীতি বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি নয়া দিগন্তকে বলেন, “কলকাতায় আওয়ামী লীগের অফিস আছে- এটা গুজবনির্ভর। কলকাতায় যারা আছেন, তাদের আনাগোনা মূলত ব্যক্তিগত সমাবেশের মতো; একে পার্টি অফিস বলা যায় না। অনেকটা ‘ক্লাব-ধাঁচের’ আড্ডা, যেখানে সুখ-দুঃখ ও রাজনীতি নিয়ে কথা হয়- এটাই বাস্তবতা।”

কলকাতাকেন্দ্রিক আনাগোনা বাড়লেও তা কতটা সংগঠিত ‘দলীয় তৎপরতা’ সে বিষয়ে এখনো স্পষ্টতা নেই। গুঞ্জন-দাবি-অভিযোগের ভেতরেই চলছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের সমন্বয় চেষ্টা- এমনটাই বলছে সংশ্লিষ্ট মহল।