Image description
ধানমন্ডি ক্লাব থেকেই লুট হয়েছে কয়েক কোটি টাকা

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের একান্ত ঘনিষ্টজন ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে সাবেক মহাপচিালক (ডিজি) জামাল উদ্দিন আহমেদ। তাদের অন্যতম দোসরদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালতের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল এবং ইঞ্জিনিয়ার হাসান মাহমুদ বাবু। জামাল-কাজল আর বাবুর সম্বন্বিত সি-িকেট মিলে নিয়োগ, বদলি ও তদবির বাণিজ্য করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অবৈধ উপায়ে অর্জিত এ টাকার বড় অংশটিই পৌঁছে দেয়া হতো আসাদুজ্জামান খান কামালের ইন্দিরা রোডের রাজাবাজারের বাসায়। অভিযোগ রয়েছে, বস্তায় বস্তায় টাকা যেত কামালের বাসায়। এর বেশিরভাগই যেত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়োগ-বদলি, বার লাইসেন্স এবং অবৈধ মাদক ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। এদের হয়ে দালালি করতেন মাদকের সাবেক ডিজি জামাল এবং পিপি মোশাররফ হোসেন কামাল।

সূত্র মতে, সামাজিক সংগঠন ঢাকার ধানম-ি ক্লাব থেকেই লুট পাট করা হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। আ’লীগের ছত্রছায়ায় থাকা তখনকার ক্লাবটির পরিচালনা কমিটির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা আওয়ামী শাসনামলের মতোই নির্বাচন ছাড়াই কমিটির নেতৃস্থানীয় পদগুলি আকড়ে রাখেন। তারা ক্লাবটিতে কোন নির্বাচন হতে দেননি। এ কারনে উড়ে এসে জুড়ে বসার মতো ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট মোশাররফ হোসেন কাজল ক্লাবটিতে শুধু বার লাইসেন্সের অনুমোদনের নামে প্রায় ৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অথচ একটি বার লাইসেন্স অনুমোদনের সরকারি ব্যয় ১০ লাখ ৯২ হাজার টাকার মতো।

ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর পালিয়ে যায় ক্লাবটির দখলদারিত্বে থাকা চক্রটিও। এর পর ক্লাবটি পরিচালনার জন্য গত বছরের ৩১ আগস্ট বিশেষ সাধারণ সভার মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন একটি কমিটি গঠন করা হয়। বিশেষ সাধারণ সভার সীদ্বান্ত মোতাবেক বিগত দিনে লুটপাটের টাকার হিসেব ও অনিয়ম তদন্তের পর প্রকাশ করা হয় একটি শ্বেতপত্র। যেখানে উঠে এসেছে আশ্চর্যজনক সব তথ্য। ওই শ্বেত পত্রের তথ্যানুসারে দেখা যায়, ধানম-ি ক্লাবটির জন্য বার লাইসেন্সের অনুমোদনে গা শিহরে ওঠার মতো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ব্যাংক হিসেবে রয়েছে অসঙ্গতি, রাজউকের নামে অগ্রীম অর্থ প্রদান, ন্যাশনাল সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটিডের সাথে রয়েছে অসংলগ্ন চুক্তি, রহস্যজনক কারনে হারানো রয়েছে সাইদুর রহমানের নামে অর্থ গ্রহনের ডকুমেন্টস। প্রায় ৭ কোটি টাকার ভাউচার কম্পিউটার থেকে মুছে ফেলা, সদস্যপদ স্থানান্তর ও ভর্তি ফি ক্লাবে জমা না করা, অডিট হিসেবের সাথে ব্যাংক হিসেবের গড়মিল, ক্লাবের দলিল সংরক্ষন না করা এবং লাইসেন্স আপডেট না করা। সবচেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে। ১৯ সালের ১ জুন থেকে ২৪ সালের ৩০ আগস্ট পর্যন্ত অডিটে ধরা পড়েছ ২৬ কোটি টাকার গড়মিল। এসব দুর্নীতির সাথে ধানম-ি ক্লাবের সাবেক দুই সভাপতি মোশাররফ হোসেন কাজল ও প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ বাবু ও তাদের কমিটির সদস্যরা সরাসরি জড়িত ছিলেন। ক্লাবটির বর্তমান কমিটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তদন্ত করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদন করেছেন।

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে মাত্র ১ লাখ টাকা দিয়ে ধানম-ি ক্লাবটির সদস্য হন মোশারফ হোসেন কাজল। এর পরের বছরই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে ক্লাবটির সভাপতি হয়ে নজির সৃষ্টি করেন। সভাপতি নির্বাচিত হয়েই ঢাকা দক্ষিনের মেয়র ফজলে নূর তাপসকে দিয়ে প্রতিবাদী এবং সিনিয়র সদস্যদের ক্লাব থেকে বের করে দেন। এ সময় ক্লাবের ফা-ে থাকা সাড়ে আট কোটি টাকার অধের্কেরও বেশি লুটপাট করেন। ওই সময়ে মাদকের ডিজি ছিলেন জামাল উদ্দিন। জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব থাকাকালে ২০১৭ সালের ২৯ জুন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিয়োগ পান জামাল উদ্দিন। মাদেকের এ সাবেক ডিজি ছিলেন চট্্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সব থেকে বেশি সময় মাদকের ডিজির পদে বহাল ছিলেন। বয়স পেরিয়ে গেলেও তাকে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগও দেয়া হয়। তার সময়ে সব থেকে বেশি বার এর লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। প্রতিটি লাইসেন্সের বিপরীতে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জামালের সব ধরনের ফাইলের সাক্ষর করেছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল। শুধু বার লাইসেন্স অনুমোদনের মাধ্যমেই শত শত কোটি টাকার ঘুষ বানিজ্য হয়েছে। আর বার লাইসেন্সের জন্য দালালি করতেন পিপি কাজল। জামাল উদ্দিনের সময়কালে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ১৫টি যানবাহন থেকে শতাধিক যানবাহন করা হয়। জনবল ১ হাজার ৭১২ থেকে ৩ হাজার ৫৯ জন করা হয়। প্রতিটি বিভাগে রাসায়নিক পরীক্ষগারের অনুমোদন পায়। মাদক নিরাময় কেন্দ্র দেড়শ থেকে সাড়ে তিন শ’তে বাড়ানো হয়। তার সময়ে একই দিনে ত্রিশটি বার লাইসেন্সেরও অনুমোদন হয়েছে বলে সূত্র জানায়। অধিদপ্তরে এ উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেদের উন্নয়নও করতে পেরেছিলেন জামাল-কাজলরা। কারন যত বেশি কাজ তত বেশি কমিশন।

মোশাররফ হোসেন কাজল ছিলেন ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ওয়ান ইলেভেনের পরবর্তী সময়ে সন্মানিভাতায় তিনি দুদকের পিপি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এর পরেই শুধু ডেসটিনির রফিকুল ও মোহাম্মদ আলীকে জামিন করানোর কথা বলে কয়েক ধাপে অন্তত ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। বেগম খালেদা জিয়ার গুরুতর অসুস্থ অবস্থার জন্য দায়ী পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল। সাবেক ছাত্রলীগের এই ক্যাডার ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে দেশনেত্রীকে বছর পর বছর কারাগারের স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার প্রকোষ্টে বিনা চিকিৎসায় আবদ্ধ রেখেছিলেন। কাজল ঢাকার বিশেষ জজ কোর্টে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অশোভন উক্তি ও মিথ্যাচারের মাধ্যমে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছিলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ অনুসন্ধান করে মামলার দাবি জানিয়ে আবেদন করেছে এক আইনজীবী। শত কোটি কালো টাকার মালিক কাজল অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এ ব্যক্তির জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদের অুনসন্ধান শেষে দুদক আইন-২০০৪ এর ২৭ ধারায় মামলা দায়ের, তদন্ত সম্পন্ন ও চার্জশীট দাখিল করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জ্ঞাত আয় বর্হিভূত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে এ আবেদন করা হয়। দুদক সূত্র জানিয়েছে, ৫ আগস্টের পর গা ঢাকা দিয়েছেন বহুল সমালোচিত পিপি কাজল।