Image description

সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে গুজব কি সত্যে পরিণত হতে যাচ্ছে? এমন প্রশ্ন এখন দ্বীপবাসীর। গত এক বছর আগে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা ধরনের টাল বাহানা। এটি বাংলাদেশের ভূখ- হলেও সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে জারি করা হয়েছে নানা ধরণের অঘোষিত বিধি-নিষেধ।

আনুষ্ঠানিক কোনো নিষেধাজ্ঞা না হলেও দ্বীপের বাসিন্দা ছাড়া সেখানে কেউ বেড়াতে যেতে পারছেন না। গত বছর পর্যটন মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে পরিবেশ প্রতিবেশের দোহাই দিয়ে হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া হয় পর্যটক যাতায়াত। সেই থেকে দ্বীপের মানুষ মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে। চলতি বর্ষা মৌসুমে একদিকে দ্বীপের চার পাশে দেখা দিয়ে ব্যাপক ভাঙন। অপর দিকে গোটা বর্ষা মৌসুমে দ্বীপে বিরাজ করেছে চরম দুর্ভিক্ষ। সেন্টমার্টিন ঘিরে দ্বীপের ১০ সহস্রাধিক অধিবাসীসহ সারা দেশের মানুষের ছিল আনন্দ উচ্ছ্বাস। সাগর মাঝের এই দ্বীপে আকৃষ্ট হতে থাকে দেশ বিদেশের লাখো ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। দ্বীপ ঘিরে ক্রমান্বয়ে গড়ে ওঠে অর্থনৈতিক কর্মকা-। দ্বীপের মানুষ সেই মাছ ধরে জীবন যাপন থেকে বের হয়ে আত্ম নিয়োগ করে পর্যটন ব্যবসায়। সেখানে গড়ে ওঠে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট। পর্যটন মৌসুমে সেখানে যাতায়াত করতে থাকে ডজনেরও বেশি আধুনিক পর্যটক জাহাজ। এতে করে পর্যটক সেবায় পারদর্শী হয়ে ওঠে দ্বীপের মানুষ। বদলে যায় তাদের ভাগ্যের চাকা। কিন্তু গত বছর হঠাৎ করে পরিবেশ মন্ত্রণালয় সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ভাগ্যাহত হয় সেন্টমার্টিনের মানুষ। এতে করে দ্বীপের মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। ফলে বহু মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য দ্বীপ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

দ্বীপের বাসিন্দারা জানান, তাদের আত্মীয় স্বজনরাও বেড়াতে যেতে পারছেন না। পর্যটন ব্যবসায়ী এবং দ্বীপের স্থানীয়রা জানান, সেন্টমার্টিন ভ্রমণে এমন কড়াকড়ি কখনোই ছিল না। এতে করে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে দ্বীপটি আমেরিকার ইয়ার বেইচ করার জন্য খালি করা হচ্ছে। এখন পর্যটক দূরের কথা স্থানীয় বাসিন্দাদেরকেও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে নিজ এলাকায় প্রবেশ করতে হচ্ছে। সরকার সম্প্রতি সেন্টমার্টিন দ্বীপের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। কয়েকজন অধিবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ আমেরিকাকে দিয়ে ফেলার যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে তার কিছু কিছু আলামত এখন প্রকাশ হয়ে পড়ছে।

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের জন্য একটি মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে বলে জানা গেছে।
দ্বীপটির প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের জন্য (দ্বীপের প্রকৃতির ক্ষতি কমিয়ে আবার সুস্থ ও জীবন্ত করে তোলার লক্ষ্যে) সেখানে পর্যটন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এদিকে গত ৮ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত এক বছরে পরিবেশ সুরক্ষা, বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় মন্ত্রণালয় বেশ কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা, দ্বীপের প্রবাল রক্ষা ইত্যাদির কথা বলে দ্বীপের বাসিন্দাদেরকে দুর্ভিক্ষের মধ্যে ফেলে দেয়া অত্যন্ত অমানবিক। পাশাপাশি দ্বীপের চারপাশ সংরক্ষণের জন্য কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় অনেক ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে দ্বীপে কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় এবার জলোচ্ছ্বাস পূর্ণমাত্রায় আঘাত করতে পেরেছে। ফলে পুরোপুরি অনিরাপদ দ্বীপটিকে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। জানা গেছে, দ্বীপের ভাঙন শুরু হয় মূলত ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে। ওই দুই ঘূর্ণিঝড় দ্বীপের প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ আশপাশের পাথরের স্তূপ নড়বড়ে করে দেয়। ফলে দ্বীপের চারপাশের সমুদ্রের স্রোত সৈকত ঘেঁষে প্রবাহিত হয়। এতে দ্বীপের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব পাশে ব্যাপক ভাঙন হয়। উত্তর পাড়া ও ডেইল পাড়া নামের দুটি পাড়া বিলীন হয়ে যায়। সেই ১৯৯১ সাল থেকে আজ অবধি দ্বীপের ভাঙন চলমান রয়েছে। কিন্তু কোনো বেড়িবাঁধ নেই। আবার নতুন করে অপরিকল্পিত রিসোর্ট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার কারণেও সৈকতের বালিয়াড়ি ও কেয়া ঝোপ উজাড় হয়েছে। এতে দ্বীপের ঢেউ প্রতিরোধক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।

স্থানীয় মুরব্বিদের মতে, এবারের মতো জলোচ্ছ্বাস তারা জীবনে দেখেনি। তারা দ্বীপের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত। অদূর ভবিষ্যতে দ্বীপে বসবাস করতে পারবেন কি-না, সেটা নিয়ে তাদের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অনেকের মতে চার পাশে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করতে না পারলে সেন্টমার্টিন হারিয়ে গিয়ে হয়ত একদিন ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, সেন্টমাটিনে যাতায়াতে লিখিত কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। অধিবাসীরা যাতায়াত করছেন। সেখানে যাতায়াত সীমিত করা হয়েছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ। তিনি আরো বলেন, সেখানে অধিবাসীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হচ্ছে।